সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ১১ ফেব্রুয়ারি এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, শিক্ষা কারিকুলাম থেকে ইসলাম বিরোধী অধ্যায় প্রত্যাহার, বিদ্যুতের বর্ধিত মূল্য কমানো এবং কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ১১ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল পালিত হয়। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় অতি উৎসাহী সদস্য দেশের কোথাও কোথাও শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল ভণ্ডুল করার চেষ্টা করে এবং নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। এমনকি ১১ ফেব্রুয়ারির পূর্বের রাত থেকেই নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে দিনাজপুর উত্তর সাংগঠনিক জেলার আমীর অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান, ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জনাব আলমগীর হোসেন, দিনাজপুর দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার কর্মপরিষদ সদস্য জনাব মনজুরুল কাদের বাবুসহ ৭ জন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থেকে মিছিল শুরুর পূর্বেই ৭ জন, রাজশাহী মহানগরী থেকে ৯ জন, নোয়াখালী থেকে ৮ জনসহ সারাদেশ থেকে প্রায় অর্ধশত নেতাকর্মীকে পুলিশ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে। আমি এসব গ্রেফতারের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশের পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম বিরোধী শিক্ষা যুক্ত করে ভুল শিক্ষা দেয়া হচ্ছে। সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে ইসলাম বিরোধী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের মাধ্যমে কোমলমতি শিশুদের মনে ইসলাম ধর্মের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। আর এর প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখালে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। দেশের ইসলাম প্রিয় জনতা এটা কিছুতেই মেনে নিবে না।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান আওয়ামী সরকার গত ১৪ বছরে ১২ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়ানোর ফলে দ্রব্য-মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। কিন্তু বিনাভোটের সরকারের সে দিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ ও দায়বদ্ধতা নেই। দুর্নীতি আর লুটপাটই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। তাছাড়া দেশের জনগণ লক্ষ্য করছে যে, বর্তমান বিনা ভোটের সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো আবারো নির্বাচনের নামে প্রহসনের নাটক মঞ্চস্থ করার পাঁয়তারা করছে। কিন্তু গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক জনতা এটা কিছুতেই হতে দিবে না। তারা যে কোনো মূল্যে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করবে, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে স্বাভাবিক রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে দিচ্ছে না। সরকার জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে নির্যাতন চালাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, জামায়াতে ইসলামী একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। দেশের সংবিধান প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকেই তাদের রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার অধিকার দিয়েছে। এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করার এখতিয়ার কারো নেই। অতীতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে জনগণের ন্যায় সংগত অধিকার আদায়ের কোনো আন্দোলনকে দমন করা যায়নি। এখনো যাবে না ইনশাআল্লাহ।
জনগণের অধিকার আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শরীক হওয়ার জন্য আমি দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। সেই সাথে জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধীদলের গ্রেফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”