১৭ জুলাই ২০১৭, সোমবার, ৭:৫৫

উত্তরাঞ্চলের কৃষকের স্বপ্ন পানির নিচে

উত্তরের কৃষকের স্বপ্ন এখন হাবুডুবু খাচ্ছে পানিতে। বন্যায় উত্তরের ৭ জেলা সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রামে ২২৪০৭ হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা বগুড়ায় ২৪ হাজার ২৫, সিরাজগঞ্জ জেলায় ৬৫ হাজার ৩০৯ জন। রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলা মিলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে। টাকার অঙ্কে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০ কোটি। এসব জমিতে আউশ ধান, পাট, আমন বীজতলা, রোপা আমন, বোনা আমন, শাক-সবজি, মরিচ, আখ, কলার আবাদ ছিলো। কৃষি অফিস বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ফসলের জমির পরিসংখ্যান তৈরি করতে পারলেও পানি সরে না যাওয়া পর্যন্ত ফসলের ক্ষতির হিসাব করতে পারছে না।

বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে উজানের পাহাড়ি ঢল এবং ভারত তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেইট খুলে দেয়ায় যমুনা নদীর পানি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এখনো যমুনার পানি বগুড়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৯, গাইবান্ধা পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র বিপদসীমার ৪২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরের জেলাগুলো ঘুরে দেখা গেছে এসব এলাকার ফসলি জমি এখনো পানির নিচে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় অগ্রিম কর্তন করেছে। বিশেষ করে কিছু কিছু এলাকার কৃষক পানিতে পচে নষ্ট হওয়ার ভয়ে পরিপক্ব হওয়ার আগেই পাট কেটে ফেলেছে। এতে যে পরিমাণ ফলন হওয়ার কথা তার অর্ধেক কিংবা আরো কম হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে এবার পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কঠিন হয়ে পড়বে। সরজমিনে গাইবান্ধার ফুলছড়ির সাঘাটা এলাকা বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কুতুবপুর, কামালপুর, চন্দনবাইশা ও কর্ণিবাড়ি, সোনাতলা উপজেলার মধুপর, তেকানি চুকাইনগর, পাকুল্লা, ধুনটের ভাণ্ডারবাড়ী, গোসাইবাড়ী ইউনিয়ন ঘুরে সেখানকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা চলতি বন্যায় একদিকে নিজেদের থাকা-খাওয়ার চিন্তায় আছে অপর দিকে মাঠে তাদের আবাদি ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলার চরনামাপাড়া এলাকার চাষি ফজলুল হক, সাহেদ আলী, দিঘাপাড়ার ইফাজ উদ্দিন, আলফাজ জানান, প্রতি বছরের মতো এবারো তাদের জমিতে পাট চাষ করা হয়েছিলো। জুলাইয়ের শেষের দিকে অথবা আগস্টের প্রথম দিকে তাদের ফসল ঘরে উঠতো। অসময়ে বন্যা এসে তাদের পাটের জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি এখনো ঠিকমতো না কমায় পাট গাছের মাথা জাগেনি। তারা আশঙ্কার কথা প্রকাশ করে জানান, দুই তিনদিনের মধ্যে জমি থেকে পানি সরে না গেলে হয়তো তাদের আবাদি এসব সফল একেবারেই নষ্ট হয়ে যাবে।
বন্যাদুর্গত এলাকার জন্য বেশি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমন বীজতলা। আগামী আমন মৌসুমে বীজ সংকটের সম্ভাবনা এখনি দেখা দিয়েছে। যদিও কৃষি বিভাগ বলছে মৌসুম শুরুর আগেই আবারো বীজ তৈরি সম্ভব। তারপরে যারা আগাম আমন চাষ করে তারা মৌসুমের শুরুই রোপণ করতে পারবে না।
এদিকে শাক-সবজিসহ কাঁচামরিচের যেসব জমিতে পানি উঠেছে সেসব জমির ফসল ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে। এতে বাজারে সবজিসহ কাঁচামরিচের সংকট তৈরি হতে পারে। তবে সেই সংকট স্থানীয় বাজারে হলেও সামগ্রিক ভাবে তেমন প্রভাব পড়বে না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ আলম জানান, চলতি বন্যায় বীজ তলার ক্ষতি বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকদের উঁচু জায়গায় বীজতলা তৈরির জন্য শুরু থেকেই পরমর্শ দিয়ে এসেছি। চলমান বন্যায় ফসলের ক্ষতি পূরণের জন্য কৃষি বিভাগ মাঠের চাষিদের সার্বক্ষণিক বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানান, এবার বন্যা আগাম হওয়ায় মাঠে খুব বেশি ফসল ছিলো না। এই বন্যায় জমিতে পর্যাপ্ত পলি জমবে। এতে জমির উর্বরতা শক্তি কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সাহা জানান, বগুড়ায় বন্যাকবলিত তিন উপজেলায় ৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির ফসল একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এতে শুধুমাত্র বগুড়ায় ফসলের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার বেশি হবে। তিনি আরো জানান, বন্যা পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবে কৃষকদের মাঝে আমনের বীজ, চারা এবং পলিব্যাগে বিভিন্ন সবজির চারা বিতরণ করা হবে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=74373&cat=6/