দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র এবং পাঠ্য পুস্তকে ইসলামী রীতিনীতি ও মূল্যবোধ পরিপন্থী সিলেবাস অন্তর্ভুক্তি করার প্রতিবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ২১ জানুয়ারি এক বিবৃতি প্রদান করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সরকার দেশের ৯০ ভাগ মুসলমানের কথা বিবেচনায় না নিয়ে একটি নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়ার সুগভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। নূতন করে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনে বা সংস্কার সাধনে শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও আলেম-ওলামাদের মতামতের কোনো তোয়াক্কা করা হয়নি। জাতিকে ধর্মহীন এবং গোড়া থেকে পঙ্গু করে দেয়ার এক অশুভ উদ্দেশ্য নিয়ে অতি গোপনে বিভিন্ন শ্রেণীর পাঠ্য পুস্তকে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিভিন্ন শ্রেণীতে প্রকাশ্যে অনৈতিক যেসব শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, তা চলমান থাকলে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনৈতিকতা ও অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ের ১১ অধ্যায়ে ‘মানব শরীর’ শিরোনাম প্রবন্ধে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক অবস্থার যেসব বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা অত্যন্ত নির্লজ্জ ও অশ্লীল কথা-বার্তায় পরিপূর্ণ, যা কোমলমতি শিশুদের বিপথগামী করবে। দেশের অভিভাবক ও বুদ্ধিজীবী মহল মনে করেন, এই ক্লাসে এ ধরনের খোলা-মেলা আলোচনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ’ বইয়ে আত্মপরিচয়ের বিষয়ে অন্যান্য ধর্মের কথা থাকলেও কৌশলে ইসলাম ধর্মের পরিচয়কে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। একই বইয়ের ৯৮ পৃষ্ঠায় মুসলিম শাসক ‘ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী’ কে দখলদার এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিহার ধ্বংসকারী বলে উল্লেখ করা হয়েছে। একই বইয়ের ১১৪ ও ১১৫ পৃষ্ঠায় ডারউইনের তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণ ইসলাম বিরোধী একটি মতবাদ। এতে কেউ বিশ্বাস করলে তার ঈমান থাকবে না। এছাড়া সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ’ বইয়ের ১২১ পৃষ্ঠায় ইসলামের আবশ্যকীয় বিধান পর্দার বিষয়কে অত্যন্ত ন্যক্কারজনকভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মেয়েদের বোরকা পরিধান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস বইগুলোতে ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করা হয়েছে। বাংলায় মুসলমানদেন ৬০০ বছরের গৌরবজনক শাসনকে মৌর্য, গুপ্ত, বৃটিশ ও পাকিস্তানি শাসনের সাথে তুলনা করা হয়েছে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর বইগুলোতে ইতিহাস সম্পর্কিত বাংলার বিভিন্ন সামাজিক আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা হলেও, ইসলামী আন্দোলনকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। ইংরেজ আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত শহীদ তিতুমীর, ফারায়েজী আন্দোলন এবং ১৮৫৭ সালের বিপ্লবে আলেম সমাজের ভূমিকাকে উল্লেখ করা হয়নি।
পাঠ্য বইয়ের বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বিভিন্ন পশু যেমন- কুকুর, নেকড়ের সাথে মানুষের অর্ধনগ্ন ছবি ব্যাপকহারে ছাপানো হয়েছে। প্রতিবেশি একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রের কৃষ্টি-কালচার ব্যাপকভাবে আলোচনা করা হলেও কৌশলে ইসলামী তাহজীব-তমুদ্দুনকে সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ ও ইসলামিক স্কলারগণ মনে করেন, এই শিক্ষা ব্যবস্থা চলমান থাকলে দেশের কোমলমতি শিশুদের মধ্যে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা ছড়িয়ে পড়বে। দেশে সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাবে। জাতি এক ধর্মহীন নাস্তিক্যবাদী চিন্তা চেতনায় গড়ে উঠবে, যা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। অতএব, দলমত-নির্বিশেষে সকলেরই উচিত এই নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তোলা।
দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করে অবিলম্বে পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলাম বিদ্বেষী সকল আপত্তিকর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ইসলামী মূল্যবোধের ভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তক রচনার ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।”