১৯ নভেম্বর ২০০০, রবিবার

সাবেক আমীরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত

সাবেক আমীরে জামায়াত শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী একটি জীবন, একটি ইতিহাস। আল্লাহ প্রদত্ত এক বিস্ময়কর প্রতিভা। ব্যক্তিগত জীবনে স্বচ্ছ চিন্তা, সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত, নরমদিল ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী, অত্যন্ত ভদ্র-নম্র, মার্জিত, পরিশীলিত, মৃদুভাষী এক অসাধারণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শান্তি ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের প্রিয় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর এবং বাংলাদেশের প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুলেখক, ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানি উস্তাদ ও বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ। ২০১৫ সালে আমেরিকার বিখ্যাত সংস্থা “দ্য রয়েল ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার” প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

ছাত্রজীবনে স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে নিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে মোট দুইবার তিনি বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সর্বমহলে নিজেকে একজন সৎ, দক্ষ ও অমায়িক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেশবাসীর কল্যাণে নিবেদিত মাওলানা নিজামীর ব্যক্তিত্ব দেশবাসীর হৃদয়ে তাদের প্রিয় নেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।

যেসব মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে মাওলানা নিজামীকে ফাঁসির মতো সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত করা হলো তা ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন অপরাধের তদন্তে স্বাধীনতাত্তোর গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট এবং সরকারি নথিতে কোথাও তাঁর নাম ছিল না। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত তথাকথিত মিথ্যা অভিযোগে সারা বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা তো দূরে থাক একটি জিডি পর্যন্ত করা হয়নি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সময়ে শেখ হাসিনা কর্তৃক জনাব নিজামীর পাশে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করাসহ কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের অনেক বৈঠক হয়েছে। এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারগঠনে ও দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চেয়ে তাদের দলের সিনিয়র নেতাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখন নিশ্চয়ই মাওলানা নিজামী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না? অনেকে বলে থাকেন, আওয়ামী লীগের সাথে থাকলে সঙ্গী, বিরোধী হলেই জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধী!

মূলত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অপরাধ হলো, তিনি ইসলামী আন্দোলনের নেতা ছিলেন, ছিলেন নীতির প্রশ্নে আপসহীন। তাঁর রাজনীতি ছিল ব্যক্তি ও দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে। তিনি ছিলেন দেশের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের পক্ষে। বাংলাদেশকে যারা তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায় তাদের অবৈধ স্বার্থ হাসিলের পথে মাওলানা নিজামী ও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামীকে তারা প্রধান বাধা হিসেবে ধরে নিয়েছে। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, গণমানুষের প্রাণপ্রিয় এ নেতাকে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংগঠন, শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন দেশের সমালোচনা ও ফাঁসি কার্যকর না করার অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করে জুলুমবাজ সরকার। তাঁর মতো পরিচ্ছন্ন ও বর্ষীয়ান একজন রাজনীতিবিদের রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে বিদায় নেয়া সত্যিই উদারতা ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বেদনাবিধুর, লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। মাওলানা নিজামীর এই ফাঁসি মুসলিম উম্মাহর দেহে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, তা বর্তমান আওয়ামী সরকার কর্তৃক পরিকল্পিত এক অমার্জনীয় ও নজিরবিহীন ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

জন্ম ও শিক্ষা :

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৪৩ সালের ৩১ মার্চ পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম লুৎফর রহমান খান একজন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ও আল্লাহভীরু লোক ছিলেন। নিজগ্রাম মনমথপুর প্রাইমারি স্কুলে তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি। এরপর সাঁথিয়ার বোয়াইলমারী মাদরাসা হয়ে পাবনার শিবপুর ত্বহা সিনিয়র মাদরাসা থেকে আলিম পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে সমগ্র বোর্ডে ষোলতম ও ১৯৬১ সালে একই মাদরাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।

১৯৬৩ সালে মতিউর রহমান নিজামী অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষাকেন্দ্র মাদরাসা-ই-আলিয়া, ঢাকা থেকে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে কামিল পরীক্ষায় ফেকাহশাস্ত্রে প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। পরবর্তীকালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৬৭ সালে কৃতিত্বের সাথে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করেন।

ছাত্রজীবনেই নেতার ভূমিকায় :

১৯৬১ সাল থেকে ইসলামী ছাত্রসংঘের দাওয়াতে সাড়া দিয়ে তিনি ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ঐ সময় মাদরাসা-ছাত্ররা তাদের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য আন্দোলন করছিল। ১৯৬২-৬৩ সালে কামিল শেষ বর্ষের মেধাবী ছাত্রনেতা নিজামী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিসহ মাদরাসা-ছাত্রদের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

ছাত্রনেতা নিজামী ১৯৬২-৬৬ সাল পর্যন্ত ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় অফিস সেক্রেটারি, ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পরপর তিন বছর তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি তৎকালীন অবিভক্ত পাকিস্তান ইসলামী ছাত্রসংঘের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বাচিত হন। পর পর দু’বছর তিনি এ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থেকে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এ দায়িত্ব থেকে বিদায় গ্রহণ করেন।

পারিবারিক জীবন :

১৯৭৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর শামসুন্নাহারের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। শামসুন্নাহার নিজামী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনিও ছাত্রজীবন থেকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী চার ছেলে ও দুই কন্যাসন্তানের জনক।

স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে মাওলানা নিজামী :

১৯৬৪ সালে আইয়ুব খান প্রণীত অনৈসলামিক ও অগণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী সর্বপ্রথম সোচ্চার হয়ে ওঠে এবং তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে সরকার ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা সরকারি যড়যন্ত্র ও দমননীতির কাছে মাথা নত না করে COP, DAC, PDM-এর মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন পরিচালনা করতে থাকে। এ সময় ইসলামী ছাত্রসংঘ মাওলানা নিজামীর নেতৃতে ৮ দফা দাবিতে স্বৈরাচারবিরোধী গণ আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৬৯ সালে নুর খান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের পক্ষে জনমত গড়তে গিয়ে নিজামীর প্রিয় সাথী মেধাবী ছাত্রনেতা আবদুল মালেক বাম ও সেকুলারপন্থীদের হাতে শাহাদাত বরণ করেন।

সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য ছাত্রনেতা :

আইয়ুববিরোধী আন্দোলন চলাকালে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী আসাদ নিহত হন। আদর্শিক দ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও মাওলানা নিজামী আসাদের জানাজায় উপস্থিত হন। ছাত্র নেতৃবৃন্দের অনুরোধে তিনি জানাজায় ইমামতি করেন। রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকলেও ব্যক্তিগতভাবে মাওলানা নিজামী ছাত্রনেতা হিসেবে সকলের নিকট সম্মানের পাত্র ছিলেন।

১৯৭০ সালে নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনকারী দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না হওয়ার কারণে যে আন্দোলন শুরু হয়, তখন তিনি ছিলেন ছাত্রনেতা। সেই আন্দোলনকে তিনি সমর্থন করেছিলেন। নির্বাচিত নেতা হিসেবে শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে বিনা শর্তে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়েছিলেন।

জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান ও নেতৃত্ব প্রদান :

ছাত্রজীবন শেষে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ১৯৭১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান করেন। তিনি পর্যায়ক্রমে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য হিসেবে ১৯৭৯-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি সংগঠনের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন এবং ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত এ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকেন। ১৯৮৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একটানা ১২ বছর মাওলানা নিজামী জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০ সালের ১৯ নভেম্বর মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দ্বিতীয় আমীর হিসেবে নির্বাচিত হন। শাহাদাতের পূর্ব পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

ইসলামী আন্দোলনের নেতা হিসেবে হত্যার ষড়যন্ত্র :

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ইসলামের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখার কারণে আধিপত্যবাদ ও নাস্তিকতাবাদী গোষ্ঠী তাঁর বিরুদ্ধে বহুমুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে। ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস ও সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য তৎকালীন ভাইস চ্যান্সেলর কর্তৃক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের বৈঠক ডাকা হয়। আমন্ত্রিত হয়ে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এই বৈঠকে উপস্থিত হন। এ সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর ওপর নগ্নহামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন এবং দীর্ঘ সময় চিকিৎসাধীন থেকে সুস্থ হয়ে ওঠেন।

১৯৯৬ পরবর্তী আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আওয়ামী-পুলিশ-বাহিনী সরাসরি তাঁর মতো প্রাজ্ঞ ও প্রবীণ রাজনীতিবিদের ওপর লাঠিচার্জ করার দুঃসাহস প্রদর্শন করে। কিন্তু কোনো হুমকি, আঘাত ও আক্রমণ কখনো তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি।

প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন মাওলানা নিজামী :

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন, অসংখ্য আলেম ও ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানি উস্তাদ। দেশে-বিদেশে তিনি বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম ও স্কলারদের নিকট প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন হিসেবে সমাদৃত। ২০১৫ সালে আমেরিকার বিখ্যাত “দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ সেন্টার” প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ৫০০ জন প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের তিনি অন্যতম।

জাতীয় রাজনীতিতে মাওলানা নিজামী : স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি গণ-আন্দোলনে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮২-৯০ সালে তদানীন্তন স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মাওলানা নিজামী বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেন। ফলে একাধিকবার তিনি স্বৈরশাসকের আক্রোশের শিকার হন। ৩ জোটের পাশাপাশি জামায়াতের আন্দোলন এবং তাঁর সাহসী নেতৃত্বের কারণে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণপ্রতিরোধ গড়ে ওঠে এবং ১৯৯০ সালে জাতি অপশাসনের হাত থেকে মুক্তি লাভ করে।

১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রদত্ত ফর্মুলা অনুযায়ী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচন বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের এই ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলের নেতা হিসেবে সংসদে মাওলানা নিজামী বিল উত্থাপন করেন। পরবর্তীতে সংসদের ভেতরে ও বাইরে জামায়াতে ইসলামীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে কেয়ারটেকার সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর সংগ্রামী ভূমিকা জাতির মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। তাঁর নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিসমূহ আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়। আওয়ামী লীগ কর্তৃক ইসলাম ও মুসলমানদের ঈমান-আকিদা ধ্বংস, পৌত্তলিকতার প্রচলন, মাদরাসা শিক্ষা বন্ধের চক্রান্ত, কুখ্যাত জননিরাপত্তা আইনের ছদ্মাবরণে বিরোধী দল দমন, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও দেশের অখন্ডতাবিরোধী পার্বত্য কালোচুক্তি, গঙ্গার পানিবন্টন চুক্তির নামে প্রহসন, সর্বোপরি দেশ-জাতিকে ধ্বংসের বহুমুখী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাওলানা নিজামীর ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
২০০৭ সালের অবৈধ কেয়ারটেকার সরকারের সময়ে তিনি দেশকে বিরাজনীতিকরণ ও ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বাতিল ও জরুরি আইন জারির প্রতিবাদে জোরালো ভূমিকা পালন করেন। এ ছাড়াও ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশব্যাপী গড়ে ওঠা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন মাওলানা নিজামী।

চারদলীয় ঐক্যজোটের শীর্ষ নেতা মাওলানা নিজামী :

১৯৯৬ সালে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ১৯৯৯ সালের শেষ দিকে গঠিত চারদলীয় ঐক্যজোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ছিলেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী। চারদলীয় ঐক্যজোট ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয় লাভ করে এবং সরকার গঠন করে। নানা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করে চারদলীয় ঐক্যজোট অটুট রাখা ও শক্তিশালী করার পেছনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা, অপরিসীম ধৈর্য ও ত্যাগ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জাতীয় সংসদে মাওলানা নিজামী :

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জাতীয় সংসদে মাওলানা নিজামীর বুদ্ধিবৃত্তিক, তথ্য-যুক্তিনির্ভর, উপস্থাপনা ও সময়োপযোগী বক্তব্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান হিসেবে তিনি জামায়াতে ইসলামীর সংসদীয় দলনেতার দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে তিনি সংসদের পার্লামেন্টারি ও মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সদস্য ছিলেন। গঠনমূলক ও ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা পালনের কারনে তিনি বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

দেশগঠনে অবদান ও জাতীয় উন্নয়নে ভূমিকা :

দেশগঠন ও জাতীয় উন্নয়নে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর ভূমিকা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সফলতার সাথে কৃষি ও শিল্প মন্ত্রণালয় পরিচালনা করেন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে মন্ত্রী হিসাবে তিনি সততা ও দক্ষতার সাথে সংস্কার ও উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। মন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রতিটি চাষির বাড়িতে ‘চাষির বাড়ি বাগান বাড়ি’ স্লোগানে উন্নয়নমূলক যে যুগান্তকারী মডেল কর্মসূচি গ্রহণ করেন, যার ধারাবাহিকতায় আজও ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্প হিসেবে বিদ্যমান রয়েছে। শিল্পমন্ত্রী হিসেবে তিনি শিল্পখাতে প্রবৃদ্ধি শতকরা ১০.৪৫ ভাগে উন্নীতকরণ, সুষ্ঠুভাবে সার সরবরাহ, বন্ধ শিল্প চালু, সাভারে চামড়া শিল্প নগরী স্থাপনসহ অনেক বৈপ্লবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। চিনি শিল্পে প্রায় ৭০ কোটি টাকা মুনাফা অর্জনসহ ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন মাওলানা নিজামী।

তিনি এ দেশের কৃষিকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্বখাদ্য সম্মেলন ও থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড রাইস রিসার্চ অরগানাইজেশনের সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন তিনি। মাওলানা নিজামী কৃষি মন্ত্রণালয়ে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়েছেন। তার সততা, দক্ষতা ও একাগ্রতা পুরো সেক্টরকেই প্রভাবিত করে।

তাঁর-ই উদ্যোগে পণ্যের নকল ও ভেজাল প্রতিরোধ এবং বাংলাদেশে উৎপাদিত বিভিন্ন শিল্প ও সেবাসামগ্রী বিশ্বের বিভিন্ন মানপ্রণয়ন ও স্বীকৃতি প্রদানকারী সংস্থাসমূহ কর্তৃক স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে ন্যাশনাল অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড গঠন করা হয়।

মাওলানা নিজামীর হাতের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে সাঁথিয়া-বেড়ার চিত্র। সাঁথিয়া-বেড়ার উন্নয়নের রূপকার তিনি। শুধু সাঁথিয়া-বেড়াই নয়, পাবনার সামষ্টিক উন্নয়নেও রয়েছে তাঁর অনন্য অবদান।

জঙ্গিবাদ দমনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ অবস্থান :

চারদলীয় ঐক্যজোট সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশবিরোধী শক্তির ক্রীড়নক একটি গোষ্ঠী দেশব্যাপী ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে বোমা হামলা চলায়। অথচ ইসলাম কখনোই কোনরূপ সহিংসতার পথকে সমর্থন করে না। কিন্তু এই গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে ইসলামের বদনাম রটানোর জন্য এবং দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারাকে থামিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এ-হামলা পরিচালনা করে। জামায়াতে ইসলামী ও এর আমীর মাওলানা নিজামীর সোচ্চার ভূমিকার কারণে ইসলামের নামে বোমা হামলাকারী এসব ঘাতকদের মুখোশ জাতির সামনে খুলে যায়। চারদলীয় জোট সরকারের সময়েই জেএমবির শীর্ষ নেতারা গ্রেফতার হয়। তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়ন :

দেশব্যাপী প্রচলিত শিক্ষব্যবস্থার সংস্কার, উন্নয়ন ও মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে মাওলানা নিজামী পালন করেন আন্তরিক ও দায়িত্বশীল ভূমিকা। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি ও মান প্রদান এবং ফাজিল-কামিলের মান প্রদানের মতো চারদলীয় জোট সরকারের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের পেছনে মাওলানা নিজামীর তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।

আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মাওলানা নিজামী :

প্রতিটি আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মুসলিম উম্মাহর পক্ষে মাওলানা নিজামী অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছেন। বাবরী মসজিদ ভাঙা, বসনিয়া-হারজেগোভিনায় মুসলিম গণহত্যা, ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইল কর্তৃক ফিলিস্তিনি মুসলমানদের সাথে ন্যক্কারজনক আচরণ, লেবাননে বর্বরোচিত ইসরাইলি হামলা নিয়ে মাওলানা নিজামী সময়োপযোগী ও ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন।

জার্মান অধ্যাপক হেন্স কিপেনবার্গ ‘মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা)-কে এক যুদ্ধবাজ ও ইসলামকে জঙ্গি বা রণমুখী ধর্ম’ অভিহিত করার বিরুদ্ধে ও ডেনমার্কে মহানবী (সা)-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশের প্রতিবাদে তার প্রদত্ত বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত।

বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের নেতা মাওলানা নিজামী :

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ইস্যুতে মাওলানা নিজামীর প্রজ্ঞাপূর্ণ ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ২০০২ সালের ২৭ মার্চ মুসলিম দুনিয়ার বিখ্যাত চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ডক্টর ইউসুফ আল কারযাভীর নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্যের দশজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা নিজামীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।

মাওলানা নিজামী একাধিকবার রাবেতা আল আলম আল ইসলামীর সম্মেলনে যোগদান করেন। তিনি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ (রাবেতা), সেন্ট্রাল কো-অর্ডিনেশন কমিটির স্থায়ী সদস্য ছিলেন। মাওলানা নিজামীসহ মুসলিম বিশ্বের ৫২ জন বিশিষ্টি চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবী আরব ও মুসলিম বিশ্বের জনগণের প্রতি ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত আহবান জানান।

২০০৩ সালের ১৫-১৭ অক্টোবর চীনে অনুষ্ঠিত Sustained Elimination of Iodine Deficiency Disorder শীর্ষক সম্মেলনের তৃতীয় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী।

২০০৬ সালে মাওলানা নিজামী ইংল্যান্ডের শীর্ষ বৈদেশিক ও কূটনৈতিক নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম ‘চেথম হাউজের’ আমন্ত্রণে ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ইসলামী রাজনৈতিক দলসমূহ : জামায়াতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে তিনি এ-সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

উল্লেখ্য, চেথম হাউজ ব্রিটেনের অন্যতম শীর্ষ নীতিনির্ধারণী বিশেষজ্ঞ ফোরাম, যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রেখে থাকেন। মাওলানা নিজামী প্রথম বাংলাদেশী নেতা, যিনি চেথম হাউজের আমন্ত্রণে সেখানে বক্তব্য রাখেন।

মুসলিম উম্মাহ তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০০৯ সালের ইউএসএ ভিত্তিক “দ্য রয়েল ইসলামিক স্ট্র্যটিজিক স্টাডিজ সেন্টার” কর্তৃক বিশ্বের শীর্ষ ৫০ জন ব্যক্তিত্বের মধ্যে মাওলানা নিজামীকে নির্বাচন করেন।
তিনি বহুবার সৌদি বাদশাহর রয়েল গেস্ট হিসেবে পবিত্র হজ পালন করেন।

লেখক ও চিন্তাবিদ নিজামী :

মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী সংগঠনের দায়িত্ব পালন ও রাজনৈতিক ব্যস্ততার মাঝেও ইসলামী সাহিত্য ও গবেষণায় মৌলিক চিন্তার আলোকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

বাল্যকাল থেকেই লেখালেখির প্রতি মাওলানা নিজামীর ঝোঁক ছিল। তিনি বিভিন্ন ম্যাগাজিন, সাপ্তাহিক ও দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। তাঁর সৃজনশীল ও গবেষণাধর্মী এবং তথ্যসমৃদ্ধ লেখা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাজনৈতিক ও ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন ব্যস্ততার মাঝেও তাঁর ৬১টি বই প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যায়ভাবে বারবার গ্রেফতার মাওলানা নিজামী :

২০০৭ সালের অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্যায়ভাবে মাওলানা নিজামীকে গ্যাটকো মামলায় ২০০৮ সালের ১৮ মে দিবাগত রাতে গ্রেফতার করে। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে তিনি ওই বছর ১৫ জুলাই মুক্তি লাভ করেন। এর কয়েক মাস পর ১০ নভেম্বর বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি মামলায় বিশেষ জজ আদালতে হাজির হতে গেলে জামিন না দিয়ে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। হাইকোর্ট তাকে ১২ নভেম্বর জামিন দিলে তিনি ১৬ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি লাভ করেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। ২০১০ সালের ২৯ জুন মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের বানোয়াট-ঠুনকো অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ৯টি হয়রানিমূলক মামলায় জড়ানো হয় মাওলানা নিজামীকে। এসব মামলায় তাকে ২৪ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়। একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান ও শীর্ষ স্থানীয় আলেমকে রিমান্ডে নিয়ে মানসিক নির্যাতনের ঘটনা দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে করেছে কলঙ্কিত।

অন্যান্য মামলায় জামিন পাওয়ার পরও সরকার হীন উদ্দেশ্যে কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১০ সালের ২ আগস্ট তাঁকে গ্রেফতার দেখায়।