২৮ আগস্ট ২০১৯, বুধবার, ১:১৬

সুবর্ণচরে ধর্ষিতার স্বামীর ওপর এসিড নিক্ষেপ

সুবর্ণচরে স্ত্রীকে ধর্ষণের বিচার দাবি করায় স্বামী নাছির উদ্দিনের শরীরে এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে। রোববার রাত ২টার দিকে উপজেলার চর বাগ্‌গ্যা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসিড দগ্ধ নাছির উদ্দিন ওই গ্রামের নেজাম উদ্দিনের ছেলে। তিনি বর্তমানে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকরা জানান, তার বুক, হাত ও উরুসহ শরীরের ৯ শতাংশ ঝলসে গেছে। নাছিরের মা জানান, রোববার দুপুরে নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনে নির্যাতনের বিরুদ্ধে অন্যদের সঙ্গে নাছিরও মানববন্ধনে অংশ নেন। সেখান থেকে বিকালে বাড়ি গেলে ধর্ষণ মামলার আসামি ও তার লোকজন নাছিরসহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দেয়। রাতে নাছির প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে উঠলে তাকে এসিড মেরে ৬-৭ জন দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এ সময় নাছির ৩-৪ জনকে চিনতে পারে। পরে নাছিরকে উদ্ধার করে রাতেই নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. খলিল উল্যাহ্‌ মানবজমিনকে জানান, নাছিরের শরীরের প্রায় ৯ শতাংশ ঝলসে গেছে তবে তিনি শঙ্কামুক্ত। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মহিউদ্দিন ও ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. সাইফুল ইসলাম জানান, এটা এসিড বার্নের ঘটনা। তার শরীরের প্রায় ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাকে ঢাকা নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে চরজব্বার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ উদ্দিন জানান, ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে থানায় কোনো অভিযোগ দেয়া হয়নি। তারপরও খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং হাসপাতালে ভিকটিমের সঙ্গে কথা বলেছে। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান তিনি। উল্লেখ্য, গত ২৩শে মে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর বাগ্‌গা গ্রামে গোপনে গোসলের ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ভাইরাল করার হুমকি দিয়ে তার স্ত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন নাছির।

এ ঘটনায় জয়নাল নামে একজনকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন নাছির। মামলার পরে বাদীর পরিবারের বিরুদ্ধে উল্টো টাকা আত্মসাতের মিথ্যা মামলা ও সাক্ষীদের এলাকা থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ নাছিরের পরিবারের। গত ৩০শে ডিসেম্বর গণধর্ষণের শিকার পাঁচ নির্যাতিতা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন-সমাবেশ করেছে। রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কে এ মানববন্ধন-সমাবেশ করেন তারা। এ সময় বক্তব্য রাখেন, নির্যাতিতা ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। তারা বলেন, প্রত্যেকটি ঘটনা প্রায় একই সুতোয় গাঁথা। বর্তমান চিত্র সবার ক্ষেত্রে একই। ইতিমধ্যে ৭-৮ মাস পার হলেও বেশির ভাগ ঘটনায় দায়ের করা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেয়নি পুলিশ। ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে অনেক আসামি। ফলে আসামি ও তাদের লোকজন মামলা তুলে নেয়ার জন্য নির্যাতিতাদের পরিবার-পরিজনকে হুমকি দিয়ে আসছে। অন্যথায়, বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দেয়াসহ হত্যারও হুমকি দিচ্ছে। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নির্যাতিতা নারী ও তাদের পরিবার। পুলিশ রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। বক্তারা প্রতিটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও তদন্তপূর্বক দ্রুত বিচারকার্য শুরু করার দাবি জানান।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=187637