১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, রবিবার, ৫:০৮

বিছনাকান্দি ট্র্যাজেডি: ৩ শ্রমিকের লাশ সরিয়ে ফেলা হয় রাতেই

রাতেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল ৩ শ্রমিকের লাশ। হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে স্বজনদের দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সযোগে পাঠিয়ে দেয়া হয়
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনায়। তার আগে স্থানীয় হাদারপাড় এলাকার লাশ তিনটি এনে রেখেছিল গর্তের মালিক বাছিত, কামাল ও জাহিদ। শ্রমিক সর্দারের মধ্যস্থতায় তারা প্রশাসনকে না জানিয়েই লাশ সরিয়ে ফেলে। সিলেটের শারপিন টিলার ট্র্যাজেডির পর বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারিতেও একই নাটকের অবতারণা ঘটিয়েছে পাথরখেকো গর্তের মালিকরা। আর লাশ সরানোর পর তারাও সটকে পড়ে। সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোতে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা হৃদয়বিদারক। শ্রমিকরা মারা যায় প্রতিনিয়তই। কিন্তু খবর পাওয়া যায় না। টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা হয় শ্রমিক পরিবারকে। আর টাকা পেয়ে শ্রমিক পরিবারও লাশ গোপনে বাড়ি নিয়ে দাফন করে ফেলে। এর আগে গত ২৩শে জানুয়ারি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের শারপিন টিলায় একইভাবে ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় নিহত হয় ৫ পাথর শ্রমিক। তবে আশার কথা হলো, শারপিন টিলা ট্র্যাজেডির পর পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থেকে যে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল তারা ইতিমধ্যে রিপোর্ট দাখিল করেছে। গেল সপ্তাহে সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে দাখিল করা তদন্ত রিপোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি বায়েছ আলমকে প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। এর আগে জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি শারপিন টিলায় ৪৭ পাথরখেকো সিন্ডিকেটের তালিকা প্রকাশ করে। আর এ রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। কোম্পানীগঞ্জের পাশের উপজেলা গোয়াইনঘাট। আর এ গোয়াইনঘাটেই অবস্থিত বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারি। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, শারপিন টিলার ঘটনার পরও বিছনাকান্দিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। স্থানীয়ভাবে থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ ঘোষিত যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চলে। একই সঙ্গে গর্তের ভেতর থেকে শ্রমিকদের দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছিল। এ কারণে গত শুক্রবার ভোররাতে গর্তের ভেতরে মাটিচাপায় নির্মমভাবে নিহত হয় তিন শ্রমিক। কোয়ারি এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, বিছনাকান্দি কোয়ারিতে ঘটনাটি ঘটেছে মধ্যরাতের পর। ওই সময় ওই এলাকায় ফেলুডার মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছিল। বাছিত মিয়া, কামাল আহমদ ও জাহিদের গর্তে কাজ করছিলেন মারা যাওয়া শ্রমিকরা। হঠা উপরের অংশ ধসে পড়ায় তারা মাটি ও পাথরচাপা পড়েন। ঘটনার একঘণ্টার মধ্যেই গর্তের মালিকরা সেখানে গিয়ে লাশ তিনটি উদ্ধার করে হাদারপাড়ে নিয়ে আসেন। এরপর রাতেই তারা শ্রমিক সর্দারের মধ্যস্থতায় বিষয়টি মীমাংসা করে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তিনজনের লাশ পাঠিয়ে দেয় সুনাগঞ্জ ও নেত্রকোনায়। ওই কোয়ারিতে নিহতরা হলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার গুলেরগাঁও গ্রামের নজির আলীর ছেলে জাকির হোসেন (২০), ওয়াতির আলীর ছেলে তুলা মিয়া (২৫) এবং নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি উপজেলার চানপুর গ্রামের পরিমল সরকার (২৬)। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সকালে সিলেটের গোয়াইনঘাট পুলিশ কোয়ারিতে গিয়ে কোনো লাশ পায়নি। তবে পুলিশ নিহত ৩ শ্রমিকের বাড়ির ঠিকানা পায়। এরপর তারা পুলিশ পাঠিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে দুটি ও নেত্রকোনা একটি লাশ উদ্ধার করে। গতকাল ওই ৩ শ্রমিকের লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা মানবজমিনকে বলেন, শ্রমিকরা নিহত হওয়ার পর লাশ গুম করাও অপরাধ। তাই পুলিশ গর্তের মালিকদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। তাদের গ্রেপ্তার করলে আরো তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানান তিনি। এদিকে ৩ শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। গোয়াইনঘাট থানার সাব-ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে গর্তের তিন মালিককে। এরা হলো বাছিত মিয়া, কামাল আহমদ ও জাহিদ মিয়া। এ ঘটনার এজাহার নামীয় দুই আসামিকে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। এরা হলো চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহর চৌধুরীপাড়া এলাকার মৃত সাবের হোসেনের ছেলে জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ও লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্য মকদ্দস এলাকার আহসান উল্লাহর ছেলে মো. জাহিদ হাসান মিলন (রাজু)। পেশায় তারা বিছনাকান্দি পাথর কোয়ারির ভাড়ায় চালিত বালু অপসারণ যন্ত্র ফেলুডারের চালক ও হেলপার।
http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=53212&cat=2/%E0%A7%A9-%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B6-%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AB%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE--%E0%A6%B9%E0%A7%9F-%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%87