৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১০:০৪

ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে ॥ বাড়ছে বেকারত্ব

এইচ এম আকতার: কর্মসংস্থানের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারত্বের হার। ২০০০-১০ মেয়াদে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০০০ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ লাখ। অন্যদিকে দেশে প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ মানুষ দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন, যাদের কোনো চাকরির নিরাপত্তা নেই। এর ওপর আবার মোট যুব শ্রমশক্তির ৯ দশমিক ১ শতাংশ বর্তমানে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার রয়েছে। ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে।
২০১৬-১৭ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের (জানুয়ারি-জুন) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত মুদ্রানীতি পর্যালোচনা করে এমন আশঙ্কার কথা জানিয়েছে স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণ।
দেশের বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটছে না। সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত হারে কমেছে। এ পতন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতা ও কর্মসংস্থান সংকট তৈরি করবে। বিশেষ করে এটি যুবসমাজের বেকারত্ব আরো দীর্ঘায়িত করবে, যা সম্প্রতি গৃহীত মুদ্রানীতির কৌশলগত কার্যকারিতাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিতে পারে। চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। উন্নয়ন অন্বেষণ তাদের ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা ২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদনের জানুয়ারি ইস্যুতে সতর্ক করে বলেছে, গুণগত মান বাড়ানো না গেলে লক্ষ্য অনুযায়ী বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জন নাও হতে পারে। ফলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ সম্প্রসারণ ও মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) লক্ষ্য অর্জন ব্যাহত হতে পারে।
উন্নয়ন অন্বেষণের পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেসরকারি বিনিয়োগ স্থবির রয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেসরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ২২ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এসে এর আকার দাঁড়ায় জিডিপির ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সরকারি বিনিয়োগ ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। বিনিয়োগের গুণক প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, সরকারি বিনিয়োগ বাড়লেও তা বেসরকারি বিনিয়োগ সম্প্রসারণে খুব একটা সহায়ক হচ্ছে না।
চলতি অর্থবছরের জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। এক মাসের ব্যবধানে তা ১৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে। মূলত অর্থবছরের শুরু থেকেই বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি পতনমুখী রয়েছে। সেপ্টেম্বর ও নবেম্বরে এ হার ছিল যথাক্রমে ১৫ দশমিক ৩ ও ১৫ শতাংশ। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির এ ধারা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন অন্বেষণ আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির যে লক্ষ্য (১৬ দশমিক ৫ শতাংশ) নির্ধারিত হয়েছে, তা অর্জন সম্ভব নাও হতে পারে। বিষয়টি বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ স্থবিরতাকে আরো তীব্রতর করতে পারে বলে প্রতিষ্ঠানটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
বিনিয়োগ ঘাটতির কারণে কর্মসংস্থানের অভাবের প্রসঙ্গ টেনে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ২০০০-১০ মেয়াদে বাংলাদেশে বেকারের সংখ্যা প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ দশমিক ২৯ শতাংশ হারে বেড়েছে। ২০০০ সালে দেশে বেকারের সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ। ২০১০ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ লাখ। অন্যদিকে দেশে প্রায় ১ কোটি ৬ লাখ মানুষ দিনমজুর হিসেবে কাজ করছেন, যাদের কোনো চাকরির নিরাপত্তা নেই। এর ওপর আবার মোট যুব শ্রমশক্তির ৯ দশমিক ১ শতাংশ বর্তমানে কর্মসংস্থানের অভাবে বেকার রয়েছে।
শুধু বেসরকারি বিনিয়োগ বা বেকারত্বই নয়, দীর্ঘমেয়াদে মূল্যস্ফীতিও বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে উদ্বেগ জানিয়েছে উন্নয়ন অন্বেষণ। প্রতিষ্ঠানটির মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ভোক্তা মূল্যসূচকের ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল থাকলেও দীর্ঘমেয়াদে তা বেড়ে যেতে পারে। মুদ্রানীতিতে উল্লিখিত এভারেজ কোর ইনফ্লেশনের (খাদ্য ও জ্বালানিবহির্ভূত) উচ্চহারকে (ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ) বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি সতর্ক করে বলেছে, ভবিষ্যতে যেকোনো অর্থনৈতিক অভিঘাতের ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে।
বহিঃখাতের সাম্প্রতিক অসন্তোষজনক কর্মদক্ষতার উল্লেখ করে উন্নয়ন অন্বেষণ জানিয়েছে, জুলাই-নভেম্বর মেয়াদে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ৭০ কোটি ডলারের ঘাটতি হয়েছে, যেখানে গত অর্থবছরের একই সময়ে ১৩০ কোটি ডলার উদ্বৃত্ত ছিল। প্রতিষ্ঠানটি চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি (৯ দশমিক ৫ শতাংশ), রফতানি আয়ে তুলনামূলক কম প্রবৃদ্ধি (৬ দশমিক ২ শতাংশ) ও রেমিট্যান্সপ্রবাহে ব্যাপক পতনকে (১৫ দশমিক ৬ শতাংশ) বহিঃখাতের বর্তমান অদক্ষতার কারণ হিসেবে দেখিয়েছে।
উন্নয়ন অন্বেষণ জানিয়েছে, ব্যাংকিং খাতে মোট ঋণের তুলনায় নন-পারফরমিং লোনের পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে, যা এ খাতে বিদ্যমান অদক্ষতার অপরিবর্তনীয়তাকে নির্দেশ করে।
http://www.dailysangram.com/post/270852-%E0%A6%8B%E0%A6%A3-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%83%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BF-%E0%A6%95%E0%A6%AE%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A7%9C%E0%A6%9B%E0%A7%87-%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0