৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, সোমবার, ১০:৪১

বাঁশখালীর কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প: আর্থিক সহায়তা নিতে পুলিশের ডাকে সাড়া দেয়নি নিহতের পরিবার

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ডাকা মতবিনিময় সভার আগে সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার জন্য পুলিশ ডাকলেও তাতে সাড়া দেননি স্বজনেরা। গতকাল রোববার সকালে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকা হয়। কিন্তু পরিবারের কোনো সদস্য আসেননি। স্বজনদের দাবি, নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর করা লিখিত অভিযোগটি পুলিশ মামলা হিসেবে না নেওয়া পর্যন্ত তাঁরা আর্থিক সাহায্য নেবেন না।
নিহত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী রুমি আক্তার ও শ্যালক আতাউর রহমান গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সাহায্যের প্রয়োজন আছে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি দরকার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচার। পরিবারের মামলা না নেওয়ার অর্থ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা। আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতে মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
মামলা না নেওয়া পর্যন্ত কারও কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা না নেওয়ার কথা জানান নিহত আলীর চাচাতো ভাই মো. রিদুয়ানও।
গত বুধবার দুপুরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা নিয়ে বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের প্রকল্প এলাকায় সভা ডাকা হয়। এতে বক্তব্য দেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা গন্ডামারার ‘বসতভিটা ও গোরস্থান রক্ষা সংগ্রাম কমিটি’র সমন্বয়কারী লেয়াকত আলী। তিনি প্রকল্পের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিতে এলাকাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ তাঁদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে লেয়াকতের অনুসারী এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা নুরুল মোস্তফার (ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন) অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। এক পক্ষ আরেক পক্ষকে লক্ষ্য করে মাটির ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় কয়েকজনকে বাঁশ দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়। এ ঘটনায় আহত হন অন্তত ১০ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন অটোরিকশাচালক মোহাম্মদ আলী। ওই দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।
নিহত আলীর স্ত্রী রুমি আক্তার বাদী হয়ে লেয়াকত আলীসহ ২৯ জনকে অভিযুক্ত করে বৃহস্পতিবার রাতে বাঁশখালী থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ তাঁর অভিযোগ মামলা হিসেবে রেকর্ড করেনি। এর পরিবর্তে একই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ১৫০ থেকে ২০০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করে পুলিশ।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিহত মোহাম্মদ আলীর স্বজনেরা আর্থিক সাহায্য গ্রহণ করতে রোববার সকালে আসবেন জানানোয় সাংবাদিকদেরও থাকতে বলা হয়। নিহত ব্যক্তির স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় আসতে পারেননি। প্রয়োজনে তাঁদের কাছে যাব আমরা। সাহায্যের পরিমাণ পাঁচ লাখ টাকার বেশি হবে।’ এস আলম গ্রুপ থেকে এই সাহায্য দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মামলা না নিলে আর্থিক সহায়তা নেওয়া হবে না—পরিবারের এমন অবস্থানের বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, সংঘর্ষে নিহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেছে। জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। নিহত ব্যক্তির স্ত্রীর অভিযোগও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।
এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার লিমিটেড ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নে ২৫০ কোটি ডলার ব্যয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন করা হচ্ছে। গত বছরের ৪ এপ্রিল গন্ডামারার হাদিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পক্ষে-বিপক্ষের লোকজন সমাবেশ ডাকেন। এ নিয়ে সংঘর্ষে দুই ভাইসহ চারজন নিহত হন।
http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1075349/%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%BF%E0%A6%95-%E0%A6%B8%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%A4%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%87-%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%BE-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A7%9F%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B9%E0%A6%A4%E0%A7%87