২৭ জুন ২০২২, সোমবার

সুনামগঞ্জের ৪টি উপজেলায় দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও উপহার বিতরণে আমীরে জামায়াত

মানুষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাদের পাশে এসেছিঃ ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ইতিহাসের ভয়াল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুনামগঞ্জ জেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে খাদ্য ও উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। তিনি ২৭ জুন সুনামগঞ্জ জেলার জামালগঞ্জ উপজেলার ভীমখালি ইউনিয়নের জাল্লাবাজ গ্রাম ও ধর্মপাশা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কুড়েরপাড় ও মধ্যনগর উপজেলার বংশিকুন্ডা ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য ও উপহার সামগ্রী বিতরণকালে উপরোক্ত কথা বলেন।

আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তাই আমরা একমাত্র তারই প্রশংসা করলাম, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার গোলামীর জন্যে। আর দৃশ্যমান-অদৃশ্যমান তামাম সৃষ্টি একমাত্র মানুষের উপকারের জন্যে পয়দা করেছি।’ তাই আমরা সারা জীবন একমাত্র তাঁরই প্রশংসা করব, ইনশাআল্লাহ। বিপদ-আপদ আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। জলে-স্থলে যত বালা-মুসিবত ও পরীক্ষা মানুষের উপরে আসে, এগুলো সবই মানুষের হাতের কামাই। আমিসহ এখানে আমরা যারা আছি সবাই গুনাহগার। আল্লাহ পাক আমাদের উপর বালা-মুসিবত দেন এই জন্যে যে, তিনি দেখতে চান; কারা বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করে। আর যারা তাওবা-ইস্তেগফার করে ঐ পাপাচার থেকে ফিরে আসে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

তিনি আরো বলেন, এটা ধ্রুব সত্য যে, আমরা যখন বিপদে পড়ি, তখন একমাত্র আল্লাহকেই ডাকি। তার প্রমাণ হলো এই ভয়াবহ বন্যা। যখন পানি আমাদের পা থেকে বুক, বুক থেকে গলা পর্যন্ত হলো, তখন আমরা বাবা-মা, ভাই-বান, প্রভাবশালী নেতা-নেত্রী কাউকেই কিন্তু আমরা ডাকিনি। আমরা ডেকেছি এই তামাম বিশ্বজাহানের মালিক একমাত্র আল্লাহ তাআলাকে। এখন বিপদ আমাদের উপর থেকে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করেছে। এখন আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। সুখে-দুখে, বিপদে-আপদে সর্বাস্থায় মহান প্রভুর গোলামী করতে হবে।

তিনি বলেন, এবারের বন্যা ছিল স্মরণকালের ভয়াবহতম। এই সুনামগঞ্জ থেকে সারা দেশে মোট উৎপাদনের ২৬% খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এবার আপনারা বহু কষ্টার্জিত খাদ্য শস্য ঘরে তুলেছিলেন। কিন্তু এই বন্যা সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তুমি আসমানকে হুকুম কর, যেন সে থেমে যায়, আর জমিনকে হুকুম করো পানি গিলে নিতে এবং আমাদের পরিবেশকে তুমি স্বাভাবিক করে দাও।

তিনি আরো বলেন, এবারের ভয়াল বন্যায় মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে ব্যাপক। অনেকের লাশও খুঁজে পাওয়া যায়নি। হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু ও ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বহু মায়ের বুক থেকে দুধের শিশু হারিয়ে গেছে। এই বন্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন, আমি তাদের শাহাদাতের জন্য মহান রবের নিকট দোয়া করছি। তাদের পরিবার-পরিজনকে ধৈর্য ধারণের জন্য আল্লাহর তাওফীক কামনা করছি। মানুষের ধন-সম্পদের যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা দুনিয়ার কারো পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে সরকারের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। একটি দেশের সরকার ইচ্ছে করলে মানুষের বিপদ-আপদে অনেক অবদান রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের সরকার সেই দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। দেশবাসী মনে করে, যেহেতু তারা বিনা ভোটের সরকার, তাই জনগণের প্রতি তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব নেই। নইলে তারা এই মহা বিপদে সরকার হাত গুটে বসে থাকতে পারে না।

তিনি বলেন, এক পর্যায়ে সুনামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেল, বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেল, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে হয়ে গেল। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও আমরা সুনামগঞ্জবাসীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য কিছু করতে পারছিলাম না। আমরা ঢাকা থেকে সিলেটে এসে ছটফট করতে থাকলাম সুনামগঞ্জবাসীর এই ভয়াবহ অবস্থা দেখে। ৩ দিন পর সিলেটের কিছু ভাইকে বললাম সাঁতরিয়ে হলেও আল্লাহর উপর ভরসা করে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। তারপর আমরা অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে মাত্র এক/দেড় ঘণ্টার রাস্তা কয়েক ঘণ্টা পারি দিয়ে সুনামগঞ্জ আসতে সমর্থ হই। চেষ্টা করেছি আপনাদের পাশে দাঁড়াতে, আল্লাহ আমাদের সাহায্য করেছেন। আবার একই সাথে দেশের উত্তরাঞ্চলসহ আরো কয়েক জেলায় বন্যা শুরু হয়ে গেল। আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে সকল বন্যা কবলিত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি, আল-হামদুলিল্লাহ। আমরা যেখানেই গিয়েছি, বন্যার্ত অসহায় মানুষের ভাই হিসেবে তাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে গিয়েছি। আজকেও একইভাবে আপনাদের ভাই হিসেবে কিছু উপহার নিয়ে এসেছি। আমাদের উচিত ছিল আপনাদের ঘরে ঘরে গিয়ে এই উপহার সামগ্রী পৌঁছে দেয়া কিন্তু আমরা তা পারলাম। আপনার মেহেরবাণী করে আমাদের কাছে এসেছেন। এজন্য আমরা আপনাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আপনারা আমাদের এই সামান্য উপহারটুকু সাদরে গ্রহণ করবেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করবেন আগামীতেও যেন আপনাদের সকল বিপদে পাশে থাকতে পারি। প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আমাদের আসতে দেরি হওয়ায় আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। আসুন আমরা সবাই দেশের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।

এ সময় আমীরে জামায়াতের সাথে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটির সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়ক ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব জামাল উদ্দিন ও সেক্রেটারি অধ্যাপক খায়রুল হাসান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা আমীর মাওলানা তোফায়েল আহমেদ খান, জেলা নায়েবে আমীর এড. মুহাম্মদ সামস উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি যথাক্রমে জনাব লস্কর মোঃ তাসলিম, জনাব মাহফুজুর রহমান ও ডাঃ ফখরুদ্দিন মানিক, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব সালাহউদ্দিন আইউবী, সুনামগঞ্জ জেলা বাইতুলমাল সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল কবির, ধর্মপাশা উপজেলা আমীর মাওলানা আব্দুল কাদের ও সেক্রেটারি হাফিজুল ইসলাম সুহেলসহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও ঢাকা মহানগরী উত্তর এবং সুনামগঞ্জ জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।