২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৫৬

তীব্র যানজট : বিপর্যস্ত রাজধানীর জনজীবন

ভেঙে পড়েছে রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থা

দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে রাজধানীর ট্রাফিকব্যবস্থা। দীর্ঘ যানজটে আটকে থেকে রাজধানীর বাসিন্দাদের পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। কোথাও কোথাও পানি জমে থাকার কারণে মানুষকে আরো বিপাকে পড়তে হয়। গুনতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর জনজীবন অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। বৃষ্টির কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হয়েই পড়েন চরম ভোগান্তির মধ্যে। রাজধানীর শ্যামলীর বাসিন্দা কায়কোবাদ জানান, জরুরি কাজ ছিল বলেই সকালে বাসা থেকে বের হতে হয়েছে। বের হয়েই চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। সকাল ৯টার দিকে বের হয়ে বাসার সামনেই আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। কোনো রিকশা নেই। পড়ে একটি রিকশা কোনোমতে পেয়েছেন কিন্তু ভাড়া হাঁকায় কয়েক গুণ। অবশেষে সেই ভাড়া দিয়েই শ্যামলী সিনেমা হলের সামনে যান। বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘক্ষণ। ততক্ষণে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে ভিজে গেছে শরীর।
গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানজট দেখা যায়। দিন যত বাড়তে থাকে যানজট ততই বাড়ে। একপর্যায়ে অলিগলিতেও যানজট ছড়িয়ে পড়ে। গতকাল দুপুরের দিকে উত্তরা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে আসতে সময় লেগেছে তিন ঘণ্টা। জানালেন আব্দুল্লাহপুরের বাসিন্দা আরিফ। তিনি বলেন, গাড়ি যেন আগাচ্ছিল না। মহাখালীতে ছিল তীব্র যানজট। কাকলী থেকে মহাখালী আসতেই প্রায় সোয়া ঘণ্টা লেগেছে।
সকাল ১০টার পর থেকেই যানজট অসহীয় রূপ ধারণ করে। ভুক্তভোগীরা জানান, রাজধানীর পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, টিকাটুলি, সদরঘাট থেকে গুলিস্তান, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা, শাহবাগ, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, পুরো মিরপুর রোড, সাত মসজিদ রোড, ঝিগাতলা, ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা, বাংলামোটর, ফার্মগেট, নাবিস্ক থেকে তেজগাঁও সাতরাস্তা ও মহাখালী থেকে ফার্মগেটসহ রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাটই গতকাল অবরুদ্ধ ছিল। এমন অনেক এলাকা ছিল যেখানে রাস্তাঘাটে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। বাসা থেকে বের হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে যেখানে ১০-১৫ মিনিট লাগত গতকাল সেখানে লেগেছে দুই ঘণ্টারও বেশি। বিকেলে মানুষ যখন অফিস-আদালত ছুটির পরে বাসায় ফিরছিলেন তখন যানজটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বাবুল নামের এক বাসযাত্রী জানান, মতিঝিল থেকে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত যেতে তার লেগেছে দেড় ঘণ্টা। বৃষ্টির কারণে হেঁটে যাবেন তারও কোনো উপায় ছিল না। অপর এক যাত্রী নয়ন বলেন, বৃষ্টির কারণে রিকশাভাড়া দিতে হয়েছে কয়েক গুণ। শাফী নামের এক ভুক্তভোগী জানান, সেগুনবাগিচা থেকে নয়াপল্টনের ভাড়া অতিরিক্ত হলে ২০ টাকা। কিন্তু গতকাল আদায় করা হয়েছে ৭০ টাকা।
এ দিকে তীব্র যাজনটের কারণে পথচারীদের গাড়ি পেতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। গতকাল বিকেল ৪টার দিকে পল্টন মোড়ে দেখা যায় কয়েক হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন গাড়ির জন্য। পল্টন মোড়ে রিয়াজ নামের এক ভুক্তভোগী জানান, দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছেন, কিন্তু গাড়ি মিলছে না। অনেককে বৃষ্টির মধ্যে ভিজতে দেখা যায়। মিলন নামের অপর এক যাত্রী জানান, সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশাও পাওয়া যাচ্ছে না। বিকেলে মতিঝিলেও দেখা যায় একই চিত্র। হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন বাসের জন্য। মতিঝিলে হারুন নামের এক ড্রাইভার জানান, মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুরে একটি ট্রিপ নিয়ে যেতে লাগে তিন ঘণ্টার ওপরে। গাড়ি রাস্তায় আটকে আছে বলেই যাত্রীরা সঠিক সময়ে গাড়ি পাচ্ছেন না।
এ দিকে গতকাল বেশকিছু এলাকায় দেখা যায় পানি জমে আছে। রাজধানীর মতিঝিল টিঅ্যান্ডটি কলোনি ও নয়াপল্টন এলাকায় দেখা যায় রাস্তায় হাঁটু পানিতে মানুষ হাঁটছেন। সেখানে রাজু নামের এক পথচারী জানান, কাকরাইল থেকে রাজারবাগ পর্যন্ত রিকশা-ভ্যানে পানি পার করা হচ্ছে। প্রতিজন নিচ্ছে ৪০ টাকা করে। এতটুকু জায়গা এত টাকা ভাড়া দিয়ে পার হতে হবে কল্পনাও করা যায় না।
রাজধানীর ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বলা হয়েছে, টানা বৃষ্টির কারণে রাজধানীর এই তীব্র যানজট। কন্ট্রোল রুম থেকে বলা হয়, সোমবার রাত থেকেই টানা বৃষ্টি হচ্ছে। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি থামলেও তা দীর্ঘস্থায়ী নয়। যে কারণে কোনো কোনো এলাকায় পানি জমে গেছে। ওই সব এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আবার বৃষ্টির কারণে যানবাহনের গতি কমে যায়। যে কারণেও এই যানজট।

 

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/238924