১০ জানুয়ারি ২০১৭, মঙ্গলবার

নির্বাচন কমিশন অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে

বাংলাদেশে বিদ্যমান সংকট নিরসন কল্পে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন এবং নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালীকরণ ও নির্বাচনকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশ এবং জাতির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আমীরে জামায়াত জনাব মকবুল আহমাদ নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করেন। প্রস্তাবনায় তিনি বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি একক, স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। গণতন্ত্র হচ্ছে সুশাসন, উন্নয়ন, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার অন্যতম সোপান। গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজের মানুষের তথা রাষ্ট্রের নাগরিকগণ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। নির্বাচন প্রক্রিয়া হচ্ছে এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার একটি সর্বজন স্বীকৃত রীতি ও অপরিহার্য অনুষঙ্গ। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ভোট প্রদানের মাধ্যমে জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে। এর মাধ্যমে জনমতের প্রতিফলন ঘটে এবং সরকার পরিবর্তন হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮-১২৬ অনুচ্ছেদে নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠনসহ এর ক্ষমতা ও কার্যপরিধি নির্ধারণ সংক্রান্ত বিধি-বিধান তৈরীর দিক নির্দেশনা বিধৃত আছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে বিদ্যমান নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এ সংকট নিরসন কল্পে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী ব্যবস্থা থাকা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এতদপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনগণের ন্যায্য অধিকার ও ন্যায়সঙ্গত আকাক্সক্ষা পূরণসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা সমুন্নত রাখা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার স্বার্থে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জাতির উদ্দেশ্যে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা পেশ করছে:

প্রস্তাবনা

বাংলাদেশের মানুষ যেহেতু নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে নিরপেক্ষ এবং ন্যায়পরায়ণ দেখতে চায়; সেহেতু বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য নিম্নোক্তভাবে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের ১১৮-১২৬ নং অনুচ্ছেদে বিধৃত বিধানের আলোকে একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন;
উক্ত নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিরপেক্ষ, যোগ্য ও দায়িত্ব পালনে প্রশ্নাতীতভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করা আবশ্যক;

সিলেকশন কমিটি কর্তৃক গঠিত নির্বাচন কমিশনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে সার্বিক সহায়তা প্রদানের নিমিত্তে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকার গঠন করা দরকার।

জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করা এবং ঐকমত্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক সংলাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

সিলেকশন কমিটি গঠন, নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণ, নির্বাচনকালীন সরকার ও জাতীয় সংলাপ সম্পর্কিত প্রস্তাবনা নিম্নরুপ;

সিলেকশন কমিটি গঠন

মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করবেন।

সিলেকশন কমিটির ধরণ ও প্রকৃতি

মহামান্য রাষ্ট্রপতি সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ, নিরপেক্ষ, অভিজ্ঞ, প্রাজ্ঞ এবং নীতিবান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে ৭ (সাত) সদস্য বিশিষ্ট একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করবেন। সিলেকশন কমিটির কাঠামো নিম্নরুপ হবে:

সিলেকশন কমিটির প্রধান হবেন বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মক্ষম একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি (জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে) যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না।
সিলেকশন কমিটির সদস্য হবেন

আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত একজন বিচারপতি যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না।

সরকারের অবসরপ্রাপ্ত সৎ এবং দল নিরপেক্ষ একজন সচিব যিনি বিতর্কিত নন এবং অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না।

অবসরপ্রাপ্ত সৎ এবং দল নিরপেক্ষ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, যিনি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসাবে সুখ্যাত এবং যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন বা ছিলেন না;

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবী অথবা একজন অবসরপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনার অথবা দল নিরপেক্ষ সর্বজন শ্রদ্ধেয় একজন বিশিষ্ট নাগরিক।

সর্বজন শ্রদ্ধেয় দল নিরপেক্ষ সৎ, দক্ষ ও যোগ্য জ্যেষ্ঠ দুইজন নারী।

নির্বাচন কমিশন গঠন

প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চারজন নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন নারী নির্বাচন কমিশনার নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের যোগ্যতা
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা

সর্বজন শ্রদ্ধেয় সৎ, মেধাবী, দক্ষ, সাহসী, প্রাজ্ঞ এবং নীতিবান ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এবং সকল বিচারে দল নিরপেক্ষ এবং বিতর্কিত নন এমন একজন ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন।

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসাবে অধিষ্ঠিত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, অথবা বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে নিয়োজিত নন বা ছিলেন না, অথবা কর্মক্ষম একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার অথবা একজন বিশিষ্ট নাগরিক প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা

সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, দক্ষ, প্রাজ্ঞ, সাহসী, নীতিবান ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ও সকল বিচারে দল নিরপেক্ষ এবং বিতর্কিত নন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে হতে চারজন এবং উপরে বর্ণীত যোগ্যতার অধিকারী দুইজন নারী নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হতে পারবেন।

কমপক্ষে জেলা জজের পদমর্যাদা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, কমপক্ষে যুগ্ন-সচিব মর্যাদা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, ন্যূনপক্ষে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, সুপ্রিমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষাবিদ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য হতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন।

তবে যিনি প্রজাতন্ত্রের বা সংবিধিবদ্ধ সরকারী কর্তৃপক্ষের বা প্রতিরক্ষা বিভাগের কোন চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ বা পদত্যাগের বা অপসারণের পর কিংবা চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ সমাপ্তি বা চুক্তি বাতিলের পর, তিন বছর সময় অতিবাহিত করেননি এমন ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনার হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না।

নির্বাচন কমিশন গঠন ও অধিকতর শক্তিশালীকরণ

১.নির্বাচন কমিশনকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে বিদ্যমান আরপিওতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে;

ক) নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা ও তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার প্রদান করা;
খ) ভোট গ্রহণের আগে বিভিন্ন বুথে খালি বাক্স সরবরাহের পর অবশিষ্ট শূন্য ব্যালট বাক্সসমূহ, যদি থাকে, এমন নিরাপদ স্থানে রাখতে হবে যাতে তা প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্ট অথবা পোলিং এজেন্টদের কাছে দৃশ্যমান থাকা নিশ্চিত হয়;
গ) ভোট চলাকালে ব্যালট বাক্স পরিপূর্ণ হয়ে গেলে ব্যালট ভর্তি বাক্স বা বাক্সগুলো সংশ্লিষ্ট বুথেই রাখা যাতে তা সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং নির্বাচনী এজেন্ট এবং অথবা পোলিং এজেন্টদের নিকট দৃশ্যমান থাকে;
ঘ) ভোট শেষে ব্যালট গণনার জন্য কেবলমাত্র ভোটগ্রহণে ব্যবহৃত ব্যালট বাক্সসমূহ খোলা; এবং
ঙ) প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক স্বাক্ষরিত ফলাফল শীট ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টকে হস্তান্তর না করে কেউ যেন ভোট কেন্দ্র ত্যাগ না করে তা নিশ্চিত করা।

২. বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আর্থিক স্বাধীনতা থাকতে হবে।

৩. এ প্রস্তাব অনুযায়ী নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব সচিবালয়ে কর্মরত এবং মাঠ পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রিজাইডিং অফিসারসহ সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রতি আনুগত্য পোষণকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। ইতোপূর্বে যারা নির্বাচনের বিধিবিধানের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে তাদের তালিকা প্রণয়ন করে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে তাদেরকে বিরত রাখতে হবে।

৫. নির্বাচনের সময়ে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট, অর্থ ও তথ্য মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে নির্বাচন কমিশনের চাহিদানুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য রাখতে হবে। নির্বাচনকালীন নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার তারিখ থেকে নির্বাচিত নতুন সরকার দায়িত্ব না নেয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মাঠ পর্যায়ের বদলি এবং পদায়ন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত রাখতে হবে।

৬. জাতীয় নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত জেলা-প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারদের প্রত্যাহার পূর্বক তাদের স্থলে নূতন কর্মকর্তা পদায়ন করতে হবে। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে বিগত পাঁচ বছর বিভিন্ন পদমর্যাদায় ঐ জেলায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কর্মকর্তাদের একই জেলায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার পদে পদায়ন করা যাবে না। একইভাবে উপজেলা ও থানা পর্যায়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার পূর্বক নতুন কর্মকর্তা নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন কর্মকর্তা পদায়নে ইতোপূর্বে কোন সময় যে কোন পদমর্যাদায় ঐ উপজেলা বা থানায় চাকুরীরত ছিলেন এমন কোন কর্মকর্তাদের একই উপজেলায় বা থানায় পদায়ন করা যাবে না।

৭. জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক উথাপিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত অভিযোগ মামলা শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস করবে।

৮. নির্বাচনকালীন সময় নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা বাহিনী মোতায়েনের ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকালীন প্রতিরক্ষা বাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা প্রদান পূর্বক নির্বাচনী এলাকায় টহলসহ ভোটকেন্দ্রে ও বিশেষ বিশেষ স্থানে মোতায়েন করতে হবে। এই ব্যবস্থা ভোট গ্রহণের দশ দিন আগে থেকে নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশনা পর্যন্ত বহাল থাকবে।

৯. ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ ও নতুন ভোটার নিবন্ধীকরণ করতে হবে। প্রবাসীদের ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোট গণনার সময় পোলিং এজেন্টকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়া এবং ভোট গণনা শুরুর মধ্যবর্তী সময়ে কোন বিরতি দেয়া যাবে না।

১০. নির্বাচনকালীন বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তাদের বিচারিক বা ম্যাজিস্ট্রিয়াল ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। ১৯৭২ এর নির্বাচনী বিধান অনুযায়ী, এ ক্ষমতা কমিশন কর্মকর্তাদের প্রাপ্য।

১১. বর্তমানে কর্মরত নির্বাচনী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মী এবং সম্ভাব্য পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী আইন ও বিধি বিধান সম্পর্কে প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

১২. তাৎক্ষণিক নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান ভঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবিধানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং গৃহীত কার্যক্রম জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

১৩. ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের নিকট ছবিসহ যে ভোটার তালিকা থাকে ছবিসহ অভিন্ন ভোটার তালিকা প্রতিদ্বন্দী প্রার্থী অথবা নির্বাচনী এজেন্টকে প্রার্থীতা বাছায়ের দিনে সরবরাহ করতে হবে। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ভোটারগণ যাতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করতে হবে।

১৪. নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার কমপক্ষে দুই বছর আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাকে নিবন্ধন করতে হবে। নির্বাচন পর্যবেক্ষনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার ন্যূনপক্ষে এক মাস আগে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা বা ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত করতে হবে।

১৫. নির্বাচন অনুষ্ঠানের কমপক্ষে সাত দিন আগে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থার নাম ও পরিচয় ও তাঁদের মনোনীত পর্যবেক্ষকদের নাম এবং তালিকা, একই সাথে আন্তর্জাতিক সংস্থা, বিদেশী পর্যবেক্ষক সংস্থা ও বিদেশী রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োজিত পর্যবেক্ষকদের নাম এবং তালিকা প্রকাশ করতে হবে।

নির্বাচনকালীন সরকার ও জাতীয় সংলাপ
জাতীয় সংলাপ:

স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন প্রত্যেক রাজনৈতিক দল এবং প্রতিষ্ঠিত সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে অনুষ্ঠিত পৃথক পৃথক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য প্রতি পদের বিপরীতে দুই জনের নাম এবং পরিচয়সহ সুস্পষ্ট প্রস্তাব লিখিতভাবে পেশ করবে।

মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি নিরূপণের জন্য স্বাধীনতার পর প্রথম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে এমন সব রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রতিনিধিদের সাথে পৃথক পৃথক বৈঠক করবেন। কমিশন গঠনের বিষয়ে ঐকমত্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি আলোচনা অব্যাহত রাখবেন।

নির্বাচনকালীন সরকার

বাংলাদেশের বর্তমান বাস্তবতায় সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই যথেষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশনকে সর্বাত্মক প্রশাসনিক ও লজিস্টিক সহযোগিতা প্রদান এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমর্থন ও সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।

তাই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন যাতে একটি সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে পারে সেই উদ্দেশ্যেই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন। অতএব নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠনের পরপরই জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বা নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা তৈরী করতে হবে।
আল্লাহ হাফেজ, বাংলাদেশ-জিন্দাবাদ। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী-জিন্দাবাদ।

মকবুল আহমাদ
আমীর
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।