২৭ জুলাই ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:০২

বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি তদন্তেই ৪ বছর পার

আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনার চার বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত জড়িতদের কারও শাস্তি হয়নি। মামলার প্রক্রিয়ায় পার হয়েছে এই চার বছর। ব্যাংকের ঋণ আদায়ে ৫৬টি মামলা করা হয় রাজধানীর বিভিন্ন থানায়। আরো ৫টি মামলা করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। মামলাগুলোর তদন্ত চলছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হয়নি। দ্রুতই মামলাগুলো শেষ করা হবে বলে দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে। তবে গত আড়াই বছরে সামগ্রিক ঋণের ১২০০ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ আদায় করতে পেরেছে বলে বেসিক ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকের তিনটি শাখা থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ অনিয়মের অভিযোগ উঠে তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে। পরে অনুসন্ধানে নামে দুদক। তদন্তের পর দুদক ১৮টি মামলা করলেও বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি। যদিও ব্যাংকটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগের আঙুল ছিল তৎকালীন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। ঋণ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলে ২০১৪ সালে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলামকে অপসারণ করার পর চাপের মুখে থাকা বাচ্চু পদত্যাগ করেন। তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো আইনি পদক্ষেপ। ব্যাংকের ৭ কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়।
সূত্র মতে, বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি ছিল এক আলোচিত ঘটনা। ব্যাংকের দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের নামে আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এই ঘটনায় ২০১৫ সালের রাজধানীর গুলশান থানায় ৮টি, মতিঝিল থানায় ৫টি এবং পল্টন থানায় ৫টি মামলা করে দুদক। সব মিলে ৫৬টি মামলা করে সংস্থাটি। এখন রায় হয়নি। তদন্ত চলমান। কবে শেষ হবে তা বলা মুশকিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, তদন্ত চলছে। যত দ্রুত মামলগুলো শেষ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ঋণের নামে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় এক সময়ে লাভে থাকা ব্যাংকটি লোকসানে পড়ে। ২০১৪ সালে বেসিকের লোকসানের পরিমাণ ছিল ৯৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। পরের বছর তা আরো বেড়ে হয় ২৫৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা। ঋণ কেলেঙ্কারিতে লোকসানে পড়ার পর ব্যাংকটির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় সরকার। সমালোচনার মুখেও তিন দফায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা মূলধন দেয়া হয়। চলতি অর্থবছরেও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের জন্য যে ২ হাজার কোটি টাকা যোগান দিচ্ছে সরকার, সেখান থেকেও একটি বড় অংশ পাবে বেসিক ব্যাংক।
ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক খোন্দকার মো. ইকবাল জানান, আড়াই বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছেন তারা। আগামীতে এই পরিমাণ আরো বাড়বে। তিনি বলেন, মোট আমানত ও ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং খেলাপি ঋণ আদায়ের মাধ্যমে আমরা ব্যাংকের পরিস্থিতি বদলাতে সক্ষম হয়েছি। এর পাশাপাশি পরিচালন ব্যয়ও কমানো হয়েছে। মো. ইকবাল বলেন, ঋণ আদায়ের কারণে লোকসান থেকে বেরিয়ে এসে লাভের মুখ দেখেছে ব্যাংকটি। চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ১৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকটি। ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটির পরিচালন লোকসান ছিল ৪৬ কোটি টাকা। বেসিক ব্যাংকের এই ঘুরে দাঁড়ানো শুরু গত বছরের শেষ প্রান্তিক থেকেই। ২০১৬ সাল শেষে রাষ্ট্রায়াত্ত খাতের এই ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
বেসিক ব্যাংক সূত্র জানায়, চলতি বছর জুন মাস শেষে বেসিক ব্যাংকের মোট আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। একই সময়ে ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, গত বছর একই সময়ে ব্যাংকটির মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা।
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এক বার বলেছিল, সরকারি মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক এখনও ঝুঁকিমুক্ত নয়। কমিটির এক পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়, বেসিক ব্যাংকের সব সূচকই নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। মূলধন ও প্রভিশন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকটি এখনও আর্থিক ঝুঁকিতে রয়েছে। সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে না পারলে ব্যাংকটিতে নতুন করে সংকট সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিল সংসদীয় কমিটি। কমিটির তৈরি করা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে এই ব্যাংকটিতে নানা ধরনের অনিয়মের কারণে সব সূচকের অবনতি হয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়ার পাশাপাশি মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে গেছে।
ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন এ মজিদ বলেন, খেলাপি ঋণ বাড়লেও বেসিক ব্যাংক আগের চেয়ে কিছুটা ভালো চলছে। আগের কমিটির রেখে যাওয়া সমস্যাগুলো ঠিক করতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আগের প্রশাসন নামসর্বস্ব বিভিন্ন কোম্পানিকে ঋণ দেয়ার কারণে খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে। তবে অচিরেই এই ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন তিনি।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=75914