৩ ডিসেম্বর ২০২৫, বুধবার

রংপুরে ৮ দলের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত

গণভোট হওয়াটা জাতির জন্য ভালো লক্ষণ, না হওয়াটা খারাপ লক্ষণ -অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

রংপুরে জামায়াতসহ সমমনা আট দলের বিভাগীয় মহাসমাবেশে নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি তুলেছেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। সমাবেশে বক্তারা বলেছেন দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট, নির্বাচনব্যবস্থার আস্থাহীনতা এবং বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনের অনিয়মের সমাধান ও জনগণের সংস্কার আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন গণভোট ছাড়া সম্ভব নয়।

বুধবার (৩ ডিসেম্বর) নগরীর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে দুপুর দুইটায় পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলগুলোর শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।

বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান অতিথি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছেন, 'এতগুলো মায়ের কোল সন্তানহারা হলো,এত মানুষ পঙ্গু হলো, চক্ষু হারালো। আমাদের যে মৌলিক দাবিগুলো ছিল যে দেশের সংস্কার হবে খুনিদের-টাকা পাচারকারীদের দৃশ্যমান বিচার হবে এরপর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে কিন্তু আমরা দেখলাম একশ্রেণীর ক্ষমতালোভীরা সংস্কার এবং দৃশ্যমান বিচারকে গুরুত্ব না দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য শুধু পাগল নয় ডবল পাগল হয়ে গেছে।'

তিনি আরও বলেন, একজনকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে আরেকজনকে ক্ষমতায় পাঠানোর জন্য।

নাকি এ দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করার জন্য,খুনিদের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য এদেশের ছাত্র জনতা জীবন দিয়েছে। আজকে তারা যদি এটা বুঝতে ব্যর্থ হয় আমরা তাদেরকে এই সমাবেশের মাধ্যমে আমরা বলতে চাই আপনারা মনে করেছিলেন ওয়ান-টুর ভিতর ক্ষমতায় যাবেন সেদিন-সেসময় ভূলে যান। রংপুর থেকেই চাঁদাবাজ-ক্ষমতালোভী ও বিদেশের তাবেদারি বাস্তবায়ন করতে চায় ওদেরকে থেকে উৎখাত করতে হবে। আগের মত গুন্ডামির মাধ্যমে এবং কালো টাকার দৌরাত্মের মাধ্যমে জাগ্রত জনতাকে থামানো যাবে না।

জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন,'গণভোটের মাধ্যমে ভোটের চরিত্র পাল্টাতে হবে। গণভোট হলে ক্ষতিটা কি? রাজনৈতিক দলগুলো একমত হইতে পারছে না। ঝগড়া যখন তারা মিটাইতে না পারে, একটা নিয়ম আছে এটা অতীতেও হয়েছে যে তোমরা রাজনৈতিক দল আমাদের হাতে ছেড়ে দাও গণভোটে আমরাই ঠিক করে দেবো কোনটি ঠিক। গণভোট হওয়াটা জাতির জন্য ভালো লক্ষণ,না হওয়াটা খারাপ লক্ষণ।'

মুজিবুর রহমান বলেন, ‘যারা গণভোট হইতে দিতে চায়, তারা জনগণের জন্য ভালো কিছু করতে চায়। আর যারা গণভোট হইতে দিতে চায় না, অথবা যারা গণভোটের রেজাল্ট যাতে না আসে, সেই জন্য গণভোট যেদিন হবে, সেই দিনই সংসদ নির্বাচন দাবি করে। গণভোট ঠিক করবে সংসদ নির্বাচনকে। কিন্তু একই দিনে যদি গণভোট হয়, তাহলে গণভোটের এই রায় সংসদ নির্বাচনকে কোনো ভালো কিছু করতে পারবে? আগামীতে গণভোট যখনই হোক, যেভাবেই হোক, আমরা আগে চাই।

এ সময় তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আগামীতে গণভোট যখনই হোক , যেভাবেই হোক আপনারা গণভোটের পক্ষে 'হ্যাঁ' বলবেন। গণভোটের পক্ষে মাঠে উপস্থিত নেতাকর্মীরা হাত তুললে তিনি বলেন, হ্যাঁ জয়যুক্ত হয়েছে, গণভোট জয়যুক্ত হয়ে গেল। যারা গণভোট চাইল না অথবা যারা গণভোটের বিপক্ষে আছে, তারা পরাজিত হয়ে গেল। এবং পরাজিত হবে ইনশাল্লাহ। এই পরাজয় কেউ ঠেকাইতে পারবেনা। এই সমস্ত চোর ডাকাত যারা ছিনতাই করে তাদের বাংলাদেশে জায়গা আগামীতে হবে না।

জামায়াতের নায়েবে আমীর বলেন, আমরা বিচারের কথা বলেছিলাম, অন্যায় যে করে আর অন্যায় করতে যে সাহায্য করে দুজনের অপরাধ যদি সমান হয়, তাহলে একটিকে যদি কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়, তাহলে তাদেরকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকে নিষিদ্ধ করা কি ঠিক হবে না? প্রধান উপদেষ্টা কে বলবো, সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন আশা করছি।

গত তিনটি নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, '২০১৪ তে কি হয়েছে ? বিনা ভোটে নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ তে কি হয়েছে? দিনের ভোট রাতে হয়ে গেছে। আর ২০২৪ এর নির্বাচনে কি হয়েছে বলি, কেউ তো ভোট দিতেও যায় নাই কেউ দাঁড়াইতে ও চায় নাই। সাংবাদিকরা এখানে আছেন ওনারা রিপোর্ট করেছেন, যে ভোট কেন্দ্রে যে দেখলাম ভোটকেন্দ্রে মানুষ তো নাই কয়েকটা কুত্তা শুয়ে আছে। এই কুত্তা শুয়ে থাকার নির্বাচন বাংলাদেশে আমরা চলতে দিতে চাই না।'

সমাবেশে পাঁচ দফা— জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট, নির্বাচন ব্যবস্থায় পিআর পদ্ধতি চালু, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতকরণসহ অন্যান্য দাবিতে আট দল ঐক্য প্রকাশ করে।

এদিকে সমাবেশে যোগ দিতে বিভাগের আট জেলা থেকে দুপুর ১২টার পর থেকেই জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিও নেতা কর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ মাঠে যোগ দিতে শুরু করেন।

সমাবেশে বক্তব্য দেন- জামায়াতের নায়েবে আমীর এটিএম আজহারুল ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সালাহউদ্দিন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলামের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, সাংগঠনিক সচিব হাফেজ মাওলানা আবু তাহের খান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, সংগঠক মুফতি মাহমুদুল হাসান, জাগপার সহসভাপতি ও মুখপাত্র ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলামসহ আট দলের স্থানীয় নেতারা।