শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী একটি জীবন, একটি ইতিহাস। আল্লাহ প্রদত্ত এক বিস্ময়কর প্রতিভা। ব্যক্তিগত জীবনে স্বচ্ছ চিন্তা, সরল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত, নরমদিল ও অমায়িক ব্যবহারের অধিকারী, অত্যন্ত ভদ্র-নম্র, মার্জিত, পরিশীলিত, মৃদুভাষী এক অসাধারণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। শহীদ মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী শান্তি ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের প্রিয় দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর এবং বাংলাদেশের প্রথম সারির রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন বিজ্ঞ আলেম, ইসলামী চিন্তাবিদ, সুলেখক, ইসলামপ্রিয় জনগণের রুহানি উস্তাদ ও বিশ্ব ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম প্রাণপুরুষ। ২০১৫ সালে আমেরিকার বিখ্যাত সংস্থা “দ্য রয়েল ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার” প্রকাশিত তালিকায় বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী মুসলিম ব্যক্তিত্বের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
ছাত্রজীবনে স্বৈরাচারী আইয়ুববিরোধী আন্দোলন থেকে নিয়ে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের প্রতিটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি বলিষ্ঠ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাওলানা নিজামীর বলিষ্ঠ ভূমিকা বাংলাদেশের মর্যাদাকে বহির্বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে মোট দুইবার তিনি বিপুল ভোটে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১-২০০৬ মেয়াদে তিনি বাংলাদেশের কৃষি ও শিল্পমন্ত্রী হিসেবে সর্বমহলে নিজেকে একজন সৎ, দক্ষ ও অমায়িক নেতার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছরের রাজনৈতিক জীবনে দেশবাসীর কল্যাণে নিবেদিত মাওলানা নিজামীর ব্যক্তিত্ব দেশবাসীর হৃদয়ে তাদের প্রিয় নেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।
যেসব মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক অভিযোগের ভিত্তিতে মাওলানা নিজামীকে ফাঁসির মতো সর্বোচ্চ দন্ডে দন্ডিত করা হলো তা ন্যায়বিচারের ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। কারণ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন অপরাধের তদন্তে স্বাধীনতাত্তোর গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট এবং সরকারি নথিতে কোথাও তাঁর নাম ছিল না। ট্রাইব্যুনাল গঠনের পূর্ব পর্যন্ত তথাকথিত মিথ্যা অভিযোগে সারা বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে কোনো মামলা তো দূরে থাক একটি জিডি পর্যন্ত করা হয়নি। ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সময়ে শেখ হাসিনা কর্তৃক জনাব নিজামীর পাশে বসে সাংবাদিক সম্মেলন করাসহ কেয়ারটেকার সরকারপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি প্রণয়নে জামায়াত নেতৃবৃন্দের সাথে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের অনেক বৈঠক হয়েছে। এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারগঠনে ও দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন চেয়ে তাদের দলের সিনিয়র নেতাদেরকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখন নিশ্চয়ই মাওলানা নিজামী রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না? অনেকে বলে থাকেন, আওয়ামী লীগের সাথে থাকলে সঙ্গী, বিরোধী হলেই জঙ্গি-যুদ্ধাপরাধী!
মূলত মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর অপরাধ হলো, তিনি ইসলামী আন্দোলনের নেতা ছিলেন, ছিলেন নীতির প্রশ্নে আপসহীন। তাঁর রাজনীতি ছিল ব্যক্তি ও দলীয় সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে। তিনি ছিলেন দেশের জনগণ ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থের পক্ষে। বাংলাদেশকে যারা তাঁবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায় তাদের অবৈধ স্বার্থ হাসিলের পথে মাওলানা নিজামী ও তাঁর দল জামায়াতে ইসলামীকে তারা প্রধান বাধা হিসেবে ধরে নিয়েছে। সে জন্য পরিকল্পিতভাবে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, গণমানুষের প্রাণপ্রিয় এ নেতাকে, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে মিথ্যা অভিযোগ ও সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে হত্যা করেছে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ, মানবাধিকার সংগঠন, শীর্ষ ইসলামী ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন দেশের সমালোচনা ও ফাঁসি কার্যকর না করার অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করে জুলুমবাজ সরকার। তাঁর মতো পরিচ্ছন্ন ও বর্ষীয়ান একজন রাজনীতিবিদের রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে বিদায় নেয়া সত্যিই উদারতা ও সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য বেদনাবিধুর, লজ্জাজনক ও দুঃখজনক। মাওলানা নিজামীর এই ফাঁসি মুসলিম উম্মাহর দেহে যে ক্ষতের সৃষ্টি করেছে, তা বর্তমান আওয়ামী সরকার কর্তৃক পরিকল্পিত এক অমার্জনীয় ও নজিরবিহীন ভুল সিদ্ধান্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী।
সম্পূর্ণ বুকলেট টি ডাউনলোড করতে লিঙ্কে যানঃ কভার এন্ড ব্যাক কভার ইনার এন্ড ব্যাক ইনার পেজ ১_৬ পেজ ৭_৯ পেজ ১০_১২ পেজ ১৩_১৮ পেজ ১৯_২৪ পেজ ২৫_৩০ পেজ ৩১_৩২