৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১১:৩৩

পুঁজিবাজার

৪ দিনে মূলধন কমেছে ৮,০০০ কোটি টাকা

দেশের দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সপ্তাহের চতুর্থ দিনেও সূচকের পতন অব্যাহত রয়েছে। এ নিয়ে টানা ছয় দিনে গড়ালো দর পতনের ধারা। ফলে কমেছে লেনদেন ও বাজার মূলধন। গত ৪ দিনে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার মূলধন হারিয়েছে। অন্যদিকে দেড় মাসের মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক সর্বনিম্ন অবস্থানে চলে এসেছে। গত চার দিনে মূল্যসূচকও কমেছে ১০০ পয়েন্ট।

অব্যাহত দর পতনে প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করা পুঁজি হারাচ্ছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। দিনের পর দিন দর পতন হওয়ায় ধীরে ধীরে তলানিতে যাচ্ছে শেয়ারবাজার।

গতকাল ডিএসই’র বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকা। এর আগে সপ্তাহের শেষ দিন বৃহস্পতিবার ছিল ৩ লাখ ৮০ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা।

অর্থাৎ ৪ দিনে বাজার মূলধন কমেছে ৮ হাজার ৩৭৭ কোটি টাকা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ডিএসইতে ১ লাখ ১৯ হাজার ৪৩২ বারে ৯ কোটি ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৩৭০টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। লেনদেনে অংশ নিয়েছে ৩৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৩৭.৬১ শতাংশ বা ১৩২টির; কমেছে ৪৭.২৯ শতাংশ বা ১৬৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫.০৯ শতাংশ বা ৫৩টির। ডিএসই প্রধান বা ডিএসই এক্স সূচক ২০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৮৬ পয়েন্টে। ডিএসইএস বা শরিয়া সূচক ৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৫৮ পয়েন্টে। আর ডিএস৩০ সূচক ১০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৪৮ পয়েন্টে।

অপরদিকে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৭২ লাখ ৪ হাজার ৬৫ টাকার শেয়ার। সিএসই সার্বিক সূচক ৮৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২১৪ পয়েন্টে। সিএসইতে লেনদেনে অংশ নিয়েছে ২৫১টি কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ড। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯৮টির, কমেছে ১১৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৪টির।
বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে: এদিকে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও ভাটা পড়েছে পুঁজিবাজারে।

চলতি (২০১৮-১৯) অর্থবছরে (জুলাই-জুন) দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে ৩৬.৮১ শতাংশ। নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২.৮৬ শতাংশ। কিন্তু পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ৫০.৭১ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৪৫০ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৩৬.৮১ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে নিট এফডিআই বেড়েছে ৪২.৮৬ শতাংশ। এফডিআই বাড়লেও দেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। চলতি অর্থবছর পুঁজিবাজারে মাত্র ১৭ কোটি ২০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা আগের অর্থবছর ছিল ৩৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ১৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ কম। এ হার ৫০.৭১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমছে। বাজার স্থিতিশীল ও ডলারের দাম কমলে বিদেশিরা আবারও পুঁজিবাজারে আসবে- এমন প্রত্যাশা তাদের।

বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ: সদ্যসমাপ্ত আগস্ট মাসে বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে যে পরিমাণ টাকার শেয়ার কিনেছেন বিক্রি করে দিয়েছেন প্রায় তার দ্বিগুণ। এ নিয়ে টানা ছয় মাস বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করলেন। দেশের শেয়ারবাজোরের ইতিহাসে এর আগে কখনও বিদেশিরা টানা ছয় মাস এমন শেয়ার বিক্রির চাপ অব্যাহত রাখেনি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) হালনাগাদ তথ্য পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

তথ্য মতে, সদ্যসমাপ্ত আগস্ট মাসে বিদেশিরা যে টাকার শেয়ার কিনেছেন বিক্রি করেছেন তার থেকে ১০৩ কোটি টাকা বেশি। মাসটিতে বিদেশিরা ১৭৬ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রি করেছেন ২৭৯ কোটি টাকা। এর আগের মাস জুলাইতে বিদেশিরা শেয়ারবাজার থেকে ৩০৯ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রি করেন ৪৭৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাসটিতে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করেন ১৬৫ কোটি টাকা।

জুলাই মাসের মতো আগের ৪ মাসেও বিদেশিদের শেয়ার বিক্রির চাপ ছিল। এর মধ্যে জুনে বিদেশিরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার কেনেন বিক্রি করেন তার থেকে ১১ কোটি বেশি। মাসটিতে বিদেশিরা ২৯৫ কোটি টাকার শেয়ার ক্রয়ের বিপরীতে বিক্রি করেন ৩০৫ কোটি টাকা।

একইভাবে মে মাসে বিদেশিরা শেয়ার ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি করেন ৬৫ কোটি টাকা। তার আগের মাস এপ্রিলে ১৫৪ কোটি টাকা। আর মার্চে ক্রয় থেকে বিক্রি বেশি ছিল ১২৪ কোটি টাকা। অর্থাৎ মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত বিদেশিরা যে পরিমাণ টাকার শেয়ার ক্রয় করেছেন বিক্রি করেছেন তার থেকে ৬২২ কোটি টাকা বেশি।
ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, শেয়ারবাজারে বিদেশিদের লেনদেনের পরিমাণ বেশি না। কিন্তু বিদেশিরা যখন শেয়ার বিক্রি করেন একসঙ্গে করেন। আমাদের বাজারের যে সক্ষমতা তা বিদেশিদের ওই বিক্রির চাপ সামাল দেয়ার মতো না। ফলে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করলে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। যার ফলে সার্বিক বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=188942