২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, শুক্রবার

খুলনায় রুকন সম্মেলনে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান

সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিতে হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “রাজনৈতিক দলসহ সকল পর্যায়ের স্টেক হোল্ডারদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে সম্মানের সাথে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদায় নিতে হবে। কেননা বছরের পর বছর দেরী করলে আগাছা জন্ম নিতে পারে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হতে পারে এবং তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হতে পারে।

আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে আমীরে জামায়াত বলেন, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। কেননা রাজনীতি করতে হবে দেশের মানুষের আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে, বাইরের কারও সাহায্য নিয়ে নয়। তিনি বলেন, শিক্ষা সংস্কার কমিশনে কমপক্ষে একজন আলিয়া ও একজন কওমী নেসাবের আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭জন চৌকস সেনা সদস্য হত্যাসহ দেশের সকল হত্যাকাÐ এবং এর মাষ্টার মাইন্ডদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, তা’ না হলে আবারো জালিমদের আগমন হতে পারে, তৃতীয় শক্তির উদ্ভব হতে পারে।”

শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর সোনাডাঙ্গাস্থ আল ফারুক সোসাইটিতে খুলনা মহানগর ও জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সেক্রেটারিা জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রুকন সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চল সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ।

রুকন সম্মেলনে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, “বিগত পনের বছরের আওয়ামী শাসনামলে রাষ্ট্রের কোনো নাগরিকই লুটপাট ও জুলুমের বাইরে ছিল না। হাজারো মানুষ, মা-বোন ও শিশুদের কান্নার রোল আল্লাহর আরশে পৌঁছে গিয়েছিল। এর ফলেই জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে এবং স্বৈরশাসন মুক্ত হয়েছে।

আওয়ামী লীগের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে আমীরে জামায়াত বলেন, বিডিআর হত্যার মধ্যদিয়ে ফ্যাসিবাদি শাসনের প্রথম ধাপ শুরু হয়। এরপর জামায়াতের ওপর স্টিম রোলার চালানো হয়। পর্যায়ক্রমে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে অথবা কারাগারে রেখে হত্যার মধ্যদিয়ে শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালানো হয়। যারা সারাজীবন ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেই ইসলাম অবমাননার কথিত অভিযোগ আনা হয়। ইতিহাসের নির্মম শিক্ষা ইতোমধ্যেই জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীরাই বর্তমানে গ্রেফতার হতে শুরু করেছে। বর্তমান সরকার ওইসব ষড়যন্ত্রকারীদের বিচারের আওতায় এনে একটি বিচারিক কার্যক্রমের সূচনা করবে বলেও তিনি আশা করেন।”

বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “বিগত পনের বছরে অনেক মজলুমের চোখের পানির ফসলই হচ্ছে জুলাই-আগষ্টের গণঅভ্যুত্থান। আওয়ামী লীগের ১৫ বছর আর মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের দু’বছর এই ১৭ বছরের জুলুম-নির্যাতনের পরও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এদেশের মানুষের প্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে শুধুমাত্র আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস আর আস্থার কারণে।

তিনি রুকনদের উদ্দেশে বলেন, শপথের কর্মীরা জান ও মাল আল্লাহর কাছে বিক্রির যে ওয়াদা করেছে, তার আলোকে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের জন্য জামায়াতের প্রত্যেক রুকনকে কাজ করতে হবে। মু’মিনের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর হুকুমে চলবে এ শপথই নিয়েছেন রুকনরা। সুতরাং আল্লাহর হুকুমের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই রুকনদের। ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মাধমে আমর যে স্বাধীনতা পেয়েছি এটিকে ধরে রাখতে প্রতিটি শপথের কর্মীকে।

শপথের কর্মীদের ত্যাগ-কুরবানির কারণেই অনেক শীর্ষ নেতাকে হত্যা ও অনেকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে রাখা হলেও জামায়াত আজ দেশের একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত। এজন্য জামায়াতের প্রতিটি রুকনকে আরও দৃঢ় ও সাংগঠনিক মান উন্নয়নের মাধ্যমে দায়িত্ব পালনের জন্য তিনি আহবান জানান। সাথে সাথে দ্বীনের কাজকে এক নম্বর বানানো ও ঈমানের পরীক্ষাকে পরীক্ষা হিসেবেই দেখতে হবে। এক কথায় ঈমানী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য সকলকে এগিয়ে আসতে হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

বিশেষ অতিথি জনাব মোবারক হোসাইন বলেন, “ফ্যাসিবাদি সরকারের শত জুলুম-নির্যাতনের পরও মহান আল্লাহর রহমতে জামায়াতে ইসলাম আজ জনগণের প্রানপ্রিয় সংগঠনে পরিণত হয়েছে।”

মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমে জামায়াতের প্রতিটি শপথের কর্মীকে জান ও মাল কোরবানি করার মধ্যদিয়ে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

সভাপতির বক্তৃতায় অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান বলেন, “শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে আল্লাহর রহমতে খুলনা মহানগর ও জেলা জামায়াত একটি সফল রুকন সম্মেলন করতে সক্ষম হয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে জামায়াতের প্রতিটি নেতাকর্মীকে ভবিষ্যতেও দায়িত্ব পালন করতে হবে।”

রুকন সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন। দারসুল কুরআন পেশ করেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ও খুলনা অঞ্চল পরিচালক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।

রুকন সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর খুলনা অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যক্ষ মশিউর রহমান খান ও মাস্টার শফিকুল আলম, সাতক্ষীরা জেলা আমীর মুহাদ্দিস রবিউল বাশার, বাগেরহাট জেলা আমীর মাওলানা রেজাউল করিম, মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, খুলনা জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা গোলাম সরোয়ার ও অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা জেলা নায়েবে আমীর অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, বাগেরহাট জেলা নায়েবে আমীর এডভোকেট শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, সাতক্ষীরা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আজিজুর রহমান, বাগেরহাট জেলা সেক্রেটারি শেখ মো. ইউনুস, মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট শাহ আলম ও প্রিন্সিপাল শেখ জাহাঙ্গীর আলম, খুলনা জেলা সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম, এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গউসুল আযম হাদী প্রমুখ।