আমীরে জামায়াত

2025-12-03

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আমীরে জামায়াতের বাণী ও প্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন

-ডা. শফিকুর রহমান

আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস উপলক্ষে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান আজ ৩ ডিসেম্বর প্রদত্ত এক বাণীতে বলেন, “আজ ৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এ দিবস উপলক্ষে দেশের সকল প্রতিবন্ধী নাগরিক, তাদের পরিবার, পরিচর্যাকারী, শিক্ষক, পুনর্বাসনকর্মী ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা, সমবেদনা ও অবিচল সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কোনোভাবেই সমাজের ওপর বোঝা নন। তারা আল্লাহ প্রদত্ত ভিন্নতর যোগ্যতা, বিশুদ্ধ হৃদয় ও অসীম সম্ভাবনার অধিকারী। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি—যথাযথ সুযোগ, উপযোগী পরিবেশ ও রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা পেলে তারাও সমাজের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবেন। তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা মানবিক দায়িত্ব, নৈতিক কর্তব্য এবং ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অংশ।”

আমীরে জামায়াত জোর দিয়ে বলেন, “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা, চিকিৎসা, চলাচল, কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন, নিরাপত্তা ও মর্যাদা রক্ষাসহ তাদের সকল মৌলিক মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ইনক্লুসিভ এডুকেশন, অ্যাক্সেসিবল অবকাঠামো, সহায়ক প্রযুক্তি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পরিবারভিত্তিক সাপোর্ট সিস্টেম আরও জোরদার করতে হবে। পরিবারগুলোর মানসিক, সামাজিক ও আর্থিক চাপ কমাতে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে এবং মানবিক সমাজ গঠনে নাগরিক পর্যায়ে সংবেদনশীলতা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতামূলক মনোভাব আরও প্রসারিত হওয়া জরুরি।”

তিনি বলেন, “আমি মনে করি—সমন্বিত পরিকল্পনা, আন্তরিক উদ্যোগ ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় ভূমিকার মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী-বান্ধব জাতি হিসেবে বিশ্বে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।
আসুন, ভালোবাসা, সুবিচার ও মানবিকতার আলোকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য এক মর্যাদাপূর্ণ, নিরাপদ এবং সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্মাণে আমরা সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করি।”

রাজধানীতে আমীরে জামায়াতের একটি প্রতিবন্ধী স্কুল পরিদর্শন-

আজ ৩ ডিসেম্বর (বুধবার) সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান রাজধানীতে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের একটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান এবং তাদের শিক্ষাদান ও পরিচর্যার সামগ্রিক পরিবেশ প্রত্যক্ষ করেন। পরিদর্শনকালে তিনি অভিভাবক, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও শিক্ষক মণ্ডলীর অভিব্যক্তি, প্রয়োজন ও চ্যালেঞ্জসমূহ মনোযোগ সহকারে শোনেন।

এসময় আমীরে জামায়াত বলেন, “প্রতিবন্ধী শিশুদের নিষ্পাপ হাসি, শিক্ষার প্রতি আগ্রহ এবং অনন্ত সম্ভাবনা আমার হৃদয় গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক, শিক্ষক মণ্ডলী ও অভিভাবকদের ত্যাগ, মমত্ববোধ ও ধৈর্য সত্যিই প্রশংসনীয়। তাদের ধৈর্য, ত্যাগ ও নিষ্ঠাকে সমাজের জন্য অনুকরণীয় বলে আমি মনে করি। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমার বক্তব্যগুলোতে সাধারণত আমি বলি যে, আমি অভিজাত শ্রেণির মুখপাত্র নই; সমাজে যারা বিভিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত—আমি তাদেরও মুখপাত্র নই। কারণ তারা তাদের জন্য যথেষ্ট। আমার সমস্ত পরিশ্রম, চিন্তা, মেধা সমাজের ঐ অংশের জন্য যারা বিভিন্ন দিক থেকে কষ্টে আছে এবং বঞ্চিত আছে।”

তিনি বলেন, “আমি ‘প্রতিবন্ধী’ বলব না—যদিও এখানে লেখা আছে ‘আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস’। আমি বলব ‘স্পেশাল নিড বেবিজ’—যাদের প্রতি সমাজের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। একজন মা বলেছেন, ‘আমার সমাজ তো আমাকে দেখেই একটু অন্যভাবে; স্বয়ং আমার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনও আমাকে ভিন্নভাবে দেখে।’ আসলে এগুলো আমাদের অজ্ঞতা, মূর্খতা। আমরা যদি অন্যভাবে দেখতাম, তাহলে দেখতাম যে এই মা বিশাল একটি সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের সবার উচিত তাকে পুরোপুরি সহযোগিতা করা—যাতে তিনি আরও সুন্দরভাবে এই শিশুটিকে আদর, যত্ন ও ভালোবাসায় বড় করতে পারেন। এখানে সমাজের দায়িত্ব হলো এই শিশুদের যার যেদিকে সম্ভাবনা আছে, তাকে সেইদিকে এগিয়ে নেওয়া।”

আমীরে জামায়াত আরও বলেন, “আমরা স্বপ্ন দেখি একটি কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার। কল্যাণ মানে সকলের জন্য কল্যাণ। অভিজাত শ্রেণিও এখান থেকে উপকৃত হবে, আবার সমাজে যারা বঞ্চিত ও পিছিয়ে পড়া তারাও এখান থেকে কল্যাণ পাবে। যেখানে কল্যাণ রাষ্ট্র আছে—সেখানে এ ধরনের স্পেশাল নিড বেবিদের জন্য একজন মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হয়, যার পুরো বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি সরকার বহন করে। এই ব্যক্তি মা হতে পারেন, সন্তানের বাবা কিংবা ভাইও হতে পারেন।”

আমীরে জামায়াত সকল নাগরিককে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি সংবেদনশীল, দায়িত্বশীল ও সহযোগিতামূলক ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান এবং মানবিক সমাজ গঠনে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

পরিদর্শনকালে তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. ইঞ্জিনিয়ার জুবায়ের আহমেদ এবং খিলক্ষেত থানা আমীর হাসনাইন আহমেদ।