১৫ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:২৫

রফতানির পরিবর্তে আমদানি হচেছ আড়াই লাখ টন চাল

খাদ্য মজুদ নিয়ে এতদিন ভুল তথ্য দিয়েছে সরকার। উৎপাদনের রেকর্ড ও চাল রফতানি হবে এমন সব অসার বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বোকা বানালেও শেষ অবধি বিদেশ থেকে এখন চাল আমদানি করতে হচেছ সরকারকে। গতকাল বুধবার ভিয়েতনাম থেকে আড়াইলাখ টন চাল আমাদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই সরকারের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে খাদ্যমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরাও একসুরে বলে এসেছেন যে, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ। আমরা এখন বিদেশে খাদ্য রফতানিও করতে পারি। মন্ত্রীরা তাদের বক্তব্যে বিবৃতিতে বলে এসেছেন, নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করেই বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি লাভ করছে। আমাদের সরকারের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আর্জন করা। এক সময় আমাদের দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল। বর্তমানে আমরা তা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। আমি আনন্দিত যে, বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়সম্পূর্ণ ।
সরকারের মন্ত্রীদের সেই বক্তব্যের কয়েক মাসের মধ্যেই গতকাল বিদেশ থেকে চাল আমদানির এই ঘোষণা দেয়া হলো। সরকারের চালের মজুদের বক্তব্য ও তথ্যও ভুল প্রমাণিত হলো। উদ্বৃত্তের পরিবর্তে এখন সরকারি খতিয়ানে খাদ্যের ঘাটতির হিসাব ধরা পরেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্য ঘাটতি মেটাতে ভিয়েতনাম থেকে আড়াই লাখ টন চাল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৫০ হাজার মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল এবং ২ লাখ মেট্রিকটন আতপ চাল। সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সরকার টু সরকার পর্যায়ে ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল এবং ২ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল আনা হবে। তিনি জানান, প্রতি মেট্রিকটন সিদ্ধ চালে ব্যয় হবে (চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে) ৪৭০ মার্কিন ডলার। মোট ৫০ হাজার মেট্রিক টন আতপ চালে ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি ৫ লাখ টাকা। এছাড়া প্রতি মেট্রিকটন আতপ চাল আনতে (চট্টগ্রাম-মংলা) ব্যয় হবে ৪৩০ মার্কিন ডলার। মোট ২ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ চালে ব্যয় হবে ৭১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
সূত্র আরো জানায়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রতিবেদন (২০১৫) অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের ৭৯ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ পর্যাপ্ত খাবার পায় না এবং এদের মধ্যে একটি অংশের (২৮ কোটি ১৪ লক্ষ) বাস দক্ষিণ এশিয়ায়। দক্ষিণ এশিয়ায় ক্ষুধা ও অপুষ্টির চ্যালেঞ্জটি জটিল ও বহুমাত্রিক হওয়ায় তা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন বহুমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কার্যকর পদক্ষেপ। ১৯৪৮ সালে গৃহীত জাতিসংঘের সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এবং ১৯৬৬ সালের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী খাদ্য অধিকারকে বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।
মানবাধিকার সনদ স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ‘খাদ্য অধিকার’সহ মৌলিক মানবাধিকারসমূহ বাস্তবায়নের দায়িত্ব অবশ্যই প্রথমত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের। এছাড়া খাদ্য অধিকার’রকে স্বীকৃতি প্রদান করে ভারতে আইন প্রণীত হয়েছে এবং তা কার্যকর করার উদ্যোগ অব্যাহত আছে। এ ছাড়া পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপে আইনি কাঠামো প্রণয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/288142-