২৯ আগস্ট ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৩:৪৩

এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম নেই

ঢাকার বাইরে এখন ডেঙ্গু বেশি, মৃত্যুও বেশি

শুরুতে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ হলেও এখন ঢাকার বাইরে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও বেশি ঢাকার বাইরে। শুরুর দিকে বলা হচ্ছিল ঢাকার বাইরের হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের একটি বড় অংশ রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। পরে অবশ্য বিভিন্ন জেলায় এডিস মশার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এখন উপজেলা এবং প্রত্যন্ত গ্রামেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। তাদের কেউ বিগত কয়েক মাসের মধ্যেও ঢাকা ভ্রমণ করেননি। গ্রাম পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বাড়ায় এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে দিন দিন। রাজধানীতে এডিস মশা নিধন কার্যক্রম চললেও সারা দেশে এ কার্যক্রম নেই বললেই চলে।
এ অবস্থায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

গতকালও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার খরব পাওয়া গেছে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে লোক দেখানো কিছু পদক্ষেপ থাকলেও বেশির ভাগ জেলায় ব্যাপক হারে তেমন কোনো পদক্ষেপ বা নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্মসূচি নেই বলে আমাদের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এদিকে গতকাল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ও এডিস মশা নিধনে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপকভাবে ওষুধ ছিটানো ও অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বিভিন্ন হাসপাতাল সূত্রের তথ্য অনুযায়ি এ পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দুইশ’র কাছাকাছি। এর মধ্যে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এর কাছে বুধবার পর্যন্ত ১৭৭ জনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। ৮৮ টি মৃত্যুর পর্যালোচনা করে ৫২ জনের মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। বাকি মৃত্যুগুলোও পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করা হবে। গতকালও ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। বেসরকারি হিসাবে আক্রান্ত কয়েকগুণ বেশি হবে। জেলা-উপজেলায় প্রতিদিনই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন রোগীরা। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ১৫৭ জন। এর মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন ৫৫১ জন। ঢাকার বাইরে জেলা ও উপজেলা সদরে ভর্তি হয়েছেন ৬০৬ জন। রাজধানীর বাইরে ৬৪ জেলা থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ২৭ হাজার ৮৬৬ জন। ঢাকার বাইর চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৩৪০ জন। ঢাকাতে ২ হাজার ৮৮২ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সারা দেশে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬১ হাজার ৮২২ জন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৬৭ হাজার ২২১ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দেশে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম এই তথ্য জানিয়েছে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চলতি আগস্ট মাসের ২৮ দিনে ৪৮ হাজার ৭৬০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই সংখ্যা গত জুলাই মাসে ছিল ১৬ হাজার ২৫৩ জন। তার আগের মাসে এক হাজার ৮৮৪ জন।

আমাদের শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শরীয়তপুরে এ পর্যন্ত ৪০৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এ পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন ডা. খলিলুর রহমান। জেলার পৌর এলাকায় দু-একদিন মশার ওষুধ ছিটানো হলেও মশা নিয়ন্ত্রণে গ্রামে কোনো কর্মসূচি নেই। তৃণমূল পর্যায়ে এডিস মশা নিয়ে প্রচারও নেই। ফলে গ্রামের মানুষের মধ্যে এ সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জেলায় ৫৮৯ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মারা গেছেন একজন। জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রাম পর্যায়ে ডেঙ্গু জ্বরের রোগী শনাক্ত হলেও মশা নিয়ন্ত্রণে কোনো কর্মসূচি নেই। যা হচ্ছে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ফটোসেশন মাত্র।

বরগুনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩৩১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনজন মারা গেছেন। এর মধ্যে একজন নারী, একজন পুরুষ ও একজন শিশু রয়েছে। পৌরসভাগুলোতে অল্প পরিসরে মশা নিয়ন্ত্রণের পদক্ষেপ থাকলেও গ্রামে নেই। এদিকে গতকালও ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অন্তত তিনজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহে হাফিজুর রহমান (৩৫) নামে একজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে বুধবার ভোর ৫টার দিকে মারা যান। অন্যদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহিদা বেগম (৫০) নামে এক নারী মারা যান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুন্সীগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪) মারা যান।

https://www.mzamin.com/article.php?mzamin=187919