২৫ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:১০

রেমিটেন্স কমায় অস্বস্তি নানা চিন্তা

প্রতিবছরই বৈদেশিক কর্মসংস্থান বাড়ছে। সে হিসাবে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ প্রতিবছর বাড়ার কথা। কিন্তু উল্টো কমে প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে প্রবাসী আয়। এতে অস্বস্তিতে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগের অর্থ বছরের তুলনায় সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় রেকর্ড পরিমাণ কমে ১৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর এভাবে কমে যাওয়ায় তৎপর হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জানা গেছে, গত দুই অর্থবছরে ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় কমতে থাকায় তা বাড়ানোর বিভিন্ন উপায় খোঁজা হচ্ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের প্রবণতা বেড়ে গেছে। এ কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে ফি কমানোসহ নানান উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে আগামী সোমবার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, রেমিটেন্স ফি কমানোর বিষয়ে গত সপ্তাহে রেমিটেন্স আহরণকারী শীর্ষ ২০টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠকে বসে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠক সূত্র জানায়, রেমিটেন্স ফি কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা তেজী রাখতে রেমিটেন্স গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। সমপ্রতি রেমিটেন্স কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক অস্বস্তিতে রয়েছে। রেমিটেন্স কমে যাওয়ার পেছনে তিনি উৎস দেশগুলোতে অর্থপাচার প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইনের কঠোরতাকে প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন।

বৈঠকে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে চার্জ কোনো বিষয় নয়। বরং বিভিন্ন দেশে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ জোরদার করায় ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা প্রেরণ কমেছে। তারা বলেন, আগে একটি সময় বেশির ভাগ দেশের প্রবাসী খুব একটা প্রশ্ন ছাড়াই ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে পারতেন। বৈধতা না থাকলেও অন্যের নামে টাকা পাঠানোর সুযোগ ছিল। তবে এখন টাকা পাঠাতে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি পড়তে হচ্ছে। অবৈধভাবে থাকছেন এরকম ব্যক্তিরা এখন আর কোনোভাবেই টাকা পাঠাতে পারছেন না। আবার বৈধ ব্যক্তির মাসিক আয় কত আর কত টাকা পাঠানো হচ্ছে, এরকম নানা প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে। আর বাংলাদেশি শ্রমিকদের বেশির ভাগ অল্প শিক্ষিত ও অদক্ষ হওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়ার পর আতঙ্কিত হয়ে অনেকে ব্যাংকিং চ্যানেল এড়িয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে কমছে রেমিটেন্স। এ ছাড়া কার্ব মার্কেট ও ব্যাংক রেটের পার্থক্য এবং মোবাইল ব্যাংকিং এর অপব্যবহার এক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৭৩১ জন, যা আগের বছরে ছিল ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৮৮১ জন। অর্থাৎ ২০১৬ সালে আগের বছরের তুলনায় জনশক্তি রপ্তানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। হিসাবে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে জনশক্তি রপ্তানি হয়েছিল ৪ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন। এর পরের বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে জনশক্তি রপ্তানি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এক সময় রেমিটেন্স বাড়লেও এখন চলছে উল্টো পথে। সদ্য শেষ হওয়া ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। যা গত ৫ অর্থবছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের অর্থবছরে প্রবাসীরা ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। এক বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স প্রবাহ ১৪.৪৭ শতাংশ বা ২১৬ কোটি ১৭ লাখ ডলার কমেছে। গত অর্থবছরের শুরু থেকেই রেমিটেন্স প্রবাহ নিম্নমুখী ছিল।
জানা গেছে, এর আগে রেমিটেন্সের নিম্ন প্রবাহের কারণ খুঁজতে কমিটিও গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের তথ্যমতে, মোবাইল ব্যাংকিং এর অপব্যবহার এবং মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা রেমিটেন্স প্রবাহ কমার ক্ষেত্রে অনেকাংশে দায়ী। ধারাবাহিকভাবে রেমিটেন্স প্রবাহ কমায় শঙ্কিত ব্যাংকাররা। তারা মনে করেন, কার্ব মার্কেট ও ব্যাংক রেটের মধ্যে পার্থক্য রেমিটেন্স প্রবাহ কমার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। সরকারের সহযোগী আচরণই হতে পারে উচ্চ প্রবৃদ্ধির সহায়ক।
চলতি বছর এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিটেন্সের পরিমাণ দিন দিন কমছে। ২০১৬ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে এসেছে ৫০.৭২ শতাংশ। যা ২০১৩ সালে ছিল ৬৭.৩২ শতাংশ। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা মানিগ্রামের মাধ্যমে ২০১৬ সালে এসেছে ১২.৬৬ শতাংশ আর মোবাইল ব্যাংকিং বা বিকাশের মাধ্যমে ১৪.৩১ শতাংশ এসেছে। ২০১৩ সালে মোবাইল ব্যাংকিং-এ কোনো অর্থ আসেনি।
রেমিটেন্স প্রবাহের নিম্নগতিতে দুশ্চিন্তায় রয়েছে সরকারও। সমপ্রতি এক অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়াতে শিগগিরই ট্রান্সফার ফি কমানো হবে। যা আগামী মাস থেকে কার্যকর হতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, রেমিটেন্স পাঠানোর খরচ কমাতে সাবসিডি দেয়ার চিন্তা করছে সরকার। এছাড়া রেমিটেন্স ফি কমাতে কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে সে বিষয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

 

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=75645&cat=2/