২৬ জুলাই ২০১৭, বুধবার, ১১:৪৫

৫৭ ধারা বিতর্ক

তথ্যপ্রযুক্তি আইন মামলায় ১৬ সাংবাদিক আসামি

৫৭ ধারার অপরাধ স্পষ্ট করা হবে -আইনমন্ত্রী আনিসুল হক : এ আইন ব্যাপকহারে অপব্যবহার হচ্ছে -ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ : বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ -এড. খন্দকার মাহবুব হোসেন : ওই ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক -মনজুরুল আহসান বুলবুল : মত প্রকাশের স্বাধীনতা হনন -ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া
মালেক মল্লিক : ‘আইনের জন্য মানুষ না মানুষের জন্য আইন’ প্রশ্নটি সর্বত্রই উঠেছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০১৩-এর ৫৭ ধারার জন্য মিডিয়া; নাকি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য বিতর্কিত এই ধারা? সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক ধারাটি অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সংবিধানে ৩৯ অনুচ্ছেদে দেশের সব নাগরিকের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। অথচ এই ধারায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে অপছন্দের ব্যাক্তিকে দমন-পীড়নের দরজা খুলে দেয়া হয়েছে। এতে মানুষ আতঙ্কিক। সাধারণ মানুষ মত প্রকাশের স্বাধীনতা খর্বকারী বিতর্কিত ধারাটি বাতিলের দাবিতে সোচ্চার। ধারাটি বাতিলের দাবি করছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব), সম্পাদক পরিষদ, সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, রেডিও-টিভির সর্বস্তরের সাংবাদিক এ ধারা বাতিলের দাবিতে সোচ্চার। এ প্রসঙ্গে আইন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিষযটি নিয়ে আলোচনা চলছে। সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ৫৭ ধারার আইনের কতগুলো বিষয় সংশোধন করা উচিত। এটা এখন ব্যাপকহারে অপব্যহার হচ্ছে। ৫৭ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা তো বাস্তবেই আমরা দেখছি।
‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়/ ওরা কথায় কথায় শিকল পরায় আমার হাতে-পায়ে’ বাউল শিল্পী আব্দুল লতিফের এ গানটি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের মুখে মুখে শোনা যেত। ’৫২ ভাষা আন্দোলন পরবর্তীতে ৭১ মুক্তিযুদ্ধ এমনকি ’৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনেও হাটে-মাঠে-ঘাটে গানটি শোনা যেত মানুষের মুখে মুখে। ওই গানটির মতোই তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০১৩-এর ‘৫৭ ধারা’ নিয়ে সারাদেশে চলছে বিতর্ক। এ আইনটি যেন হয়ে গেছে সবার ‘হৃৎকম্পন’। ক্ষমতাসীনরা এ আইনের মাধ্যমে মিডিয়া এবং মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়; অন্যদিকে মিডিয়া, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষ চায় বিতর্কিত ধারাটি বাতিল করে চিন্তা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা। মিডিয়া ব্যাক্তিত্বদের বিরোধিতা উপেক্ষা করে আইনটি কার্যকর করা হয়েছে। অতপর আইনটি অপপ্রয়োগের অভিযোগ উঠায় সর্বমহলে আইনটি বাতিলের দাবি উঠেছে। শুধু মিডিয়ার স্টেক হোল্ডাররাই নয়; দেশের প্রখ্যাত আইনজীবী, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা আইনটি বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। চতুমূখী দাবির মুখে আইনমন্ত্রী বেশ কয়েক বার আইনটি কখনো সংশোধন কখনো বাতিল করা হবে বলেও প্রতিশ্রæতি দেন। কিন্তু তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ২৪ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে তথ্যপ্রযুক্তি আইন-২০১৩-এর ৫৭ ধারা রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ হিসেবে অবিহিত করেন। তিনি বলেন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ও বাক-স্বাধীনতা ছাড়া একটি রাষ্ট্র আগাতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী এখন সব কিছুই বিদ্যমান রয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের রক্ষাকবচ থাকতে হবে।
গত এক বছরে সারা দেশে অন্তত ৫০টি মামলা হয়েছে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে। অভিযোগ রয়েছে এর অধিকাংশই হয়রানিমূলক এবং প্রতিহিংসা পরায়ন। চলতি বছরেও অন্তত ৩৫টি মামলা হয়। এর মধ্যে আসামী হয়েছে ১৬ জন সাংবাদিক। এছাড়াও আসামি হয়েছেন ছাত্র, শিক্ষক ও মৎসজীবী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশার মানুষ। অনেক আবার জেলও খাটছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আইনজীবী বলেন, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার ভয়ংকর এই ৭টি শব্দবন্ধ আছে। সেগুলো হলো: মিথ্যা ও অশ্লীল, নীতিভ্রষ্টতা, মানহানি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি। যেকোনো নিরীহ কথাকেই এসব বিমূর্ত অভিযোগের ফাঁকে ফেলা সম্ভব। সবচেয়ে মারাত্মক হলো, এই ৭টি অপরাধ আদৌ করা হয়েছে কি না, আইনে তা নির্ধারণের ভার দেওয়া হয়েছে পুলিশকে। পুলিশই অভিযোগ শুনে মামলা নিয়ে গ্রেফতারী পরোয়ানা পাঠাতে পারবে। তাহলে এই পুলিশ সদস্যকে একাধারে সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ, ভাষাবিদ, জনপ্রশাসনবিদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ধর্মবিশারদ এবং অপরাধ বিশেষজ্ঞ হতে হবে। সেটা কি আমাদের পুলিশ বাহিনীর পক্ষে সম্ভব?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল আইন মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ইনকিলাবকে বলেন, বিষযটি নিয়ে আলোচনা চলছে। ৫৭ ধারা একটি অপরাধ; এটা সাইবার অপরাধ। এতদিন ৫৭ ধারা অপরাধের বিষয়ে স্পষ্ট ছিল না। আমাদের কাজ চলছে দ্রæত সময়ের মধ্যে ৫৭ ধারার অপরাধগুলো স্পষ্ট করা হবে। তিনি আরো বলেন, যে সব বিষয়গুলো নিয়ে সমালোচনা ছিল সেগুলো নিরসণ করা হবে। আইসিটির অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বাতিল হবে কিনা এ বিষয়ে স্পষ্ট কোন কথা বলেনি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক আইন মন্ত্রী ও ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি ৫৭ ধারার আইনের কতগুলো বিষয় সংশোধন করা উচিত। কারণ এটা এখন ব্যাপকহারে অপব্যহার হচ্ছে। বিশেষ করে মামলা হওয়ার আগে অভিযোগের বিষয়ে ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। তিনি বলেন, ৫৭ ধারায় হয়রানির আশঙ্কা তো বাস্তবেই আমরা দেখছি। ফেসবুকে কেউ একটা স্ট্যাটাস দিল, তাতে কি বলা হল, কেউ কারও অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে কিছু লিখে দিল কিনা বা গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টটি সত্য ছিল কিনা- এসব তদন্ত না করে তো মামলা নেয়া উচিত নয়। তিনি আরো বলেন, সংবাদপত্রের সমালোচনা করলেই যদি মামলা হয়, তবে তা সংবাদপত্রের বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, আইনটি সাংবাদিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষের বাক স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে। এটি দেশের গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরুপ। ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ করা একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। সাংবাদিক সংবাদের যে কোন অংশ নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহেনী ৫৭ ধারা মামলা করতে পারেন। এতে করে সাংবাদিকরা বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে ইতস্থবোধ করেন। এইভাবে স্বাধীন গণমাধ্যমের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। এর কারণে সবাই এ আ্ইনটির বাতিলের দাবি জানিয়েছে আসছে।
সংশোধ করা হলে কি হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি এই আইনটি সংশোধন না করে সরাসরি বাতিল করা হোক। এতে করে সংবিধানের স্বীকৃতি নাগরিকদের বাক স্বাধীনতাকে নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) এর সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ইনকিলাবকে বলেন, আমরা আমাদের বক্তব্য বিভিন্ন সময় দিয়েছি। আমাদের বক্তব্য একটাই তাহল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, প্রধান মন্ত্রীও বলেছেন, ৫৭ ধারা সাংবাদিকদের হরয়ানির জন্য নয়।
৫৭ ধারা বাতিল চেয়ে রিট আবেদন কারীর আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়–ঁয়া ইনকিলাবকে বলেন, আইনটি করা হয় মূলত মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হনন করার উদ্দেশ্যে। আমি শুরু থেকে এই আইনটির বাতিলের দাবি জানি আসছি। কারণ আমাদের সংবিধানেও নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছেন। এখন তাহলে আবার ৫৭ ধারা কেন। এ ধারাটি সর্বমহলের ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব করেছেন। রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন আদালত। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত নিস্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
হাইকোর্টে রিট আবেদন : আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বাতিলের নির্দেশনা চেয়ে ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদন দায়ের করা হয়। রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে চার সপ্তাহের রুল জারি করে হাইকোর্ট, যা বর্তমানে চূড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। রিট আবেদনে বলা হয়, তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা সংবিধানের ২৭, ৩২ ও ৩৯ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু এই ৫৭ ধারা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যাপকভাবে খর্ব করছে। আইনের সংশ্লিষ্ট ধারাটি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় তা বাতিল করা উচিত।
এ আইনের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর শিকার হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন সাংবাদিকরা। সর্বপ্রথম ২০১৫ সালে সাংবাদিক প্রবীর শিকদারের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতার করে। এরপর থেকে ধারাটি বাতিলের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবি ওঠে। আইনমন্ত্রী তখন ধারাটি বাতিলের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এরপর গত ২ বছরে হয়েছে আরও বেশকিছু মামলা। এরপর মামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা, খুলনা ও হবিগঞ্জের ৪ সাংবাদিক। চারদিনের ব্যবধানে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক চারটি মামলা হয়। খুলনার সিএমএমের বিষয়ে রিপোর্ট করায় সিএমএমের পক্ষে ওই আদালতের নাজির তপন কুমার বাদী হয়ে ১৪ জুন খুলনা মেট্রোপলিটন সদর থানায় আলোকিত বাংলাদেশের খুলনা প্রতিনিধি মোতাহার রহমান বাবু ও স্থানীয় সময়ের খবরের স্টাফ রিপোর্টার সোহাগ দেওয়ানের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা করেন। এর তিন দিন আগে ১১ জুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কমের স্টাফ করসপন্ডেন্ট গোলাম মুজতবা ব্রুব’র বিরুদ্ধে এবং এর দুই দিন আগে ১২ জুন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ ছাড়া ওয়ালটনের পণ্য নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের জের ধরে ৫৭ ধারায় দায়ের হওয়া এক মামলায় স¤প্রতি অনলাইন নিউজ পোর্টাল নতুন সময় ডটকমের নির্বাহী সম্পাদক আহমেদ রাজুকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। দু’দিন কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন। এছাড়াও চট্টগ্রমে দৈনিক সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরোর রিপোর্টার তৌফিকুল ইসলাম বাবর এবং দিনাজপুরে যমুনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার নাজমুল হোসেনসহ চারজনের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সর্বশেষ গত ৭ জুলাই দৈনিক সকালের খবরের রিপোর্টার আজমল হক হেলালের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পরবর্তীতে যদিও তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন। এরপর থেকে সাংবাদিক নেতারা ৫৭ ধারা বাতিলের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে।
কর্মসূচির চলাকালে গত বৃহস্পতিবার এ ধারায় দায়েরকৃত মামলায় যুগান্তরের সাংবাদিক হেলাল উদ্দিনকে জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে নিন্ম আদালত।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির তথ্য হচ্ছে, ২০১৫ থেকে এই আইনে সংগঠনের ৯ সদস্য এবং তাঁদের সঙ্গে আরও ৭ জনের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দেয়া হয়েছে। গত বছর এই ধারায় মোট মামলা হয়েছে ৩৬টি, এ বছরের জুন পর্যন্ত এই সংখ্যা ২৪।
আসামি হয়ে কমপক্ষে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জেল খেটেছেন, একজন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছেন। সমালোচনা করে মামলার আসামি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। ভুক্তভোগীদের তালিকায় রয়েছেন একজন মৎস্যজীবীও। প্রতি দিনই দেশের কোথাও না কোথায় এ ধারা মামলা হচ্ছে।
গত ২০ জুলাই সম্পাদক পরিষদও এ ধারাটি বাতিলের দাবিতে বিবৃতি দিয়েছেন। এতে উল্লেখ করা হয়, এই ধারা সংবিধান পরিপন্থী এবং সংবিধানে রক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি। একই সঙ্গে তারা আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং নতুন কোনো আইনে এই ধারা পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত থাকতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনটির নেতৃবৃন্দ। এতে আরো বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। সম্পাদক পরিষদ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয় এমন সব বিধিবিধান বাদ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। সম্পাদক ও সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারা দেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন, তা প্রত্যাহারের এবং গ্রেফতার হওয়া সাংবাদিকদের মুক্তির দাবি করছে।
সাউথ এশিয়ান ফ্রি মিডিয়া এসোসিয়েশনের (সাফমা) এর আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তারা আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা প্রত্যাহার করে সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানান। তারা বলেন, গণতান্ত্রিক চেতনা ও মিডিয়ার স্বাধীনতা খর্বকারী এই ধারা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। তাদের মতে, ৫৭ ধারার মত কালো আইন থাকলে শুধু মিডিয়া জগতই নয়, সমাজের সব অংশেরই সুস্থতা ও বিকাশ বিঘিœত হবে। সরকারকে এটাই ভাবতে হবে যে তারা যখন ক্ষমতায় থাকবেন না, তখন এ কালো আইন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবহৃত হবে।
গত ২৪ জুলাই মতপ্রকাশের ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার প্রতি অন্তরায় সৃষ্টি করে এমন কোন আইন না করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ সংবাদপত্র মালিক সমিতি নিউজপেপার ওনারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। এক বিবৃতিতে বলা হয়, বহুল অপপ্রয়োগের কারনে বিতর্কিত তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইন, আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা অবিলম্বে বাতিল এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ওই আইনে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। একই সাথে নোয়াব বলেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাংবাদিকদের ওপর হামলা এবং হয়রানিমূলক মামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এগুলো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/89083/