আমীরে জামায়াত

2023-03-31

খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলন ২০২৩ অনুষ্ঠিত

আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীদেরকে মাঠে ময়দানে কাজ করতে হবে

-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনের জানমাল জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। তাই আমাদেরকে জেল-জুলুম ও জীবনের ভয়ে কুন্ঠিত হলে চলবে না বরং সকল প্রতিকূলতা উপেক্ষা করেই দ্বীনকে বিজয়ী করার প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কারণ, জীবন-মৃত্যুসহ সবকিছুই হয় আল্লাহর পক্ষ থেকেই। এর ব্যতিক্রম চিন্তা করা অবশ্যই শিরক। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে দ্বীন সম্পর্কে স্বচ্ছ ও সহীহ জ্ঞান অর্জন করে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যথাযথাভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। তিনি আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মীদেরকে মাঠে ময়দানে কাজ করার আহবান জানান।

আজ জুময়া’বার সকাল ৯টায় স্থানীয় একটি মিলনায়তনে খুলনা জেলা জামায়াতের ইসলামীর কর্মী সম্মেলন-২০২৩ এ ভার্চুয়ালী যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহবান জানান।

খুলনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মুহা. এমরান হুসাইনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সারোয়ার ও মাওলানা কবিরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারি সেক্রেটারি মুন্সি মইনুল ইসলাম, এডভোকেট মুস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, প্রিন্সিপাল গওসুল আজম হাদী, কর্মপরিষদ সদস্য শেখ সিরাজুল ইসলাম, এডভোকেট লিয়াকত আলী, মাওলানা আমিনুল ইসলাম, হাফেজ আমিনুল ইসলাম, খান গোলাম রসুল, অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা আল মুজাহিদ, অধ্যাপক মাওলানা অলিউল্লাহ, মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের উত্তর জেলা সভাপতি মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ইমরান, দক্ষিণ জেলা সভাপতি মো. ইমরান হুসাইন, উত্তর জেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ বেলাল হুসাইন, দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি আবু জর গিফারী প্রমুখ।

ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত আরও বলেন, সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নিয়েছে। সে ধারাবাকিতায় বর্ষীয়ান জননেতা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে গ্রেফতার করে কারাগারে অন্তরীণ রেখেছে। কিন্তু জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন আদর্শকে নির্মূল করা যায়নি; আর কখনো যাবেও না। তিনি সরকারকে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি পরিহার করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, এটিএম আজহারুল ইসলাম, মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার ও মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানসহ জাতীয় নেতৃন্দের মুক্তির জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান এবং মহান আল্লাহ তা’য়ালার রহমত কামনা করেন।

মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, মু’মিন জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো দ্বীন প্রতিষ্ঠার যথাযথ প্রচেষ্টা চালানো। এজন্য আল্লাহর প্রতি অবিচল ঈমান ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ অপরিহার্য অনুসঙ্গ। এ পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না; এখনো নয়। মূলত, যুগে যুগে যারাই মানুষের কাছে দ্বীনে হক্বের দাওয়াত দিয়েছে তাদের ওপরই নেমে এসেছে নানাবিধ বাধা-প্রতিবন্ধকতা। তাই জুলুম-নির্যাতনে হতাশ হলে চলবে না বরং সকল বাধা উপেক্ষা করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালাতে হবে। তিনি কর্মীদেরকে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ময়দানে কাজ করার আহবান জানান।

মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দেশ থেকে ইসলাম ও ইসলামী আদর্শ উৎখাত করার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। সে ষড়যন্ত্র এখন সর্বব্যাপী রূপ লাভ করেছে। সমাজের সকল স্তর ও পর্যায় থেকে ইসলামী মূল্যবোধের চর্চায় নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এমনকি জাতিকে নাস্তিক্যবাদী ও দ্বীনবিমূখ করার জন্য পাঠ্যসূচিতে বিবর্তনবাদ ও ইসলাম বিরোধী অধ্যায় সংযুক্ত করা হয়েছে। তাই এই দেশ, জাতি ও ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চেষ্টা চালাতে হবে। মূলত, দুনিয়ায় শান্তি ও আখেরাতে মুক্তির জন্য দ্বীন বিজয়ী করার কোন কোন বিকল্প নেই। তিনি দ্বীন বিজয়ের লক্ষে সকলকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ও সর্বোচ্চ কুরবানী পেশের আহবান জানান।

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই। অপশাসন-দুঃশাসন, লাগামহীন লুটপাট ও দুর্নীতি জাতিস্বত্তাকেই হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছে। জনগণ নিজেদের অধিকার ভোগ করতে পারছে না। আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মূলত, ইসলামী আদর্শের ভিত্তিতে সমাজ পরিবর্তন ছাড়া মানুষের মুক্তি মিলবে না। আর এ জন্য প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিক সংগ্রাম ও জনমত গঠন। তিনি সেই স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি ঘরে ঘরে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানোর কর্মীদের প্রতি আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা মুহা. এমরান হুসাইন বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একই সাথে দিয়েছেন দুনিয়াতে খিলাফতের দায়িত্ব। আর খলিফার দায়িত্ব হলো সমাজ-রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রেই আল্লাহর হুকুম যথাযথভাবে পালন করার পরিবেশ সৃষ্টি করা। আর তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন রাষ্ট্রক্ষমতা ছাড়া কোন ভাবেই সম্ভব নয়। সে লক্ষ্যে পৌঁছতে হলে আল্লাহর পথে অবিরাম সংগ্রাম চালাতে হবে। মূলত, সে সংগ্রাম চালাতে গিয়ে সাবেক আমীরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী মুহাম্মদ মুজাহীদসহ শীর্ষনেতৃবৃন্দ নির্ভয়ে শাহাদাতকে বরণ করে নিয়েছেন। ইসলামী আন্দোলনের ওপর জুলুম-নির্যাতন ইতিহাসে ধারাবাহিকতা। এ কাজে আঞ্জাম দিতে দিয়ে অনেক নবী-রাসূল (সা.) গণকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। অনেককে কারা নির্যাতনও ভোগ করত হয়েছে। তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের পিছপা হলে চলবে না। বরং সকল বাধা-প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করেই দ্বীনকে বিজয়ী আদর্শ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করতে কর্মীদের অগ্রণী ভুমিকা পালন হবে। আজকের এই সম্মেলন শান্তিপূর্ণভাবে সফল হওয়ায় আল্লাহ তা’য়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।