৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, বুধবার, ১০:০৩

অভিযোগের পাহাড় ব্যাংকের বিরুদ্ধে

ব্যাংকে গ্রাহকেরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এ হয়রানির মাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত পাঁচ বছরে হয়রানির শিকার হয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন ১৯ হাজার ৪৫০ জন গ্রাহক। এর মধ্যে গত বছরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে অভিযোগ করেছেন চার হাজার ৫৩০ জন গ্রাহক, যা আগের বছরে ছিল তিন হাজার ৯৩০ জন। অভিযোগের এ হার এক বছরে বেড়েছে ১৫ দশমিক ২৭ ভাগ।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্টের (এফআইসিএসডি) বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রাহক হয়রানির শীর্ষে ১০ ব্যাংকের মধ্যে ছয়টিই সরকারি। তবে সম্মিলিতভাবে শীর্ষে রয়েছে সোনালী ব্যাংক। এই ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) লিখিত অভিযোগ করেছেন ৫৬৩ জন গ্রাহক। আর গ্রাহক হয়রানির দিক থেকে শীর্ষ ১০ ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক। পঞ্চম, সপ্তম ও নবম স্থানে রয়েছে সরকারি অপর তিন ব্যাংক যথাক্রমে জনতা, কৃষি ও রূপালী ব্যাংক। ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গত বছর বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে ২০৪ জন গ্রাহক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ মাসুম কামাল ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে মঙ্গলবার এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এ সময় ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান, ব্যাংকারদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান, এফআইসিএসডির মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাদ হোসেন, উপ মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ মামুনুল হক, সংশ্লিষ্ট বিভাগের সব কর্মকর্তা ও সুবিধাভোগী গ্রাহকেরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদনে গ্রাহক হয়রানির চিত্র দেখে গভর্নর ফজলে কবির বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গ্রাহক হয়রানি কোনোভাবেই ক্ষমা করা যাবে না। বিশেষ করে বিদেশ থেকে প্রবাসীরা কষ্টার্জিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে যদি হয়রানির শিকার হন, তা নিশ্চয় গুরুতর অনিয়ম। ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, কয়েক জন কর্মকর্তার কর্মকাণ্ডে ব্যাংকিং খাতে দুর্নাম ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হবে। সাধারণ মানুষের আস্থায় ভাঙন ধরলে ব্যাংকিং করা সম্ভব হবে না। এবিবির চেয়ারম্যান আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকে গ্রাহক হয়রানি বাড়ছে। তবে এটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১৬ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১৯ হাজার ৪৫০টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক দাবি করছে। এফআইসিএসডির ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, অভিযোগগুলোর মধ্যে টেলিফোনে সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত অভিযোগের সংখ্যা ছিল ১১১৬, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৩৫৮, কার্ড সংক্রান্ত ১৪৭, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ১২৭, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫৮, ট্রেড বিল সংক্রান্ত ৩১, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ৪ এবং বিবিধ অভিযোগ ছিল ৫৪৩টি। এ ছাড়া গত বছর লিখিতভাবে দুই হাজার ১৪৬টি অভিযোগ আসে। সাধারণ ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৪৪৬, ঋণ ও অগ্রিম সংক্রান্ত ৩৮৪, বৈদেশিক বিল সংক্রান্ত ২৯২, স্থানীয় বিল সংক্রান্ত ২০৪, কার্ড সংক্রান্ত ১৫৬, ব্যাংক গ্যারান্টি সংক্রান্ত ১১০, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ৫৭, মোবাইল ব্যাংকিং সংক্রান্ত ৫৬ এবং বিবিধ অভিযোগ ৪৪১টি।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/194103