১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, শনিবার, ৫:০০

গরু-খাসির গোশতের দাম বাড়ছেই সিটি করপোরেশন নীরব

প্রতি বছরই রোজা এলে গরু ও খাসির গোশতের দাম নির্ধারণ করে দেয় ঢাকা সিটি করপোরেশন। ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন ওই মোক্ষম সুযোগটির জন্য। করপোরেশনের একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে বৈধ উপায়েই! হঠাৎ বেড়ে যায় গোশতের দাম। রোজা শেষ হলেও গোশতের দাম আর কমে না। বাড়তি দামে গোশত বিক্রি অব্যাহত থাকে সারা বছর। এবারের পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। রমজানে নির্ধারণ করে দেয়া দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে গরু-ছাগলের গোশত বিক্রি হচ্ছে বাজারে। এ নিয়ে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কোনো মাথাব্যথাই নেই। এ নিয়ে জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও অনেকটা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন করপোরেশনের লোকেরা।
জানা যায়, গত রোজার আগ পর্যন্ত রাজধানীতে প্রতি কেজি গরুর গোশতের দাম নির্ধারণ করা ছিল ৩৮০ টাকা। রোজার শুরুর কয়েক দিন আগে গত বছরের ২৬ মে ঢাকা সিটি করপোরেশন গরুর গোশতের প্রতি কেজি মূল্য ৪০ টাকা বাড়িয়ে ৪২০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। একই সাথে খাসির গোশত ৫৭০ ও মহিষের গোশত ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু গোশত ব্যবসায়ীরা সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া দরে গোশত বিক্রি না করে বেশি দামে বিক্রি করছেন।
এ দিকে যে সিটি করপোরেশন গোশতের দাম বেঁধে দায় সেরেছে, তাদেরও কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই। গোশত ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রি করলেও কোনো পদক্ষেপ নেই সিটি করপোরেশনের। নেই কোনো বাজার তদারকি। তা ছাড়া রাজধানীর বাজারগুলোতে থাকা নির্ধারিত বোর্ডে প্রতিদিন পণ্য মূল্য লেখার কথা থাকলেও করা হয় না।
রাজধানীতে এখন গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৬ রকম দরে। তবে সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করা ৪২০ টাকায় এখন আর কোথাও গোশত পাওয়া যায় না। রাজধানীর কোনো বাজারে গরুর গোশত বিক্রি হয় ৪৪০ টাকা, কোথাও ৪৫০ টাকা, কোথাও ৪৮০ টাকায়। আর শুক্রবার এলে কোনো কোনো বাজারে এক কেজি গরুর গোশতের দাম ৫০০ টাকায়ও ওঠে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে গতকাল এ চিত্র দেখা যায়।
নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না খাসির গোশতও। সিটি করপোরেশনের মূল্য অনুযায়ী ৫৭০ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও বাজারে খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আবার কোনো কোনো বাজারে ৮০০ টাকাও রাখা হয় খাসির গোশতের দাম। তা ছাড়া মহিষের গোশতের কেজি ৪০০ টাকা নির্ধারণ করেছে সিটি করপোরেশন। যদিও রাজধানীতে অনেক মহিষ আসতে দেখা যায়, কিন্তু বাজারে কখনো মহিষের গোশতের দেখা মেলে না। তাই মহিষের গোশতের দাম নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথাও নেই।
গোশতের দাম বেশি রাখায় বাজারে মাঝে মধ্যেই ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে ঝগড়া হতে দেখা যায়। ক্রেতার বক্তব্য, কোনো সঙ্কট নেই, তার পরও বিক্রেতারা বাড়তি দামে গোশত বিক্রি করছেন। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের গোশত ক্রেতা হাবিবুর রহমান বলেন, সাধারণত রোজার মাস এলে বা ঈদের মতো কোনো বিশেষ সময় গোশতের দাম বাড়ে। এখন তো সে রকম কোনো উপলক্ষ নেই, তার পরও কেন এত চড়া দামে কিনতে হচ্ছে আমাদের।
বেশি দামে গোশত বিক্রি করার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতাদের যুক্তির অভাব নেই। কারওয়ান বাজারের গোশত বিক্রেতা মো: আনোয়ার বলেন, এখন গরু-খাসি এমনকি মুরগির দামও চড়া। এর প্রধান কারণ এখন পিকনিকের মওসুম, সেই সাথে বিয়েরও মওসুম। সুতরাং চাহিদা বেশি বলেও দাম বাড়তি। তা ছাড়া ভারত থেকে গরু আসা বন্ধ থাকায় তারও প্রভাব পড়েছে।
এ দিকে চালের বাজারে চড়া মূল্য অব্যাহত রয়েছে। বাজারে স্বর্ণা চাল ৪০-৪২ টাকা, পারিজা চাল ৪২-৪৪ টাকা, উন্নতমানের মিনিকেট ৫২-৫৪ টাকা, নি¤œমানের মিনিকেট ৫০-৫২ টাকা, বিআর আটাশ চাল ৪২-৪৪ টাকা, নি¤œ মানের নাজিরশাইল চাল ৪৬-৪৮ টাকা, উন্নতমানের নাজিরশাইল ৫৫-৬৮ টাকা, বাসমতি চাল ৫৬ টাকা, কাটারিভোগ চাল ৭৪-৭৬ টাকা ও পোলাও চাল ১০০ (পুরনো), নতুন ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা, সিলভার কার্প ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঙ্গাশ প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৮০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, মাগুর ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রকারভেদে চিংড়ি ৪০০ থেকে ৮০০ টাকায়, ইলিশ কেজিপ্রতি (মাঝারি) ১২০০ টাকা এবং দেড় কেজি ওজনের প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকায়।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি কাঁচামরিচ ৫০ টাকা, সাদা বেগুন ৫০ টাকা, কালো বেগুন ৪০ টাকা, শিম ৩৫-৪০ টাকা, টমেটো (ইন্ডিয়ান এলসি) ৪০ টাকা, শসা ৪০-৪৫ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ১৫ টাকা, চালকুমড়া ১৫ টাকা, কচুরলতি ৬০ টাকা, মুলা ৩০ টাকা ও শালগম ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নতুন সবজির মধ্যে প্রতি কেজি পটোল ৯০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, করল্লা ৫৫-৬০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া আলু ১৫ টাকা এবং পেঁপে ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ দিকে বাজারে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে চাল ও ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি। শীতের পুরো মওসুমে রাজধানীতে প্রায় সব ধরনের শীতকালীন সবজির দাম তুলনামূলক বেশি ছিল। এখন শীতের শেষ সময়ে কমছে সবজি দাম। অন্য দিকে সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে কমেছে রসুনের দাম। খুচরা বাজারে পণ্যটির দাম কেজিতে প্রায় ২০ টাকা করে কমেছে।
গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আমদানি করা মোটা রসুন ১৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যা ২১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এ ছাড়া গত সপ্তাহে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া চীনা রসুন গতকালের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা দরে। তবে দেশী নতুন রসুনের দাম কমেছে ১০ টাকা করে। গত সপ্তাহে কেজিপ্রতি ২০০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী রসুন গতকালের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকায়।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে দেশী নতুন রসুন আসায় কিছুটা দাম কমেছে। তবে এখন যে রসুন এসেছে তার বেশির ভাগই কাঁচা রসুন। আগামী সপ্তাহে এর দাম আরো কমতে পারে।
অন্যান্য মুদি পণ্যের মধ্যে কেজিপ্রতি দেশী মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, ভারতীয় মসুর ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল (দেশী) ১২০ টাকা, ভারতীয় মুগ ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ১৩৫ টাকা ও ছোলা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আদার দামও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া দেশী আদা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, চীনের আদা ৭০ টাকা, ক্যারালা ২০ টাকা কমে ৮০ টাকা, ভারতীয় আদা ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মানভেদে দেশী পেঁয়াজ কেজি প্রতি ২৮ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের মধ্যে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন নেই। প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ থেকে ১০৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর ৫ লিটারের বোতল ব্র্যান্ডভেদে ৫০০ থেকে ৫১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/194779