১০ মে ২০১৯, শুক্রবার, ১০:৫৪

ই-জিপি দরপত্রে কারসাজির অভিযোগ

সরকারি দরপত্রে চালু রয়েছে ই-জিপি (ইলেকট্টনিক গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট)। এ কারণে বন্ধ হয়েছে টেন্ডারবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। তবে ই-জিপি’র মাধ্যমে দরপত্র পাইয়ে দিতে এখন চালু হয়েছে নানা কারসাজি। এ কাজে সহায়তা করছেন দরপত্র আহ্বানকারী বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সহায়তায় ই-জিপি দরপত্রে ডিজিটাল কারসাজির পুরো ফায়দা তুলে নিচ্ছেন সুবিধাভোগী ঠিকাদাররা। এনিয়ে সাধারণ ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে এনিয়ে অভিযোগ করছেন তারা। তবে কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ই-জিপি’র কারণে প্রাক্কলন (ইষ্টিমেট) বিক্রির ফাঁদ পেতে বসেছেন সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারিরা। এছাড়া ঢাকার বাইরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট নিয়ে নানা কারসাজি খেলা চলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ভবন তৈরি বা মেরামত কাজের দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারির আগে প্রাক্কলন (ইষ্টিমেট) তৈরি করেন উন্নয়ন কাজের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রাক্কলন অনুমোদনের পর টেন্ডার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়। এরপরই দরপত্র বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে টেন্ডার ডকুমেন্ট বিক্রির জন্য ২০ কর্ম দিবস দেয়া হয়ে থাকে। তবে ওই কম সময়ের মধ্যে টেন্ডার ডকুমেন্ট ঘেটে প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণ বের করা সময়সাপেক্ষ। পিপিআরের বিধান অনুযায়ি, সরকার নির্ধারিত প্রাক্কলিত দরের সর্বোচ্চ ১০ ভাগ কম বা বেশি দেখাতে পারবেন দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। এরচেয়ে কম বা বেশি দেখালে দরপত্র বাতিল হয়ে থাকে। আগে এ ধরনের ধরা বাধা কোনো বিধান ছিল না। পিপিআরের এমন বিধানের কারনে অসাধু ঠিকাদাররা ‘প্রাক্কলন’ জমা থাকা কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হন। এরপর নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ দিয়ে ‘প্রাক্কলন’ কিনে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে কিছু অসাধু ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ওই প্রতিষ্ঠানটিতে দরপত্র আহবানকারি ও অনুমোদনকারি ব্যক্তি একজন। তাই প্রাক্কলন, টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুত, দরপত্র কমিটি’র সভা আহবানসহ সব কিছু এক ব্যক্তি করে থাকেন। এজন্য প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পছন্দের ঠিকাদারদের কাছে ‘প্রাক্কলন’ বিক্রির জোরালো অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার বলেন, প্রাক্কলন যেসব ঠিকাদার কিনতে পারেন তারা লাভবান হন। কারন প্রাক্কলিত দর অনুযায়ি কম বা বেশি দিলে তাতে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। অন্য ঠিকাদাররা এজন্য পিছিয়ে পড়েন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ই-জিপিতে অভিজ্ঞতার ধোঁয়া তুলে অনেক নামী ঠিকাদারদের কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত করা হয়। এক ঠিকাদার জানান, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন অঞ্চলের নামী ঠিকাদাররা ঢাকায় এসে ব্যবসা করতে পারেন না। কারন হিসেবে তিনি জানান, ই-জিপির মাধ্যমে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে শতকরা ১০ ভাগের বিধান থাকায় কখনও কখনও দরপত্রদাতাদের মধ্যে উল্লিখিত মূল্য একই হয়। অর্থাৎ একাধিক ঠিকাদারের মধ্যে সমতা লক্ষ্য করা যায়। এই পদ্ধতিতে লটারির কোনো বিধান না থাকায় তাদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচন করা কঠিন হয়ে পড়ে। তখন অভিজ্ঞতা দেখে কাজটি দেয়া হয়। এই অভিজ্ঞতা নির্ধারণের বিষয়টি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফারফার মাধ্যমেই নির্ণিত হয়। কারন হিসেবে তিনি বলেন, অভিজ্ঞতা নির্ধারণের বিষয়টি ম্যানুয়ালি ঠিক করা হয়। এজন্য নতুন করে অভিজ্ঞতার কাগজ বানিয়ে দেয়ার সুযোগ থাকে।

নামী কয়েক জন ঠিকাদার জানান, ই-জিপির মাধ্যমে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্রদাতাদের মূল্য এক হয়ে গেলে কর্মকর্তারা তখন ঠিকাদারদের পক্ষ নেন। এসব ক্ষেত্রে কে কাজ পাবেন তা ঠিক করেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরসহ বেশ কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। এর আগে সরকারি অর্থ ব্যয় অধিকতর স্বচ্ছ ও জবাবদিহি করতে ই-টেন্ডারিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ২০১১ সালের ২ জুন এ প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথম পর্যায় সরকারি চারটি সংস্থা, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, সড়ক ও জনপথ অধিদফতর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে পরীক্ষামূলকভাবে ই-টেন্ডারিং চালু করা হয়। পরবর্তীতে সরকারি প্রায় সব সংস্থা ই-জিপিতে যুক্ত হয়েছে। শুরু থেকেই ই-জিপি প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন সহায়তা করছে বিশ্ববব্যাংক। নতুন করে সরকারি কেনাকাটায় ই-জিপি সিস্টেমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতেও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=171786