২৫ জুলাই ২০১৭, মঙ্গলবার, ১১:০৩

বন্যায় বিধ্বস্ত কাঁচা-পাকা রাস্তা, অশেষ ভোগান্তি

অতিবৃষ্টি ও বন্যায় বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা রাস্তা। আর পাকা রাস্তাগুলো ধসে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক স্থানে রাস্তা বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে কবলিতরা।

চার জেলায় প্রায় এক হাজার ৩৬৮ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব রাস্তা সংস্কার করতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। রাস্তা থেকে পানি সম্পূর্ণ না নামলে সঠিক ক্ষয়ক্ষতিটা জানা যাবে না বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের। তারা বলছে, আগামী শীতের আগে রাস্তার সংস্কারকাজ শুরু করা যাবে না। সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরপত্রের কাজ শেষ করে অক্টোবরে কাজ শুরু করা যাবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলেছে, ‘এখনো অনেক জায়গায় বন্যার পানি পুরোপুরি না নামায় ক্ষয়ক্ষতি পুরোপুরি নিরূপণ করা যায়নি। তবে তারা বিভাগীয় রক্ষণাবেক্ষণের আওতায় সড়কগুলোর গর্ত ভরাটের কাজ চালিয়ে যাবে। বিস্তারিত আমাদের আঞ্চলিক অফিস, নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে—
সিলেটে যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলার প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত। একই সঙ্গে ১৭টি ব্রিজ ও কালভার্ট চলাচল অনুপযোগী। এসব সড়ক-কালভার্ট মেরামত ও সংস্কারে প্রায় সাড়ে ৭২ কোটি টাকা খরচ হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার ১০টি উপজেলার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ২১৭ কিলোমিটার পাকা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাঁচা সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৫৪ কিলোমিটার। এ ছাড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং অন্তত ১৫০ কিলোমিটার সড়কে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী এ এস এম মহসীন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাস্তাগুলো যেহেতু বিটুমিন দিয়ে করা হয়, সে কারণে বৃষ্টির মৌসুমে মেরামতকাজ করা সম্ভব হবে না। সেপ্টেম্বরের মধ্যে দরপত্রের কাজ শেষ করে অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করা যাবে। ’
বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতি হয়েছে। যার ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচা রাস্তা। আর পাকা রাস্তাগুলো ধসে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্র জানায়, বন্যার পানি সম্প্রতি নেমে গেছে। সড়কের ক্ষতগুলো এখন দেখা যাচ্ছে। মাটির রাস্তাগুলো পানির প্রচণ্ড স্রোতে বিলীন হয়ে গেছে।
বগুড়া জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা শাহারুল ইসলাম আবু হেনা জানান, রাস্তাঘাট ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এখন পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষতির তথ্য পাওয়া গেছে। এর পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
মৌলভীবাজারে প্রায় ২০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামীণ এলাকার বেশির ভাগ সড়কের অনেক অংশ এখনো পানির নিচে তলিয়ে আছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। টাকার অঙ্কে ক্ষতির পরিমাণ ১০০ কোটি ২২ লাখ ৬৩ হাজার টাকা।
সওজ মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় সওজের রাজনগর-কুলাউড়া-বড়লেখা-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক, জুড়ী-লাঠিটিলা আঞ্চলিক মহাসড়ক, মৌলভীবাজার-শমসেরনগর-চাতলা সড়ক এবং জুড়ী-ফুলতলা-বটুলী সড়কের ৪.৬৩ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এলজিইডি মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘রাস্তার ওপর এখনো পানি। পানির জন্য অনেক সড়কে যাওয়া যায়নি। আনুমানিক একটা ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয়েছে। কারণ, আমরা এখনো জানি না রাস্তার কতটুকু ক্ষতি হয়েছে। পানি সম্পূর্ণ নামলে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতিটা জানা যাবে। ’
জামালপুর ইসলামপুরের পাঁচটি, সরিষাবাড়ীর দুটি এবং দেওয়ানগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ এখনো বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এবারের বন্যায় জেলার ২৭৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়ক এবং ৪৫ কিলোমিটার পাকা সড়কে খানাখন্দের সৃৃষ্টি হয়েছে। ওই সব সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ।
নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, ইসলামপুরের নোয়ারপাড়া এবং চিনাডুলি ইউনিয়নের সব কটি সড়ক বন্যায় ভেঙে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এ পথে এখনো রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, পিকআপ, ভটভটি ও নছিমন চালাতে পারছে না। ইসলামপুরে চিনাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম জানান, তাঁর ইউনিয়নের সব কটি রাস্তাই বন্যায় ভেঙে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। এতে যাতায়াতের দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ।
সিরাজগঞ্জে ত্রাণ অফিসের তথ্যানুযায়ী জেলা সদরের একটি ও শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচটি পাকা সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। অতিবৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার রাস্তার পাশাপাশি মহাসড়কের বেহাল দশা। এ ছাড়া চলতি বছরে গ্রামের কাঁচা রাস্তা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সেখানে কিছু ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে সিরাজগঞ্জ হাটিকুমরুল গোলচত্বর থেকে নলকা ব্রিজসহ উল্লাপাড়া-নগরবাড়ী-চান্দাইকোনা মহাসড়কের বেহাল অবস্থা। হাটিকুমরুল গোলচত্বরের রাস্তায় খানাখন্দ থাকার কারণে ২৪ জেলার যানবাহন পারাপারে প্রতিনিয়ত অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী পরিবহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/07/25/523488