২ আগস্ট ২০২৪, শুক্রবার

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ- মাওলানা এটিএম মা’ছুম

‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম ২ আগস্ট এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সংবিধান। সংবিধান প্রত্যেক নাগরিককে সভা-সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। এই অধিকার হরণের এখতিয়ার কারো নেই। সরকার ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ ও ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’ কে যেসব অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, তা অসত্য এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সরকারের এই পদক্ষেপ অসাংবিধানিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮(১) ধারা বলে সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং যে সব কথাবার্তা বলা হয়েছে তার সাথে সত্যের লেশমাত্র নেই। ‘যেহেতু সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে যে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও এর অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সাম্প্রতিককালে সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সরাসরি এবং উস্কানির মাধ্যমে জড়িত ছিল’ বলে সরকার যে সব কথাবার্তা বলার চেষ্টা করেছে, তা ডাহা মিথ্যা।

জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের শতশত বিবৃতি, প্রেস বিজ্ঞপ্তি, বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে যা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, জামায়াত ও ছাত্রশিবির কোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য রাখেনি। সরকারের বর্ণিত ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, হত্যাকাণ্ড, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আনীত অভিযোগ জঘন্য মিথ্যাচার। প্রকৃতপক্ষে সরকার নিজেই উস্কানিমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য রেখে ছাত্রলীগকে আন্দোলনরত ছাত্রসমাজের ওপর হামলার জন্য প্ররোচিত করেছে। সরকারের এসব আক্রমণাত্মক ও উস্কানিমূলক বক্তব্যের শতশত প্রমাণ রয়েছে। মিডিয়ায় ঐ সব বক্তব্যের অসংখ্য রেকর্ড রয়েছে।

বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, দেশবাসী জানেন যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারী ছাত্রসমাজকে ‘রাজাকারের নাতি-পুতি’ আখ্যা দিয়ে কটাক্ষপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের ধানমন্ডির অফিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, ‘আত্মস্বীকৃত রাজাকারদের জবাব দিতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ছাত্র-ছাত্রী ও তাদের পিতা-মাতাকে কটাক্ষ করে তাদের সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে উত্তপ্ত করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রীসভার কয়েকজন সদস্য আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের লক্ষ্য করে উস্কানিমূলক ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়ার কারণেই ছাত্রলীগ ও বহিরাগত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র, হকিস্টিক, ছোরা, রামদা, লোহার রডসহ নানা অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অন্তত ৫ জন যুবককে পিস্তল দিয়ে গুলি ছুড়তে দেখা গিয়েছে (প্রথম আলো: ১৬/৭/২০২৪)। চট্টগ্রামের স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোঃ দেলোয়ারের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল এবং নূরুল আজিম রনির নেতৃত্বে হামলা চালানো হয়েছিল (মানবজমিন: ১৭/৭/২০২৪)। ঢাকা কলেজের ছাত্রলীগের সাবেক নেতা হাসানকে পিস্তল দিয়ে হামলা চালাতে দেখা গিয়েছে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ (যুগান্তর: ১৭/৭/২০২৪)।

তিনি বলেন, বহু সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলে ছাত্রলীগ ও বহিরাগত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র হাতে হামলা চালানোর ছবি প্রচারিত হয়েছে। সন্ত্রাসীরা অনেককে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়ে পদদলিত করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।

আন্দোলনকারী ছাত্ররা আক্রান্ত হবার পর তারা অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতা কামনা করে। আক্রান্ত ছাত্রদের ডাকে সাড়া দেয় সর্বস্তরের জনতা। এই গণবিস্ফোরণ দমনের জন্য সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়। দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে দেশে গণহত্যা চালায়। সরকারের এ গণহত্যার বিরুদ্ধে শিক্ষকসমাজ, অভিভাবক, কবি-সাহিত্যিক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করে যাচ্ছে।

গণহত্যার দায় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এবং জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। জনগণ এ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করছে।

কোটি কোটি মানুষ জামায়াতের সাথে রয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থের জন্য সরকারের এ অবৈধ সিদ্ধান্ত জামায়াতকে জনগণের আরও কাছে পৌঁছে দিয়েছে।

আমরা সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করছি।”