২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, সোমবার

আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী'র ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ

বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী স্কলার আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভী'র ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ এক শোকবাণী প্রদান করেছেন।

শোকবাণীতে তিনি বলেন, “আজীবন মাজলুম বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের কিংবদন্তি, অভিভাবক ও বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী স্কলার আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভী ২৬ সেপ্টেম্বর মহান রবের ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি মূলত বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী আন্দোলন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আধুনিক উদ্ভূত নানা জটিল সমস্যার সাবলীল ও গভীর ইজতিহাদভিত্তিক সমাধানমূলক শতাধিক গবেষণা-গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁর গ্রন্থগুলো প্রকাশের পরপরই পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে জ্ঞানী, গবেষক, বোদ্ধামহল ও সাধারণ মানুষের কাছে সেগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা লাভ করে। আমি তাঁর ইন্তিকালে গভীরভাবে শোকাহত।

শোকবাণীতে তিনি আরো বলেন, মুসলিমদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকটি সংগঠনের সাথে সক্রিয়ভাবে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছিলেন শায়খ কারযাভি। তিনি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্স-এর সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। একইসাথে জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ, ইসলামী সম্মেলন সংস্থা, রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামী এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার-অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আয়ারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান কাউন্সিল ফর ফাতওয়া অ্যান্ড রিচার্স-এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইনস্টিটিউট অব ইমাম-এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন শায়খ ইউসুফ কারযাভি। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন।

শোকবাণীতে তিনি বলেন, প্রসিদ্ধ একজন শিক্ষক হিসেবে তাঁর হাতে অসংখ্য দাঈ ইলাল্লাহ, ইসলামিক স্কলার এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠার সুযোগ্য নেতা-কর্মী গড়ে উঠেছেন। তাঁরা আরব জাহানের গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বে ইসলামের আলো ছড়াচ্ছেন। তিনি ছিলেন মাজলুম মুসলমানদের হৃদয়ের বন্ধু এবং জুলুমের বিরুদ্ধে আপোষহীন কন্ঠ। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে যুগ যুগ ধরে বিশ্বের কোটি কোটি মুক্তি পাগল মুসলমানদের অন্তরে বেঁচে থাকবেন।

তিনি বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর এ গোলামের জীবনের সমস্ত নেক আমলগুলো কবুল করুন, মানবিক ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো মেহেরবানী করে ক্ষমা করুন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রহমতের ফিরিস্তাদেরকে তাঁর খালেছ গোলাম আল্লামা ড. ইউসুফ আল কারযাভী রাহিমাহুল্লাহর সঙ্গী বানিয়ে দিন। চূড়ান্ত পুরষ্কার হিসেবে আল্লাহ তাআলা তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসীব করুন। মরহুমের পরিবার-পরিজন, প্রিয়জন, সহকর্মী এবং শুভাকাক্সক্ষীদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সবরে জামিল আতা করুন, আমীন।”

অপর এক শোকবাণীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের আল্লামা ড. ইউসুফ আল-কারযাভী'র ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, “তিনি মুসলিম বিশ্বের একজন অভিভাবক ছিলেন। ইসলামী জ্ঞানচর্চা ও ইসলামের মহান আদর্শ প্রচারের পাশাপাশি ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। শত জুলুম-নির্যাতন, প্রলোভন উপেক্ষা করে তিনি তাঁর আদর্শ ও কর্তব্যে অটল ছিলেন। তাঁর ক্ষুরধার লেখনি মুসলিম উম্মাহকে আলোড়িত করেছে। তিনি ছিলেন সমকালীন সময়ের একজন কিংবদন্তি। আমি তাঁর ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তাঁর এ গোলামকে আবরার বান্দাদের মধ্যে কবুল করে তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। তাঁর শোকাহত স্বজনদের এবং সহকর্মীদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সবরে জামিল দান করুন। আমীন।”