২৮ আগস্ট ২০১৯, বুধবার, ১:২৩

প্রতিদিন প্রবেশ করছে ৫০০ ভারতীয় ট্রাক

বেনাপোল টার্মিনালের অভাবে রাস্তায় পার্কিং

গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর হলেও বেনাপোলে নেই পণ্যবহনকারী ট্রাকের জন্য কোনো টার্মিনাল। এই বন্দর দিয়েই প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ৪ থেকে ৫ শ’ ট্রাক। স্থানের অভাবে ভারতীয় এসব পণ্যবাহী ট্রাক রাস্তায় অবস্থান করছে। অথচ প্রতি বছর এই বন্দর থেকে সরকার প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আয় করছে। প্রায় তিন শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এখন টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব আজ মঙ্গলবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এদিকে এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্যও ১ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টাডি ট্যুর করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে; যা পিইসি সভা থেকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বন্দরের তথ্য মতে, বাংলাদেশ প্রায় ৪ হাজার ৯৫ কিলোমিটার ভারতের সাথে, ২৫৬ কিলোমিটার মিয়ানমারের সাথে এবং ৫৮০ কিলোমিটার সমদ্রসীমানা দ্বারা বেষ্টিত। ভারত সীমানায় স্থলপথে আমদানি-রফতানি অর্থাৎ বাণিজ্যিক কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য বেনাপোল স্থলবন্দর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর। এ বন্দর ব্যবহার করে প্রায় ৮০ শতাংশ আমদানি-রফতানি হয়ে থাকে। বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার মালামাল বাণিজ্য হয়। এতে সরকার বছরে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। প্রতিদিন এই বন্দরে ভারতীয় ট্রাক ছাড়াও ৫ থেকে ৬ শ’টি বাংলাদেশী ট্রাক বন্দরে আগমন করে থাকে। ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের পর টার্মিনালে অবস্থান করার কথা; কিন্তু বর্তমানে কোনো টার্মিনাল না থাকায় অনেক সময়ই জট লেগে যায়।
স্থান সঙ্কুলান ও অবকাঠামো স্বল্পতার কারণে বন্দরের অপারেশনাল কাজে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এতে আমদানি-রফতানিও ব্যাহত হয়। ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সার্বিক সমস্যার সমাধানে জমি অধিগ্রহণ করে অ্যাপ্রোচ রোডসহ একটি কার্গো ভেইকেল টার্মিনাল করা প্রয়োজন। এর জন্য দরকার ২৯ দশমিক ১০ একর জমি; যাতে কার্গো টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে প্রায় সাড়ে ১২ শ’ ট্রাক পার্কিং করা সম্ভব হবে। প্রতিবেশী দেশের সাথে বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং সরকারি রাজস্ব আদায়ে এক লাখ ৪ হাজার ৭ শ’ বর্গমিটার আকৃতির টার্মিনাল নির্মিত হবে। আগামী ২০২১ সালের জুন নাগাদ এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করা হয়েছে।

ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্যও স্টাডি ট্যুর করতে হবে; যাতে ব্যয় হবে ১ কোটি টাকা। পরামর্শক খাতে ব্যয় হবে প্রায় ২ কোটি টাকা। প্রতি মাসে এই খাতে ব্যয় হবে ৮ লাখ টাকার বেশি। প্রায় ১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি কেনা হবে। ১০৮ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯.১০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রতি একর জমির দর ৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আর ইয়ার্ড নির্মাণে খরচ হবে ১০২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। টয়লেট কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হবে দেড় কোটি টাকা। পুকুর খননে যাবে ৬১ লাখ টাকা।

জানা গেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি পণ্যের ওপর ছয় হাজার ২৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত অর্থবছর এ স্থলবন্দর দিয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। এক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল এক হাজার ৪০৩ কোটি টাকা।

আমদানিকারক মফিজুর রহমান জানান, এ বন্দরে পরীক্ষাগার না থাকায় পণ্যের নমুনা পরীক্ষণের জন্য এখনো ঢাকায় পাঠাতে হয়। রিপোর্ট হাতে পেতে ১৫-২০ দিন কখনো মাসের অধিক সময় অতিক্রান্ত হয়ে যায়। ফলে আমদানি পণ্য বন্দরে আটকে থেকে যেমন লোকসান গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের, তেমনি পণ্যের মান নষ্ট হয়। এ সমস্যা নিরসনের দাবি দীর্ঘ দিনের; কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। এজন্য এ পথ দিয়ে আমদানি কমছে।
পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো উইং বলছে, এই প্রকল্পের মেয়াদ তিন বছর করার প্রস্তাবনা কমিয়ে ২ বছর করার জন্য বলা হয়েছে। আর সিসিটিভি এমন হতে হবে যাতে ফেইস ডিটেক্টিং হয়। এটি বন্দর অটোমেশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কার্গো ভেইকেল টার্মিনালটি জিরো পয়েন্টের ১৫০ গজের মধ্যে হওয়ায় নিরাপত্তাজনিত কারণে বাধাপ্রাপ্ত হয়, এমন কোনো উঁচু স্থাপনা সেখানে নির্মাণ করা ঠিক হবে না।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/435386/