৫ দফা দাবিতে আন্দোলনরত আট দলের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ ২রা ডিসেম্বর'২৫, বরিশাল বেলস পার্কে বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুপুর বারোটা থেকে শুরু হয়ে বিকাল চারটা পর্যন্ত চলমান সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম পীর সাহেব চরমোনাই, সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। আটদলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আজকের সমাবেশ থেকে আমি বিশেষ করে যারা ক্ষমতা প্রেমিক রয়েছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে মুখরোচক কথার মাধ্যমে ধোঁকা দিয়ে ক্ষমতার চেয়ারে বসে হাজার হাজার মায়ের বুক খালি করেছে, পাচার করেছে, চোরের দিক থেকে বারবার ফার্স্ট করেছে, তাদেরকে সমাবেশ থেকে ম্যাসেজ দিতে চাই তাদের জায়গা বাংলার মাটিতে হবেনা, তাদেরকে উৎখান করতে হবে। যারা বাংলাদেশের পরিবেশকে অশান্ত করার পায়তারা করছে, তাদের জায়গা বাংলাদেশে হবেনা। আমরা এদেশকে মুক্ত করার জন্য রাজপথে আন্দোলন করে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছি। কিন্তু চাঁদাবাজি দেখার জন্য রাস্তায় নামিনি, মানুষ খুন হবে এটা দেখার জন্য রাস্তায় নামিনি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশ নিয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র চলছে। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিত হবে। আর যারা ক্ষমতায় গিয়ে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে, তাদেরকে এদেশে আর সুযোগ দেয়া হবে না। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, স্টেশন দখলের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় বলছি আপনাদের পায়ের নিচের মাটি সরে গেছে। এখনো আপনারা পরিবর্তন হোন। হাসিনাও বলেছিলো যে 'শেখ হাসিনা পালায়না'। কিন্তু তিনি রান্না করা খাবার খেয়ে যেতে পারেনি। সুতরাং দেশের সবার শিক্ষা নিতে হবে। নয়তো এমন পরিণতির জন্য আপনাদেরকে প্রস্তুত থাকতে হবে। পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, আপনারা অনেক শাসন দেখেছেন এবার ইসলামকে সুযোগ দিন, আমরা একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র উপহার দেব ইনশাআল্লাহ। ইসলামপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে চাঁদাবাজি থাকবেনা, অবিচার থাকবেনা, খুনাখুনি থাকবে না, দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে না। অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়া এবং জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহেরের সুস্থতা কামনা করেন পীর সাহেব চরমোনাই।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েব আমীর বলেন, আমরা অনেকে আগে পীর পছন্দ করতাম না। আমিও ছাত্রজীবনে এমনটা মনে করতাম। কিন্তু আজকে চরমোনাই পীর সাহেবের পাশে বসে মনে হলো তিনি শুধু পীর নয় তিনি এদেশের ইসলাম প্রতিষ্ঠার একজন মহাবীর। তিনি বলেন আমরা আটদল ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আল্লাহ তায়া’লা কুরআনে দুইটা দলের কথা বলেছেন, একটা হলো হিজবুল্লাহ আরেকটা হিজবুশ শয়তান। সুতরাং আমরা আল্লাহর দলে থাকতে চাই। আসুন আমরা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কুরআনের আইন চালু করি, আমরা মানবরচিত আইনের সংবিধান দেখতে চাইনা। আল্লাহর রাসুল যেভাবে মদিনার সনদের ভিত্তিতে যেভাবে ইসলামী সমাজ কায়েম করেছেন সেভাবে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই। সংস্কারের মাধ্যমে আমরা সংবিধান থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে চাই।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরও বলেন, একটি দলকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু তাদেরকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদেরকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। আল্লাহর আইন মেনে যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেনা তারা জালেম কাফের ফাসেক। আমরা দরজা বন্ধ করিনি, সকল দল সংগঠন প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাই আমরা সবাই মিলে দেশকে গড়ে তুলি। এদল দেখা শেষ ওদল দেখা শেষ এখন হবে কল্যাণের বাংলাদেশ।সবশেষে তিনি ৮ দলকে আগামী দিনে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহবান জানান।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম শায়খে চরমোনাই, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও অধ্যক্ষ মাওলানা জহির উদ্দিন মু.বাবর, খেলাফত মজলিসের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল বাসির আজাদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা সরওয়ার কামাল আজিজী, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর মাওলানা হাবিবুল্লাহ মিয়াজী, জেনারেল সেক্রেটারি নিজামুল হক নাঈম।