আমীরে জামায়াত

2023-05-07

ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

বালাকোটের শহীদদের ত্যাগ-কুরবানী কেয়ামত পর্যন্ত মুমিনদের জন্য অনুপ্রেরণার স্মারক হয়ে থাকবে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, ১৮৩১ সালের ৬ মে বালাকোটে জিহাদ করতে গিয়ে অনেকেই শহীদ হয়েছেন। মুশরিক, ব্রিটিশ ও ইহুদী এই ত্রিমুখী শক্তির মোকাবেলা করেছিলেন সেই মুজাহিদেরা। তারা জিহাদ ও ত্যাগ-কুরবানীর যে চেতনা সৃষ্টি করে গেছেন, উজ্জীবনা সৃষ্টি করে গেছেন, তা কেয়ামত পর্যন্ত মুমিনদের জন্য অনুপ্রেরণার স্মারক হয়ে থাকবে।

গতকাল ৬ মে ঐতিহাসিক বালাকোট দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীনের সঞ্চালনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এতে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, মুহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ মহানগরী ও থানার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ জান্নাতের বিনিময়ে মুমিনদের জান মাল ক্রয় করে নিয়েছেন। যারা আল্লাহর পথে লড়াই করতে পারে তারাই আখিরাতের সুখ শান্তির জন্য দুনিয়ার সুখ শান্তি বিক্রি করে দিতে পারে। আল্লাহ আমাদেরকে সেই পথে কবুল করুন। আমাদের মনে রাখতে হবে, শাহাদাত এবং বিজয় দুই ক্ষেত্রেই আল্লাহ আমাদেরকে পুরস্কার দিবেন। রাসুল সা. এক হাদিসে তিনবার শাহাদাত চেয়েছেন। নবী সা. আরো বলেন, যে ব্যক্তি মারা গেল কিন্তু বিজয়ী হল না এমনকি জিহাদ করার চিন্তা চেতনাও আসল না, সে মুনাফিকের ওপর মৃত্যুবরণ করল। সাহাবীরা শাহাদাতের জন্য উদগ্রীব থাকতেন। নবী সা. এবং তাঁর সাহাবীরা যদি আল্লাহর কাছে শাহাদাত চাইতে পারেন, মুমিন হিসেবে অবশ্যই আমাদেরকেও সেই আকাক্সক্ষা করতে হবে। সাধারণ মৃত্যু যতটা কষ্টকর, শাহাদাতের মৃত্যু অনেক বেশী সহজ।

বালাকোট থেকে শিক্ষা নিতে আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশে যারা ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করছেন তাদের জন্য আমাদের কষ্ট লাগে, কারণ মানুষের তৈরি মতবাদ প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে গিয়ে কারো মৃত্যু হয় তাহলে কাল হাশরের ময়দানে তিনি আল্লাহর সামনে কীভাবে দাঁড়াবেন।

দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট সামনে রেখে তিনি বলেন, কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন চালিয়ে যাব, জান ও মালের সর্বোচ্চ কুরবানী আমরা পেশ করব ইনশাআল্লাহ। সাধারণ মানুষদের সাথে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় ও মজবুত করতে হবে। বেশী বেশী সালামের প্রচলন, মানুষদেরকে আতিথিয়েতা ও রাতের অন্ধকারে চোখের পানি ফেলে সাহায্য প্রার্থনা করা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বেশী পছন্দ করেন। তাই আল্লাহকে খুশি করতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, দুনিয়াতে যারা শাহাদাতের নজরানা পেশ করেছেন তারা তাদের কৃত ওয়াদা পূরণ করেছেন, আর এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও যারা ইসলামী আন্দোলনে নিজের জীবনের লক্ষ্য স্থির করেছেন এবং সেই লক্ষে দৃঢ় রয়েছেন, মহান আল্লাহর কাছে তারা পুরস্কৃত হবেন ইনশাআল্লাহ। শহীদ আহমদ ব্রেলভী ও শাহ ইসমাইল শহীদের শাহাদাত পুরো দুনিয়ার মুসলমানদের জন্য প্রেরণার।

শাহাদাতের তামান্না মুমিনদের থাকে বলেই তারা সামনের দিকে এগোতে পারে। মুমিনের অন্তরে শাহাদাতের জযবা থাকে বলে তাকে দুনিয়ার কোনো কিছু পেছনের দিকে টেনে নিতে পারে না। যত কাজ তিনি করবেন সেখানে জয় পরাজয়ের কথা তিনি চিন্তা করবেন না। কারণ চ‚ড়ান্ত সফলতা হচ্ছে জান্নাত, সেই জান্নাতের দিকে তিনি ছুটে চলেন।

তিনি বলেন, প্রিয় জন্মভূমি আজ পৌত্তলিকতায় নিমজ্জিত। ব্রিটিশদের তাড়ানোর জন্য আলেমদের যে ভূমিকা ছিল, সেই ভূমিকা আবারো আলেমদেরকে পালন করতে হবে। ইসলামী চেতনাকে দূর করার জন্য দেশে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। আজ আমরা আবারো দীপ্ত শপথ নিব, দুশমনদের কোনো ষড়যন্ত্র আমরা বাস্তবায়ন হতে দিতে পারি না। ঐতিহাসিক বালাকোট থেকে শিক্ষা নিতে হবে। সেই শিক্ষা নিয়ে আমাদেরকে দ্বীনী দায়িত্ব পালনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।

ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ বলেন, মুসলিম উম্মাহকে সবসময় তাদের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে হবে। দ্বীনের বিজয় হবে সেটি কেবল সময়ের ব্যাপার মাত্র। আলেমরাই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল অথচ তা স্বীকার করা হয় না। তিনি বলেন, আধিপত্যবাদীরাই সব সময় ইসলামের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছিল। বাংলাদেশে ইসলামী নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি।

মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, এটা ছিল ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন, এটা নবপ্রজন্মের মধ্যে চর্চা করতে হবে। তিনি বলেন, শাহাদাতের তামান্না ছাড়া ঈমানকে দুর্বলতামুক্ত রাখা সম্ভব নয়। মুসলমানদের সাময়িক বিপর্যয় হলেও আজকের এই দিনে এটি একটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণা। আজ শাহাদতের প্রেরণায় উজ্জীবিত হওয়ার দিন। আমাদেরকেও তাদের মতো শাহাদতের প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ঐতিহাসিক সংগ্রামে ভূমিকা পালন করতে হবে।