৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ১০:৫০

এএসপির নিষেধ সত্ত্বেও মেয়র গুলি করেছেন : এমপি স্বপন; সাংবাদিক শিমুল হত্যা

শাহজাদপুরে পৌরমেয়রের গুলিতে নিহত দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল ও তার নানী রোকেয়া বেগমের (৯০) নামাজে জানাজা ও দাফন শেষ হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় শাহজাদপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত তাদের প্রথম ও বাদ জোহর তার বাসভবন মাদলা গ্রামে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে মাদলা-কাকিলামারি কবরস্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়েছে। নিহত সাংবাদিক শিমুল ও তার নানীর নামাজে জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য সকাল থেকেই শাহজাদপুর মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। নিহতের লাশ নামাজে জানাজার জন্য হাইস্কুল মাঠে আসার পর শাহজাদপুর ও সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে তার কফিনে শেষ সম্মান জানাতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় সহকর্মী সাংবাদিকেরা ও সাধারণ মানুষ এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়লে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। নিহত সাংবাদিক ও তার নানীর নামাজে জানাজায় অংশ নেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য হাসিবুর রহমান স্বপন, সমকালের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক তপন দাশ, সাবেক সংসদ সদস্য চয়ন ইসলাম, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. সাজ্জাদ হায়দার লিটন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রফেসর আজাদ রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলীমুন রাজীব, সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ খান হাসান, সাধারণ সম্পাদক ফজলে খোদা লিটন, শাহজাদপুর প্রেস ক্লাবের সভাপতি বিমল কুণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক শফিকুজ্জামান শফি প্রমুখ।
এ দিকে মেয়রকে গ্রেফতারের দাবিতে গতকাল শনিবার সাংবাদিক ঐক্যপরিষদের আহ্বানে ও ছাত্রলীগের ডাকা অর্ধদিবস হরতাল স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হয়েছে। প্রথম নামাজে জানাজা শেষে সাংবাদিক শিমুল হত্যা মামলার প্রধান আসামি পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে শাহজাদপুর সাংবাদিক ঐক্যপরিষদ একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বিক্ষোভ মিছিলটি স্থানীয় প্রেস ক্লাব চত্বর থেকে শুরু করে পৌর সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে সেখানেই এসে শেষ হয়। ওই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে সিরাজগঞ্জ জেলা সদর, বিভিন্ন উপজেলাসহ শাহজাদপুরের সংবাদকর্মীরা অংশ নেন। নিহতের নামাজে জানাজার আগে হাইস্কুল মাঠে সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সভায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ হাসিবুর রহমান স্বপন বলেন, ‘একজন নির্ভীক সংবাদকর্মীকে পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরু ও তার সহযোগীরা পরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করেছেন। ঘটনার সময় এএসপি আবুল হাসনাত (শাহজাদপুর সার্কেল) পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুকে গুলি করতে নিষেধ করলেও তা অগ্রাহ্য করে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে হত্যার উদ্দেশ্যেই সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছেন।’ এ সময় আওয়ামী লীগ নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘খুনি মেয়র পুলিশ প্রহরায় থাকা সত্ত্বেও বাড়ি থেকে কিভাবে পালাল? তার জবাব প্রশাসনকে দিতে হবে। সমাবেশে সাংবাদিক নেতারা খুনি মেয়র ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন। ওই সময়ের মধ্যে আত্মগোপনে থাকা পৌরমেয়রসহ তার সহযোগীরা গ্রেফতার না হলে পরে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নিহত সাংবাদিক শিমুলের বর্বরোচিত হত্যার ঘটনায় শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকেও তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন হিরু ও যুগ্ম সম্পাদক আরিফুজ্জামান আরিফ এই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। সাংবাদিক শিমুল হত্যার প্রতিবাদে আহূত অর্ধদিবস হরতালে শাহজাদপুরের বিভিন্ন সংগঠন ও শ্রেণী-পেশার মানুষ একাত্মতা প্রকাশ করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতাল পালন করেছেন।
৪৩ জনকে আসামি করে মামলা : দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শাহজাদপুর পৌরমেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হালিমুল হক মিরুকে প্রধান আসামি করে তার দুই ভাই হাসিবুল হক মিন্টু, হাসিনুল হক পিন্টু, সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোস্তাফিজুর রহমান পিযুশ, উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য কে এম নাছির উদ্দিনসহ নামীয় ১৮ জন ও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনসহ মোট ৪৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী নুরুন নাহার (৩৮)। এরই মধ্যে পুলিশ পৌরমেয়রের দুই ভাই মিন্টু, পিন্টু, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কে এম নাছির উদ্দিনসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে।
নিহত সাংবাদিকের চোখ দিয়ে গুলি ঢুকেছিল বলে জানান ময়নাতদন্তকারী টিম : শাহজাদপুর পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরুর ব্যক্তিগত শর্টগানের গুলিতে নিহত সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলের চোখ দিয়ে গুলি ঢুকেছিল বলে জানিয়েছে সিরাজগঞ্জ সদর হাসপাতালের তিন সদস্যের ময়নাতদন্ত টিম।
 উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পৌরমেয়র হালিমুল হক মিরু তার শর্টগান থেকে গুলি ছুড়লে ঘটনাস্থলে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর প্রতিনিধি আবদুল হাকিম শিমুল গুলিবিদ্ধ হন। প্রথমে গুরুতর আহতাবস্থায় তাকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে বিকেলে বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে স্থানান্তর করা হয়। শুক্রবার উন্নত চিকিৎসার জন্য বগুড়া থেকে ঢাকা নেয়ার পথে সাংবাদিক আবদুল হাকিম শিমুলের মৃত্যু হয়। এ খবর শুনে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নিহতের নানীও শোকে মারা যান।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/193262