২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:২২

পাঁচ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে দেড়ঘন্টা

সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে বিজয় স্মরণির সামনে দাঁড়ায় রহমান আজিজ ব্যক্তিগত গাড়িতে। সঙ্গে আট বছরের সন্তান রুপম। বাইরে কখনও হালকা কখনও তীব্র বৃষ্টি। শুরুতে বাবা ছেলে গল্প করে, মোবাইলে গেম খেলে সময় কাটালেও ১৫ মিনিট পর দেখেন প্রায় সব গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবেই কেটে যায় একঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে গাড়ি গণভবনের সিগন্যালের ওপার থেকে এপার আসে। তার বাসা শ্যামলী, যাবেন সায়েন্সল্যাব। সেখান থেকে যে বাড়ি ফিরে যাবেন তেমন অবস্থাও নেই। বাইরে বৃষ্টি তাই নেমে হাঁটারও উপায় নেই। দেড় ঘণ্টা পর তিনি আসাদ গেটে পৌঁছান। পরে বাধ্য হয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দেন। জলযটও যানজটের কবলে পড়া মানুষের ২০ টাকার রিক্সা ভাড়া অনেক ক্ষেত্রে ৭০ টাকা এবং সিএনজি গাড়ির ভাড়া দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ পর্যন্ত গুনতে হয়েছে। 

কেবল রহমান আজিজই না, যারাই গতকাল রাজধানীতে পথে বের হয়েছেন তাদের যানজটে নাকাল হতে হয়েছে। রাস্তার কোথাও কোথাও একেবারে যানবাহন শূন্য ছিল। আবার কোথাও গাড়িগুলো এমনভাবে আটকে আছে যে নড়ার উপায় নেই।
মানিক মিয়া এভিনিউয়েও পানি থৈ থৈ করছে। ধানমন্ডি ১৬ নম্বর (পুরনো ২৭ নম্বর) এক কোমর পানি। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় রাস্তায় বন্ধ পড়ে আছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, প্রাইভেট কার।
কথা হয় সিএনজি চালক সোহরাব হোসেনের সঙ্গে। ১৬ নম্বরের মাথায় স্টার্টবন্ধ হয়ে গেছে তার সিএনজির। তিনি বলেন, ‘দেড়ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে ৩০ সেকেন্ডের পথ পাড়ি দিয়ে আসছি। এরপর স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। আজ সারাদিনের ইনকাম বন্ধ।’ মোহম্মদপুর বাবর রোড থেকে ওই সিএনজিতে উঠেছিলে বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত সালেকিন। তিনি বলেন, ‘অফিস মিস হয়েছে। এখন সিএনজি নষ্ট হওয়ায় বৃষ্টির মধ্যে কিভাবে কি করবো বিরক্ত লাগছে।’
তিনদিনের বৃষ্টিতে নাকাল নগরবাসী গতকাল বুধবার সকালে ভোগান্তিতে পড়ে। গত মঙ্গলবার রাতে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি না থাকলেও গতকাল বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির বেগ বেশি থাকায় রাস্তায় পানি জমতে শুরু করে। নগরীর প্রধান সড়কের মধ্যে মানিকমিয়া এভিনিউ, ধানমন্ডি ১৬ নম্বর থেকে শুরু করে শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা, সচিবালয়, পুরান ঢাকার বেশিরভাগ এলাকা পানির নিচে। আর সকালে অফিসে, স্কুলে বের হওয়া মানুষ শুরুতে গাড়ি পেলেও ১০টার পর সেভাবে রাস্তায় গাড়ি ছিল না। কারণ যানজটে রাস্তায় আটকে ছিল গাড়ি।
রাজধানীর ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজার পর্যন্ত এলাকা পানি জমে থাকায় এই এলাকায় সকালের দিকে গাড়ি ধীরে ধীরে এগুতে পারলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে থমকে যায়। সকাল ১০টা থেকে এখানে যাত্রবাড়ীগামী বাসে ঠায় বসে থাকা ষাটোর্ধ্ব রবিউল আলম বলেন, ‘অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাসে উঠেছি। এখন বাসের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজে বসে আছি। অতো শক্তি নাই যে হেঁটে রওনা দিব।’ আর এই সুযোগ নিয়ে রিকশা ও অটোরিকশা ভাড়া দ্বিগুণ তিনগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় মানুষকে হয়রানিতেও পড়তে হচ্ছে। সিএনজি চালক মোবারক আসাদগেট এলাকায় বলেন, ‘এটুকু আসছি দুই ঘণ্টায়। একেক ট্রিপে যদি চার ঘণ্টা লাগে জমার টাকা তুলবো কী, আর খাব কী? কেবল আমাদের হয়রানি কেউ দেখে না।’
এর দায় কেন যাত্রীর ওপর যাবে-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারণ এরকম বৃষ্টি বাদলায় সবাই গাড়ি চালায় না। তাই রাস্তায় গাড়িঘোড়া কম থাকে।
মিরপুর ১০ থেকে কাওরান বাজার এমনি সময়ে সিএনজি ভাড়া আড়াইশ টাকা হলেও আজ চারশ থেকে ৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে। ফার্মগেটের এপারে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তা পার হতে ৫০ টাকা দিতে হচ্ছে। এছাড়া যেকোনও দূরত্বের রিকশা ভাড়া তিনগুণ বেশি দিয়ে চলাচল করতে হওয়ায় বুধবার সকাল হয়রানিতেই কেটেছে নগরবাসীর।এদিকে নগরীতে জনপ্রিয় হয়ে উঠা উবারের যাত্রীরা বলেন, সকাল থেকেই উবারের কোনও রিকোয়েস্ট দিয়ে সার্ভিস অ্যাভেইলেভল পাওয়া যায়নি।’
উবার চালক রবিউল বলেন, ‘রাস্তায় পানি আর তীব্র যানজটের কারণে আজকে গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন অধিকাংশ ড্রাইভার।

http://www.dailysangram.com/post/293531-