২৪ জুন ২০১৭, শনিবার, ১২:১২

১৪ বছর ধরে ভর্তুকিতে চলছে ১১ প্রতিষ্ঠান

এ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা

চৌদ্দ বছর ধরে ভর্তুকি নিয়ে চলছে সরকারের ১১টি সংস্থা। চলতি অর্থবছর (২০১৬-২০১৭) পর্যন্ত এ ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকি কমাতে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও অদ্যাবধি আসেনি কোনো ইতিবাচক ফল। উল্টো ভর্তুকি দেয়ার পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরে কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি বছরই বাড়ছে ভর্তুকির পরিমাণ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণেই বছরের পর বছর মোটা অঙ্কের টাকার ভর্তুকি দিতে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। পাশাপাশি অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম ও প্রকল্প পরিচালনাও এমন পরিস্থিতির জন্য অনেকটা দায়ী।
জনগণের করের টাকা থেকে এই ভর্তুকির অর্থ দেয়া হলেও তার সুফল দেশ ও জনগণ কতটা পাচ্ছে সেটা নিয়ে রীতিমতো বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। খোদ জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্যরাও এ ভর্তুকি বরাদ্দ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারি অর্থ অপব্যবহার ও লুটপাটের আখেরি জমানা চলছে বলেও মন্তব্য করেছেন তারা।
প্রতিষ্ঠানগুলো আদৌ কোনোদিন ভর্তুকি ছাড়া চলতে পারবে কিনা তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না সরকারের কেউ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভর্তুকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কতদিন পরিচালনা করতে হবে অথবা আদৌ এগুলো রাখা উচিত হবে কিনা- তা সরকারকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া উচিত। অন্যথায় জনগণের দেয়া করের টাকা লুটপাট করতে দুর্নীতিবাজদের পথ আরও প্রশস্ত হবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
অর্থনৈতিক সমীক্ষা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি দেয়া হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (বিডব্লিউডিবি)। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত হিসাবে বিডব্লিউডিবির ভর্তুকি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮৫ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৯২ কোটি টাকা বেশি। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এ সংস্থার অনুকূলে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল ৮৯১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এছাড়া চলতি অর্থবছরে ভর্তুকি দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ৪১১ কোটি টাকা, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ৩৭৯ কোটি ৩১ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনকে (বিএসসিআইসি) ১৬৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং পাটকল কর্পোরেশনেরও (বিজেএমসি) ভর্তুকি দেয়া হয়েছে ৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের (বিএসবি) ভর্তুকি ২২ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ২৭ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (এনএইচএ) ১৭ কোটি টাকা, বাংলাদেশ রেশম গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের (বিএসআরটিআই) ভর্তুকির পরিমাণ হচ্ছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) ৫০ লাখ টাকা এবং অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনকে (বিআইডব্লিউটিসি) ৫০ লাখ টাকা ভর্তুকি দেয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণেই ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। যে প্রতিষ্ঠানে এটা যত বেশি, তার ভর্তুকি তত বেশি দরকার হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সরকারকেই চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের মাধ্যমে এটা কমিয়ে আনতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতের মাধ্যমে এদের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে না পারলে প্রতি বছর এভাবেই ভর্তুকির নামে খেসারত দিয়ে যেতে হবে। যার দায়ভাব বহন করতে হবে জনগণকে।
সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০০৩-০৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত ওই ১১টি প্রতিষ্ঠানে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে মোট ১৪ হাজার ৪০৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভর্তুকি দেয়া হয় ১ হাজার ৭০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৮৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে এই ভর্তুকি বেড়েছে ২২ শতাংশ। এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ছিল ১৩২৯ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ১২৯১ কোটি টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ১ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা এবং ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ১৮৮ কোটি টাকা। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৮৭ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৯০৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ৪৫২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ভর্তুকি দেয়া হয় ৪২৬ কোটি ২০ লাখ টাকা, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৫৩২ কোটি ৯২ লাখ টাকা, ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা এবং ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ৩৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, অদক্ষতা আর দুর্নীতির কারণে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ বাড়ছে। ফলে অতিরিক্ত অর্থ ভর্তুকি দিয়ে এদের বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। এদের দক্ষতা, দূরদর্শিতা ও স্বচ্ছতার বিষয়টি প্রতিনিয়ত প্রশ্নবিদ্ধ। তাই জনস্বার্থ অথবা রাষ্ট্রের কল্যাণে এগুলো কতটা আবেদন রাখতে পারছে, আর কতদূর যাওয়া সম্ভব- তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। আদৌ এসব প্রতিষ্ঠান রাখা উচিত কিনা অথবা বিকল্প কোনো ব্যবস্থা আছে কিনা সে বিষয়ে সরকারকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রয়োজনে স্বীকৃত কোনো সংস্থা ও ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ পরিসরে সমীক্ষা করতে পারে সরকার। এতে যদি রাখার প্রয়োজন হয়, তাহলে কিভাবে রাখা হবে এবং কম খরচে কতটা মানসম্মত সেবা দেয়া যায় তার উপায় খুঁজতে হবে। নতুবা এভাবে ভর্তুকি বাড়তেই থাকবে। সেই ভর্তুকির ব্যবহার নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠবে জনমনে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ভর্তুকি বাড়লেও এদের কার্যক্রমে দৃশ্যমান উন্নতি আশানুরূপ নয়। বরং অনিয়ম, দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতার কারণে অল্প দিনেই বাজেটে রাখা অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেসব সংস্থা উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ করছে, সেখানে হচ্ছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি। আর যারা সেবা দিচ্ছে, অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়েও বাড়ছে না তাদের সেবার মান। আবার দেশের বৃহৎ কল্যাণের অজুহাত তুলে যেসব প্রতিষ্ঠান গবেষণা করছে, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া সেখানে অর্জন শূন্য। অথচ প্রতি বছর এদের পেছনে বাড়তি ব্যয় হচ্ছে। ফলে কার্যক্রম সচল রাখতে এরা অনুদান বা ভর্তুকির নামে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ নিচ্ছে। এ কারণে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরও ৫৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে বাজেটে বরাদ্দের চেয়ে ১৮ হাজার ৩৭০ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি খরচ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
এদিকে সর্বোচ্চ ভর্তুকি পাওয়া সংস্থা- পানি উন্নয়ন বোর্ড (বিডব্লিউডিবি) ইতিমধ্যেই দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। তদুপরি এ সংস্থার উন্নয়ন ও সংস্কারের বেশির ভাগ প্রকল্পই নেয়া হচ্ছে পানিকেন্দ্রিক। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানিতে উন্নয়ন কতটা দৃশ্যমান সেটা নিয়ে সংশয়ের যথেষ্ট কারণ আছে। বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায়ই সংস্থাটির বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। সম্প্রতি হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণেও বিডব্লিউডিবির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘হাওর অ্যাডভোকেসি ফোরামের (হ্যাপ) সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের বিপর্যয়ের নেপথ্যে সংস্থাটির অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ সংস্থার অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করতে শুরু করেছে। এদিকে বোর্ডের মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর কবির নিজেদের কর্মকাণ্ডে কিছুটা অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছেন। অপরদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) জরিপেও বিডব্লিউডিবির বিভিন্ন সময়ের কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির হদিস পেয়েছেন। বেসরকারি এই সংস্থাটির ২০০৯ সালে হাওরে বাঁধ নির্মাণ : সুনামগঞ্জ পাউবোর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সমস্যা ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এছাড়া জলবায়ু অর্থায়ন প্রকল্পের আওতায় সুনামগঞ্জ পাউবোর একটি প্রকল্পের ওপর টিআইবি ২০১৫ সালে একটি বেইজলাইন জরিপের কার্যক্রমও পরিচালনা করেছে। টিআইবির এ দুটি গবেষণায় পাউবো কর্তৃক হাওরে বাঁধ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি কোনো কোনো ক্ষেত্রে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত হয়েছে। এসব গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য বলছে, সুনামগঞ্জ হাওর অঞ্চলে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতে অনিয়ম ও দুর্নীতি শুরু হয় বাঁধের প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. জাফর আহমেদ খান যুগান্তরকে বলেন, যে ভর্তুকির কথা বলা হচ্ছে সেটা কোনোভাবেই ভর্তুকি নয়। অর্থ মন্ত্রণালয় বিষয়টি ভুলভাবে তুলে ধরেছে। মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ কম রাখা হচ্ছে বলেই অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার প্রয়োজন হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এটা কোনোভাবেই অযৌক্তিক বরাদ্দ নয়। কারণ এখানে খরচ কমানোরও কোনো সুযোগ নেই। কাজ বেশি হচ্ছে বলেই খরচ বাড়ছে। তাছাড়া এটা কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়, যাকে ব্রেক ইভেন্টে নিয়ে আসতে হবে। এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে ড. জাফর আরও বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে নদীমাতৃক। এর ঝুঁকি অনেক। তীর রক্ষা করতে বেশির ভাগ উন্নয়ন প্রকল্প পানির নিচে বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে, যা অনেক ব্যয়বহুলও বটে। প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জ বেশি বলে কোনো কোনো কাজ একাধিক বা ততোধিকবার করতে হচ্ছে। ফলে খরচও বেশি হচ্ছে।
অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেই এই ভর্তুকি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশেই উন্নয়ন প্রকল্পে কম-বেশি অস্বচ্ছতা আছে। বিডব্লিউডিবির কর্মকাণ্ডেও এটা থাকতে পারে। তবে সেটা যাতে কম হয়, তার জন্য মন্ত্রণালয়ের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যতটা সম্ভব চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স করে স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা চলছে। অস্বচ্ছতার অভিযোগে সম্প্রতি ৩ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত আরেকটি সংস্থা হচ্ছে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)। এ প্রসঙ্গে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বিজেএমসিকে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান বলে মন্তব্য করেন। সম্প্রতি তিনি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, দুর্নীতি এমনভাবে গ্রাস করেছে প্রতিষ্ঠানটিকে, যেখানে দুর্নীতিই নিয়মে পরিণত হয়েছে। অপরদিকে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিও এ সংস্থার অদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর বিজেএমসির ভর্তুকি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, বিজেএমসি আপাদমস্তক একটি দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান। একে বিলুপ্ত না করা হলে এর দুর্নীতি কমবে না বলেও মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বিরুদ্ধেও। সংস্থাটির আওতাধীন বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অর্থ আত্মসাৎ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগও ভূরি ভূরি। সম্প্রতি বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধানে নদ-নদী খনন ও নৌপথের পলি অপসারণে ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১টি ড্রেজার কেনায় অনিয়মের অভিযোগ তুলেছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি (এনসিপিএসআরআর)। এছাড়া অতি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ নদীবন্দরের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে মাঠে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহন সচিব অশোক মাধব রায় বলেন, নদীবন্দরের ব্যবস্থাপনা সচল রাখতে প্রতিনিয়ত সংস্কারের প্রয়োজন হয়। এখানে প্রকৃতি যত বিরূপ হয়, সংস্কার তত বেশি হয়। দুর্যোগ বলে-কয়ে আসে না। চাইলেই প্ল্যানওয়াইজ ভর্তুকি কমানোও সম্ভব নয়। কোন পরিস্থিতিতে কত খরচ হবে হিসাবও নির্ধারণ করা কঠিন। তদুপরি বাজেটে যে বরাদ্দ দেয়া হয় সেটা চাহিদার তুলনায় কম। ফলে নিয়মিত কর্মকাণ্ড ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বন্দরের সার্বিক কার্যক্রম সচল রাখতে অতিরিক্ত অর্থ ভর্তুকি হিসেবে চাইতে হয়। এটা অন্যায্য কিছু নয়। এটা অব্যাহত রাখতে হবে। নয়তো মূল বাজেটেই বেশি বরাদ্দ রাখতে হবে। এখানে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যয় হয় বলে ব্রেক ইভেন্টে নিয়ে আসার বিষয়টি এখানে মুখ্য নয় বলে দাবি তার।

http://www.jugantor.com/first-page/2017/06/24/134985/