২১ জুন ২০১৭, বুধবার, ২:৫৩

জলজট যানজট এবং দুর্ঘটনায় স্থবির মহাসড়ক

জলাবদ্ধতা ও গাড়ির বাড়তি চাপের কারণে রাজধানী ঢাকায় আসা-যাওয়ার প্রধান তিনটি পথে থেমে থেমে চলছে যানবাহন।
সোমবার গভীর রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিল।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দিসহ বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে চলতে হচ্ছে যানবাহনকে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়দেবপুর পর্যন্ত অংশেও ছিল তীব্র যানজট।
এই পরিস্থিতিতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তারগাছ এলাকায় (গাজীপুর) সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেন। সেখানে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখন বন্ধ থাকবে।
দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। গাড়ি থেমে থেমে চলছে। সোমবার রাতে এ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানবাহন বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনার কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়।
মির্জাপুর থানা ও হাইওয়ে পুলিশ এবং পরিবহন চালকরা জানান, সোমবার থেকে এ মহাসড়কে যানবাহনের চাপ কয়েক গুণ বেড়েছে। রাতে শুরু হয় বৃষ্টি। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দ সৃষ্টি হয়। রাত ৪টার দিকে করটিয়ায় ঢাকাগামী পাথরভর্তি একটি ট্রাক মহাসড়কে উল্টে পড়ে। কালিয়াকৈরে একটি ট্রাক ও মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং এলাকায় আরো দুটি ট্রাক দুর্ঘটনায় পড়ে। এসব কারণে মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোরে দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাক সরিয়ে নিলে আস্তে আস্তে যান চলাচল শুরু হয়।
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, মির্জাপুর থেকে টাঙ্গাইল বাইপাস পর্যন্ত মহাসড়কে সৃষ্ট খানাখন্দ গতকাল মঙ্গলবার মেরামত করা হয়েছে। টাঙ্গাইল শহরের কাছে রাবনা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত হয়েছে। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে রাস্তার পিচ উঠে গেছে। গতকাল এসব মেরামতের কাজও শুরু করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের টাঙ্গাইল এলাকার নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নূর-ই-আলম বলেন, বৃষ্টি বিটুমিনের প্রধান শত্রু। বর্ষায় পিচ উঠে গিয়ে রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সড়ক বিভাগ প্রস্তুত বলে তিনি জানান।
গাজীপুর থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকালও গাজীপুরে চারটি মহাসড়কের স্থানে স্থানে যানজট ছিল।
সকালে বর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের তারগাছ এলাকায় (গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকা) সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেন সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, তৈরি পোশাক, ওষুধ, খাদ্যদ্রব্য প্রভৃতি জরুরি পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া কোনো ভারী গাড়ি ঈদের তিন দিন রাস্তায় চলতে পারবে না। গার্মেন্ট শ্রমিকদের ঈদের ছুটি একসঙ্গে না দিয়ে ভাগ করে দেওয়ার জন্য কারখানা মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানান মন্ত্রী।
ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে সড়কমন্ত্রী বলেন, ‘এ সময় জনগণকে যদি স্বস্তি দিতে না পারি, তাহলে এটা অত্যন্ত কষ্টের ব্যাপার হবে। এটা হবে আমাদের জন্য একটা নেতিবাচক দিক। এ জন্য আমি প্রতিদিনই রাস্তায় আছি, রাস্তায় থাকব। প্রয়োজনে ঈদের দিনও থাকব। ’
মালিকদের ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় না নামাতে অনুরোধ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের মূল সমস্যা হচ্ছে মহাসড়কে বেপরোয়া মনোভাব, বেপরোয়া ড্রাইভিং। আমি অবাক হয়ে দেখি, আট লেনের রাস্তায় মধ্যরাতেও যানজট হচ্ছে। ’ যানজট রোধের জন্য চালক-মালিকদের মানসিকতার পরিবর্তন করার অনুরোধ জানান তিনি।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2017/06/21/511369