টানা বর্ষণে জল ও যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী। বঙ্গভবনের পাশের রাস্তায় পানির মধ্যেই ঘোড়ার গাড়ি - যুগান্তর
২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:১৫

এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়

বৃষ্টিতে জলজট-যানজটে নাকাল নগরবাসী * সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত * ১৮টি খাল উদ্ধারে উদ্যোগ নেয়া হবে -স্থানীয় সরকারমন্ত্রী * ফুঁ দিলে তো পানি যাবে না। সব খাল বন্ধ। খালের ওপর পাঁচতলা বাড়ি : উত্তর মেয়র * খাল ও চারপাশের নদীর দখল এব

মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা বর্ষণে বুধবার রাজধানীজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ জলজটের। রাজপথের কোথাও হাঁটুপানি, আবার কোথাও কোমর পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় অসহনীয় যানজট। সবমিলিয়ে দিনভর চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন রাজধানীবাসী। এক ঘণ্টার দূরত্ব পাড়ি দিতে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে। গণপরিবহন কম থাকায় রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চলতে তিন থেকে চারগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে। সড়কে তীব্র যানজটে কর্মব্যস্ত বেশিরভাগ মানুষই বুধবার নির্ধারিত সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। শিক্ষার্থীরা যথাসময়ে পৌঁছাতে পারেননি নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে। এবারের বর্ষার মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। ঘনঘন জলজট, যানজটে অন্তহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। তারা ক্ষুব্ধ দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট সবার ওপর। সময়মতো কর না দিলে একের পর এক চিঠি আসে, হুমকি আসে মালামাল ক্রোকের। ঠিকই সময়মতো সব ধররেন কর, বিলসহ সরকারের পাওনা আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে জলজট ও যানজট নিরসনে নির্বিকার কর্তৃপক্ষ। এ সমস্যার সমাধান না করে নগর উন্নয়নের নামে কোন উদ্দেশ্যে শত শত কোটি টাকা অহেতুক ব্যয় করা হচ্ছে। সব অর্থই জলে যাচ্ছে, এমন ক্ষোভ জানিয়ে তাদের প্রশ্ন এ দুর্ভোগের শেষ কোথায়?
মঙ্গলবার রাত থেকে রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি শুরু হয়। যদিও রোববার থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। তবে বুধবার সকালে কয়েক ঘণ্টা বিরতিহীন ভারি বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় নগরীর প্রধান সড়ক, অলিগলি, এমনকি ফুটপাতও। সড়কে পানির ঢেউ খেলা দেখে মনে হয়েছে, এসব সড়ক নয়; একেকটি খাল। আবহাওয়া অধিদফতর বুধবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকায় ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। এ বৃষ্টিতে জলজট ও জলাবদ্ধতায় অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী ঢাকা।

দয়াগঞ্জে কোমর সমান পানিতে চলছে রিকশা
এ প্রসঙ্গে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী (এলজিআরডি) খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা ১৮টি খাল উদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করব। এটা বাস্তবায়িত করে আগামী বছরে ঢাকাবাসীকে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দেব। মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি প্রমিজ করছি। আগামী বছর, ঢাকায় জলাবদ্ধতা দেখবেন না।’

বুধবার রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন- খাল দখল, খাল ভরাট ও অকেজো ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে। আর রাজধানীর জলাবদ্ধতার সমস্যা নিরসন করতে হলে সমন্বিতভাবে কাজ করা দরকার বলে প্রয়োজন অনুভব করেন এ মেয়র। এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র আনিসুল হক বলেন, জলাবদ্ধতা এমন একটি সমস্যা, এটা ফুঁ দিলেতো যাবে না। কেননা, সব খাল বন্ধ, খালের ওপর পাঁচতলা বাড়ি হয়েছে।

বুধবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনও রাজধানীর জলাবদ্ধতার চিত্র পরিদর্শনে বের হন। এ সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রধান দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। তারপরও আমরা ডিএসসিসির পক্ষ থেকে সহযোগিতা করছি। এক প্রশ্নের উত্তরে মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, ঢাকার পানি নিষ্কাশনের বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করতে ঢাকা ওয়াসাকে সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত করতে হবে। নইলে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান করা কঠিন হবে। এ সময় তিনি বলেন, ঢাকার খাল, চারপাশের নদী দখল ও খাল দখল এবং ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে দুর্ভোগ হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বুধবার সকাল সকাল সাতটা থেকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও ধানমণ্ডি এলাকার সড়কগুলোয় জলজটের কারণে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ কারণে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ঠিক সময়ে স্কুলে পৌঁছাতে পারেনি। ধানমণ্ডি এলাকার বাসিন্দা মাহমুদুল হাসান জানান, ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে সকাল সাতটা থেকেই গাড়ি চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। সাত মসজিদ সড়কসহ আশপাশের এলাকার রাস্তাগুলোয় জলজট ও যানজটে অচল হয়ে পড়ে। মোটরসাইকেলে করেও মাত্র চার কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দিতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগে যায়। সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া এভিনিউয়ের অনেকটা এলাকাজুড়ে পানি জমে যাওয়ায় মিরপুর, গাবতলী ও মোহাম্মদপুর থেকে আসা ব্যক্তিগত গাড়িগুলো ওই সড়কে না গিয়ে সোজা চলাচল করে। এ কারণে মিরপুর সড়কে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় আসাদগেট এলাকায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। গ্রিন রোড এলাকার অনেক সড়কে দুই ফুটের ওপরে পানি জমে যায়। ফলে হেঁটে চলাচল করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এছাড়া মিরপুর, বাড্ডা, রাজারবাগ, পুরান ঢাকাসহ অধিকাংশ এলাকায় দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত পানি জমে যায়। সকাল ১০টার পর থেকে যানজটে স্থবির ছিল বিমানবন্দর-বনানী সড়কে। শেওড়া বাসস্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামার জন্য বাসগুলো এলোমেলোভাবে থামানোয় খিলক্ষেত থেকে শেওড়া পর্যন্ত যানজট ছিল। উন্নয়ন কাজ চলায় যমুনা ফিউচার পার্কের পর থেকে প্রগতি সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায় যানজট থাকায় এর চাপ পড়ে আশপাশের অন্য সড়কেও। খিলক্ষেত ফ্লাইওভার থেকে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। মেরুল বাড্ডা থেকে পল্টন মোড়ে আসতে অন্য সময় ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা লাগলেও বুধবার দুই থেকে তিন ঘণ্টা লেগেছে। রামপুরা ব্রিজের পর থেকে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত প্রায় পুরো সড়কে বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকায় যান চলাচল হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক। মূল সড়কের বেশিরভাগ অংশে পানি জমে থাকায় যানবাহনগুলোকে থেমে থেমে চলতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও দুর্ঘটনায় ঘটেছে।
ধানমণ্ডির ২৭ নম্বরে অসহনীয় যানজট
মহাখালীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আনোয়ার হোসেন সকালে পান্থপথের বাসা থেকে অফিসে পৌঁছেছেন সোয়া দুই ঘণ্টায়। স্বাভাবিক সময়ে এক ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছানো যায়। এই ভুক্তভোগী বলেন, ভারি বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানবাহন অন্য দিনের তুলনায় কম। ফলে গাড়ি পেতেই সবার সমস্যা হচ্ছে। তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে জলাবদ্ধতার কারণে যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময়। ফার্মগেট বাসস্ট্যান্ড থেকে বিজয় সরণির মোড় পর্যন্ত এক কিলোমিটার যেতেই তার ৫৫ মিনিট সময় লাগে।

রামপুরার বাসিন্দা ইকবাল হোসেন বলেন, বিপদ হয়েছে অফিসযাত্রীদের। রাস্তায় গাড়ি থমকে রয়েছে। তার ওপর রাস্তা জুড়ে উন্নয়নের বিড়ম্বনা। কাদাপানি মাড়িয়ে সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে আরও দেখা গেছে, ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজের জন্য মালিবাগের পুরো এলাকাতেই নাজুক পরিস্থিতি। এর মধ্যে কোথাও কোথাও হাঁটুপানি জমে থাকতে দেখা গেছে। শান্তিনগরের অবস্থাও একই রকম। গুলিস্তানের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, মেরুল বাড্ডা থেকে পল্টনে যাওয়ার জন্য সকাল ৮টা থেকে পৌনে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো বাসে উঠতে পারেননি। ইস্কাটন, পান্থপথ, রাজাবাজার ও রায়ের বাজারে ভেতরের প্রায় সব গলিতে জমে আছে পানি। স্থানীয় বাসিন্দাদের বাসা থেকে বের হওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও পানি ঢুকেছে বাড়ির নিচতলাতেও।

এছাড়াও মহানগরীর নিউমার্কেট, নিমতলী এলাকা, আলাউদ্দিন রোড, নাজিম উদ্দিন রোড, জুরাইন, দনিয়া, শ্যামপুর, যাত্রাবাড়ী, রাজারবাগ, মিরপুরের কালশি, দক্ষিণ পাইকপাড়ার সড়কগুলোয় তীব্র জলজটের সৃষ্টি করে। এ কারণে ওই সব এলাকার সড়কে তীব্র যানজটেরও সৃষ্টি হয়। এর ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে কয়েক লাখ নগরবাসীকে।

যুগান্তরের কামরাঙ্গীরচর প্রতিনিধি জানান, বুধবারের বৃষ্টিতে কামরাঙ্গীরচরের অলিগলি তলিয়ে যায়। কয়েকটি প্রধান সড়কেও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। এতে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে। ফলে ওই এলাকায় বসবাসকারীরা বাইরে চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বড়গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহেল যুগান্তরকে বলেন, কামরাঙ্গীরচরে বিগত দুই বছরে বেশ উন্নয়ন কাজ হয়েছে সত্য। এতে বেশির ভাগ প্রধান সড়ক সংস্কার করা হলেও অলিগলির বেহাল দশা। সব এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও গড়ে ওঠেনি। এ কারণে ভারি বৃষ্টি হলে রাজধানীর অন্যান্য এলাকার মতো কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারাও ভোগান্তির শিকার হন।

সচিবালয়েও জলাবদ্ধতা : টানা বৃষ্টিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানি জমে বুধবার সকালে পুরো সচিবালয়ই কার্যত পানিবন্দি হয়ে পড়ে। এছাড়া জলাবদ্ধতার কারণে সাত নম্বর ভবনের একটি লিফটও বন্ধ ছিল। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের। পানি নিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়।

সরেজমিন সকালে দেখা গেছে, সচিবালয়ের প্রধান গেটের বাইরে ও ভেতরে হাঁটুপানি জমে রয়েছে। এতে বাসে বা অন্য কোনো গাড়ি করে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দর্শনার্থীরা জুতা-মোজা পরে এলেও সচিবালয়ে প্রবেশের সময় জুতা-মোজা খুলে হাতে করে নিয়ে ঢুকেছেন। শুধু তাই নয়, এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে। তবে অনেককেই সংযোগ বারান্দা ব্যবহার করে এক ভবন থেকে আরেক ভবনে যেতে দেখা গেছে। ৭ নম্বর ভবনের দক্ষিণ দিকের লিফটটি বন্ধ ছিল। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে লিফটের নিচের অংশে যে স্থানে যন্ত্রাংশ থাকে ওই স্থানে চুয়ে চুয়ে পানি জমে যায়। ফলে লিফটটি বন্ধ রাখা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লেই এ লিফটটি বন্ধ রাখতে হয়। তবে বৃষ্টি শেষ হয়ে গেলে এটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না।

সচিবালয়ে প্রবেশের জন্য দর্শনার্থীদেও যেখানে পাস দেয়া হয় সেখানে শাহজাহানপুর থেকে আসা দর্শনার্থী রাশিদুল হকের সঙ্গে কথা হয়। তিনি যুগান্তরকে বলেন, একটি কাজে তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যাবেন। বাসা থেকে বের হয়ে রিকশাযোগে সচিবালয়ে এসেছেন। জুতা পরে এসেছিলেন। কিন্তু সচিবালয়ের গেটে এসেই তাকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে প্রবেশ করতে হল। তিনি বলেন, ‘পানি তো হবেই। তাই বলে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের প্রবেশদ্বারেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে, এটা কাম্য নয়।’
পুরানা পল্টনে প্রধান সড়কে নৌকায় যাতায়াত
সচিবালয় ঘুরে আরও দেখা গেছে, গাড়ি রাখার এ স্থানটিতে হাঁটুপানি জমে আছে। সচিবালয়ে জলাবদ্ধতার বিষয়ে গণপূর্ত অধিদফতর জানিয়েছে, সচিবালয়ের আশপাশের সড়কগুলো থেকে পানি নিষ্কাশনের পথ নেই। এ কারণে সচিবালয়ের পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় সমন্বয় না থাকায় বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করলেও কাক্সিক্ষত সাফল্য আসছে না। ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ নানাভাবে জড়িত রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি আবাসন খাতও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। দায়িত্বপ্রাপ্ত এসব সংস্থার মধ্যে কার্যকর কোনো সমন্বয় না থাকায় দিন দিন ঢাকার ড্রেনেজ সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে।

আরও জানান, সিটি কর্পোরেশন আওতাভুক্ত ১২৭.৬৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম সরাসরি পরিচালনা করছে ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন। এর মধ্যে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ লাইন রয়েছে দুই হাজার কিলোমিটারের কিছু বেশি। আর ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ লাইন রয়েছে ৩৭০ কিলোমিটার। যদিও ঢাকা ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকা ৪০০ বর্গকিলোমিটার। সব এলাকায় ঢাকা ওয়াসার ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তুলতে পারেনি। অন্যদিকে রাজধানীতে ঢাকা জেলা প্রশাসন মালিকানাধীন ২৬টি খাল রয়েছে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে ঢাকা ওয়াসার। দখল-ভরাটে এসব খালের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এর মধ্যে মাণ্ডা, হাজারীবাগ, কসাইবাড়ী, সাংবাদিক কলোনি ও বাইশটেকি খাল ব্যক্তিমালিকানায় রেকর্ড হয়ে রয়েছে। অভিযোগ মিলেছে- জাল-জালিয়াত চক্র এটা করেছে। ওইসব খাল দখলমুক্ত করা জেলা প্রশাসন, ঢাকা ওয়াসা এবং ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। ব্যক্তিমালিকানায় চলে যাওয়া খালগুলো টিকিয়ে রাখতে ঢাকা ওয়াসা খালের জমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও প্রকল্প অনুমোদন না পাওয়ায় সেসব উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসন মালিকানাধীন খালগুলোও দখল ও ভরাটের কবলে হারিয়ে যাচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন খালগুলো উদ্ধারের প্রচেষ্টা চালালেও রহস্যজনক কারণে সেসব থমকে গেছে।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/07/27/143227/