১০ মে ২০১৯, শুক্রবার, ১১:০০

রোজায় যানজটে হিমশিম

উড়াল সেতু হয়েছে, চালু আছে ইউ লুপও। দফায় দফায় নির্দেশনা ও বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। তার পরও রাজধানীর যানজট কোনোভাবেই বাগে আনতে পারছে না ঢাকা মহানগর পুলিশ। ঢাকামুখী জনস্রোতের সঙ্গে দিনে গড়ে ঢাকায় নিবন্ধিত হচ্ছে ৪৪৫টি গাড়ি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) হিসাবে, সর্বশেষ গত মার্চ পর্যন্ত রাজধানীতে গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে ১৪ লাখ ১০ হাজার ৫৬৭টি। এ বছরের প্রথম তিন মাসেই নিবন্ধিত হয়েছে ৪০ হাজার ৬৭টি গাড়ি। যানজট নিয়ন্ত্রণে ঢাকা মহানগর ট্রাফিক ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার জনবল আছে প্রায় আট হাজার। রমজান মাসে বাড়তি জনবল নিয়েও সামাল দেওয়া যাচ্ছে না যানজট।

গতকাল বৃহস্পতিবার রামপুরা থেকে শাহজাদপুরে যেতে মোটরসাইকেল আরোহী নুর আমীনের লেগেছে দেড় ঘণ্টা। তিনি বলেন, বাড্ডায় ইউ লুপ হয়েছে। কিন্তু গাড়ির এত চাপ, এসব করেও লাভ হচ্ছে না। রাস্তা ছেড়ে অলিগলি দিয়ে ঘুরে ও ফুটপাত মাড়িয়েও গন্তব্যে যাওয়ার পথ যেন শেষ হয় না।

ইফতারের আগে রাজধানীর শাহবাগ থেকে বিমানবন্দর, গাবতলী থেকে আজিমপুর, মালিবাগ থেকে প্রগতি সরণি, তেজগাঁও থেকে কাকরাইল প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতেও ছড়িয়েছিল গাড়িজট। অনেকে জটে দাঁড়িয়ে থাকা বাস থেকে নেমে পথেই ইফতার সারে।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসের ভরদুপুরেও রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় যানজটে অবরুদ্ধ ছিল যাত্রীরা। মেট্রো রেল ছাড়াও ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং ওয়াসার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সড়কে চলাচলের অংশ কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক সময়েই যানজট তীব্র হচ্ছে। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা জানান, এর ওপর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে গাড়ি চলাচল বেড়ে যাওয়ায় অবস্থা আরো বেগতিক হয়েছে।

বিশেষ কারণ ছাড়া বনানী ওভারপাসে সাধারণত যানজট হয় না। দুপুর আড়াইটায় সেই ওভারপাসে উত্তর থেকে দক্ষিণমুখী গাড়ির সারি চলছিল কচ্ছপগতিতে। সেখান থেকে মহাখালী বাস টার্মিনাল যেতে যাত্রীদের দেড় ঘণ্টা লেগেছে। মহাখালী মোড়ে জলসিঁড়ি পরিবহনের যাত্রী আজরফ আলী যানজট থেকে রেহাই পেতে মহাখালীতেই নেমে পড়েন। ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতেই তিনি বললেন, বিমানবন্দরের সামনে থেকে দুই ঘণ্টা লাগল এখানে আসতে। বনানী, কাকলীতে আড়াআড়ি ছোট ছোট সড়কের গাড়ি চলতে দেওয়ায় বড় বড় বাসও আটকে পড়ছে। তার আগে তেজগাঁও উড়াল সেতুর পুরোটাতেই গাড়ির সারি দেখা গেছে। বিজয় সরণি থেকে এই উড়াল সেতুকে ৩৩ মিনিট আটকে থেকে নাভিশ্বাস যাত্রীরা।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকা থেকে আগেভাগে কাজ শেষ করে যাত্রীদের একটি বড় অংশ গ্রামের বাড়িতে ছোটে। তাই গতকাল দুপুর থেকে অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে।

জানা গেছে, রোজার মাসে যানজট কমাতে গত ২৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকার ট্রাফিক পুলিশ ও মেট্রো রেল নির্মাণকাজ পরিচালনাকারী ডিএমটিসিএল কর্তৃপক্ষের বৈঠক হয়েছে। পরে গত ২৫ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সঙ্গে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, বিভিন্ন বিপণিবিতানের প্রতিনিধি ছাড়াও ডিএমটিসিএল ওয়াসা ও ট্রাফিক বিভাগের বিশেষ বৈঠক হয়। গত সোমবার রমজানে যানজট নিরসনে ১৪ নির্দেশনা দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। এসব নির্দেশনার বেশির ভাগই মানছে না চালক ও পথচারীরা।

যেমন ইফতারের আগে বাড়ি ফেরার মনোভাব নিয়ে উল্টো পথে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকা, ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে গাড়ি চালানো, যানজট যাতে না হয় তা মাথায় রেখে গাড়ি চালানো, হাইড্রোলিক হর্ন ও অননুমোদিত হর্ন ব্যবহার পরিহার, নিয়ম মেনে নির্ধারিত গতিতে গাড়ি চালানো, রাস্তার পাশে যেখানে-সেখানে গাড়ি রেখে রাস্তা সংকীর্ণ করে গাড়ি চলাচলের স্বাভাবিক গতি রোধ থেকে বিরত থাকা, মার্কেট ও শপিং মলের সামনে গাড়ি পার্কিং থেকে বিরত থাকা। তবে এসব নির্দেশনা মানতে দেখা যায়নি সংশ্লিষ্টদের।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/dhaka-360/2019/05/10/767758