বান্দরবানে ভূমিধসের পর লাশ খুঁজছেন দমকল বাহিনী ও স্থানীয়রা (বাঁয়ে); কাপ্তাইয়ে উদ্ধার তৎপরতা :এএফপি নয়া দিগন্ত ; মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক ; ক্যাপ্টেন
১৪ জুন ২০১৭, বুধবার, ১২:০৯

পাহাড়ধসে ২ সেনাকর্মকর্তাসহ নিহত ১২৯

নি¤œচাপের প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণে চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ধসে সেনাসদস্যসহ ১২৯ জন নিহত ও শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। রাত ১টায় সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহতদের মধ্যে রাঙ্গামাটিতে সেনাবাহিনীর চার সদস্যসহ ৯৮ জন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলায় ২৫ জন ও বান্দরবানে ছয়জন রয়েছেন। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকায় নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাহাড়ধসে সড়কের ওপর পড়ায় তিন জেলার অনেক স্থানে অভ্যন্তরীণ ও আন্তঃজেলা সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা। প্রবল বর্ষণে অনেক জেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে তলিয়ে গেছে বাড়িঘর।
রাঙ্গামাটি সংবাদদাতা জানান, গত তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটিতে বসতবাড়ির ওপর পাহাড় ধসে পড়ে এ পর্যন্ত ৯৮ জন নিহত ও অন্তত ৫৬ জন আহত হয়েছেন। রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক মে: মানজারুল মান্নান ও স্থানীয় অন্যান্য সূত্র জানান, পাহাড়ধসে রাঙ্গামাটি শহরের মানিকছড়িতে চার সেনাসদস্যসহ সদরে ৫৩ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, জুড়াছড়িতে ২ জন ও বিলাইছড়ি উপজেলায় দুইজনসহ মোট ৯৮ জন নিহত হয়েছেন। জেলা প্রশাসক জানান, নিহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
মানিকছড়িতে নিহত চার সেনাসদস্যের নাম জানা গেছে। তারা হলেন মেজর মাহফুজ, ক্যাপ্টেন তানভির, করপোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহিন। সকালে মানিকছড়ির রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড়ধসে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সেখানে রাস্তা পরিষ্কার করতে সেনাবাহিনীর একটি টিম যায়। তারা সড়কের মাটি সরানোর সময় নতুন করে পাহাড় ধসে পড়ে। এতে সেনাসদস্যরা রাস্তা থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে যান। সেখানে মাটিচাপা পড়ে তারা নিহত হন।
সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এলাকায়। সেখানে পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা অসংখ্য বসতঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। রাঙ্গামাটি ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল ও স্থানীয় বাসিন্দারা ওই স্থান থেকে মাটি চাপাপড়া ১০ জনকে উদ্ধার করে রাঙ্গামাটি হাসপাতালে পাঠালে কর্তব্যরত ডাক্তার সবাইকে মৃত ঘোষণা করেন। পাহাড়ধসে আহত একজন রাঙ্গামাটি হাসপাতালে মারা যান। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মাটিচাপা পড়া আটজনকে হাসপতালে নেয়া হলে ডাক্তাররা তদের মৃত ঘোষণা করেন।
উদ্ধার অভিযান চলছে : রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসের পর ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়রা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। রাঙ্গামাটি হাসপাতালে হতাহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ডাক্তার ও নার্সদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা সকালে পাহাড়ধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নিহতদের পরিবারের মধ্যে জেলা পরিষদ থেকে নগদ ২০ হাজার ও আহতদের মধ্যে ২০ কেজি খাদ্যশস্য ও এক হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। রাঙ্গামাটি শহরে ১০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। তবে দুর্গত এলাকা থেকে এখনো লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে পারেনি।
জেলার কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী ও উপজেলা সদরে ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে নিহত তিনজন ও কাউখালী উপজেলার কাশখালীতে একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। কাউখালী ও জেলা শহরের ভেদভেদী এলাকায় মাটিচাপা পড়া আরো ক’জন লোক থাকতে পারেন বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকর্মীরা।
পাহাড়ধসে আহত ২৪ জন রাঙ্গামাটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ দিকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কাপ্তাই লেকের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় রাঙ্গামাটি শহরের নি¤œাঞ্চলের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। রাঙ্গামাটি আবাহাওয়া অফিস গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৪৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। রাঙ্গামাটি শহরে ওমদামিয়া হিল, পর্যটন এলাকা, আনন্দ বিহার, পুরাতন হাসপাতাল, রিজার্ভ বাজার, ভেদভেদী, রাঙ্গাপানি ও শিমুলতলীসহ বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে পড়েছে। এতে অসংখ্য কাঁচা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শহরের রাস্তার বিভিন্ন অংশে মাটি ভেঙে পড়ায় অনেক স্থানে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একটানা ভারী বর্ষণে রাঙ্গামাটি শহরে গত তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বিঘœ ঘটায় টেলিযোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। পানি ও বিদ্যুৎ সঙ্কটে মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কাউখালী (রাঙ্গামাটি) সংবাদদাতা জানান, কাউখালী উপজেলায় পাহাড়ধসে নারী-শিশুসহ ২৩ নিহত ও কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। পানিতে তলিয়ে গেছে তিন শতাধিক ঘর। মাটিচাপা পড়েছে দুই শতাধিক ঘর। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দুর্যোগ ও ত্রাণ শাখা।
উপজেলা প্রশাসন ও বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া তথ্য মতে নিহতরা হলেনÑ ঘাগড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দ আলীর স্ত্রী নাছিমা বেগম (৬০), নোয়াপাড়া এলাকার মৃত মঙ্গল চাকমার স্ত্রী শোভারানী চাকমা (৫৫), ঘাগড়া ইউনিয়নের জুনুমাছড়া এলাকার বাসিন্দা অমর শান্তি চাকমার মেয়ে বৈশাখী চাকমা (৭), কাশখালী এলাকার একই পরিবারের আবদুর রশিদের স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৬০), ছেলে মো: ইসহাক (৩৫) ও মো: মনির (২৫), ঘিলাছড়ি এলাকার মাওলানা ইসহাকের স্ত্রী হাফিজা খাতুন (৭০), একই পরিবারের দুদু মিয়ার ছেলে দবির উদ্দিন (৮০) ও দবির উদ্দিনের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৭০)। বেতবুনিয়া ইউনিয়নের একই পরিবারের অংচাপ্রু মারমার ছেলে অংচিং মারমা (৫২), অংখ্যাইচিং মারমার স্ত্রী আশেমা মারমা (৩৪), মেয়ে তেমা মারমা (১২) ও ছেলে ক্যাথোয়াইচিং মারমা (৭), ফটিকছড়ি ইউনিয়নের ধূপছড়ি গ্রামের কুজাইঅং মারমার স্ত্রী লাইপ্রু মারমা (৪০) ও কলমপতি ইউনিয়নের সুগারমিল এলাকার দুলালের স্ত্রী অজ্ঞাত (৩০)। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে আহত হয়েছে আরো অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ লোকই ঘুমন্ত অবস্থায় মাটিচাপা পড়েছে।
নিহতদের পরিবারের মধ্যে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক পাঁচ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও দুর্যোগ ত্রাণ শাখার প্রধান কমল বরণ সাহা। তিনি জানান, গৃহহীন পরিবারগুলোর জন্য প্রতিটি এলাকার স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। খুলে দেয়া হয়েছে সব স্কুল।
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই সংবাদদাতা জানান, গত তিন দিনের প্রবল বর্ষণে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও রাঙ্গামাটির কাপ্তাইয়ে পাহাড়ধসে ও গাছচাপা পড়ে ৩৭ জন নিহত হয়েছে। রাঙ্গামাটি-বান্দরবান, কাপ্তাই-চট্টগ্রাম, রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পাহাড়ধস ও বন্যার পানির কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী নদীর ফেরি পারাপার বন্ধ রাখা হয়েছে। রাঙ্গুনিয়া পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়ন ও কাপ্তাইয়ের পাঁচটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে থৈ থৈ করছে। শতশত ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে হাজার হাজার পরিবার।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইসলামপুর বড়বিল মঘাইছড়ি এলাকায় পাহাড়ধসে তিন পরিবারে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেনÑ শেফালী বেগম (৫৫), মো: হোসেন (২০), মো: পারভেজ (১৭), রিজিয়া বেগম (৫৬), মুনমুন আক্তার (১৫), মানিক (২০), হিরু মিয়া (১৭), মইন্যারটেক এলাকার মো: সুজন (২৪), মুন্নি আক্তার (১৯), মনোয়ারা বেগম (১৮), জ্যোৎ¯œা আক্তার (১৬), হালিমা (৬), মীম (২)। ইসলামপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন চৌধুরী মিল্টন জানান, পাহাড়ধসে আরো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। আহত হয়েছেন সাত-আটজন। উদ্ধারকার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। নিহত অন্যরা হচ্ছেনÑ জঙ্গল বগাবিলি বালুখালী এলাকার মোহাম্মদ ইসমাইল (৪২) তার স্ত্রী মুন্নি আক্তার (৩৭), শিশুকন্যা ইসামনি (৮) ও ছেলে ইবামনি (৪) এবং চাক্কর ঘোনা এলাকার নজরুল ইসলাম (৪০), তার স্ত্রী বাসু আকতার (৩৫), ছেলে ননাইয়া (১৫) ও মেয়ে সাথী আকতার (৯)। গত রাত ৯টায় প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, উপজেলার হোসনাবাদ ইউপির কানুরখিল গ্রামে আরো চারজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেনÑ আশীষ দে (৪৫), তার স্ত্রী অঞ্জনা দে (৩৫), তাদের মেয়ে টুসি (১০) ও একই গ্রামের ডা: দিলীপ দে।
রাজানগর ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী শামসুল আলম জানান, প্রবল বর্ষণে পুরো রাজানগর এলাকার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে হয়েছে। শত শত বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। একাধিক পাহাড়ধসের ঘটনায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে পানি প্রবাহিত হওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় সরকারের হস্তক্ষেপ দ্রুত কামনা করেন ইউপি চেয়ারম্যান।
অতি বৃষ্টিতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলাজুড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। খরস্রোতা ইছামতি নদীর প্লাবনে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের শান্তিনিকেতন গ্রামের মিয়াজীপাড়া বেড়িবাঁধ ধসে মিয়াজীপাড়া ও সৈয়দাবাদ গ্রামের রাজঘাটা এবং পারুয়া ইউনিয়নের মহৎপাড়ার বহু বসতবাড়ি, রবিশস্য ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মরিয়মনগর চৌমুহনী-গাবতল সড়কের বহু স্থান ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। পারুয়া ইউনিয়নের হাজারীবিল, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ ঈদগাবিল, কুমারবিল, শান্তিনিকেতন গ্রামের মিয়াজীবিলসহ বৃহত্তর গুমাইবিলের চাষাবাদ নষ্ট হয়।
এ দিকে কাপ্তাই ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালিপাড়ায় স্বামী-স্ত্রীসহ পাঁচ সদস্য মাটিচাপা পড়েছেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থোয়াইপ্রু মারমা (৪০) নামের একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিদের লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মিতিঙ্গাছড়ি এলাকায় পাহাড়ধসে মো: নুর নবী (৫০), তার ছেলের বউ রুবি আক্তার (২৫), নাতি রোহান (১০) নিহত হয়েছে। ঘটনাস্থলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুরনাহার বেগম, ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত বিকাশ তংচংগ্যা, ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী, ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মী এবং স্থানীয় জনগণকে চাপাপড়া লোকদের উদ্ধারকাজে সহায়তা করতে দেখা যায়। উদ্ধার করতে গিয়ে ছয়জন আহত হন। তাদেরকে চন্দ্রঘোনা মিশন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
রাইখালী ইউপি চেয়ারম্যান সায়ামং মার্মা জানান, গতকাল ভোরে তার ইউনিয়নের কারিগরপাড়া এলাকায় মাটিচাপা পড়ে দু’জন নিহত হন। তারা হলেন কারিগরপাড়া এলাকার উনুচিং মার্মা (৩০) ও মিখিই মার্মা (১২)। চন্দ্রঘোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহামুদল হাই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ জানান, গতকাল ভোরে কাপ্তাই নতুন বাজার এলাকায় ঘরের টিনের চালে গাছ পড়ে মো: আবুল হোসেন (৪৫) নামে একজন দিনমজুর আহত হন। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।
গতকাল সকালে উপজেলা সদর বড়ইছড়ি এলাকায় নদীতে গোসল করতে গিয়ে যুবলীগ কর্মী মো: ইকবাল পা পিছলে নদীতে তলিয়ে যান। এখনো পর্যন্ত তার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জানান, নৌবাহিনির ডুবুরি দলকে খবর দেয়া হয়েছে। কাপ্তাই নতুন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সাগর চক্রবর্তী জানান, গতকাল নতুন বাজার এলাকায় মাটিচাপা পড়ে এক কন্যাশিশু আহত হয়েছে। তাকে স্থানীয় উপজেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কাপ্তাইয়ের পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের উপজেলা প্রশাসনের প থেকে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
পাহাড়ধসে কাপ্তাই উপজেলা সদরের সাথে রাজস্থলী, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এ দিকে কাপ্তাই নৌ স্কাউটের স্কাউট লিডার এম জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে নৌ স্কাউটের ত্রিশ সদস্যের দল কাপ্তাইর বিভিন্ন সড়কে মাটি অপসারণ করতে মাঠে নেমেছে। কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: দিলদার হোসেন ও নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, চন্দনাইশ উপজেলায় পাহাড়ধসে উপজাতি পরিবারের দাদী ও নাতি-নাতনীসহ চারজন নিহত ও দুইজন গুরুতর আহত হয়েছে। আহতদের বান্দরবান হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল ভোররাতে উপজেলার পাহাড়ি এলাকা ধোপাছড়ি উনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শামুকছড়ি ও ছনবনিয়া এলাকায় এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলোÑ ছনবুনিয়া খেয়াংপাড়ার সিংসাউ খিয়াংয়ের স্ত্রী মোকাইয়ুং খেয়াং (৫৬) তার নাতি কেউসা (১০) পিতা কেলাও কিউ খিয়াং, মেমাও খিয়াং (১৩), একই ওয়ার্ডের শামুকছড়ির আজগর আলীর মেয়ে মাহিয়া (৩)। আহতরা হলেনÑ সানাও খিয়াং (২১), পিতা সি চাও খিয়াং এবং কেলাও কিউ খিয়ান (২৮)। ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু ইউসুূফ চৌধুরী বলেন. গত দু’দিনের ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার লুৎফুর রহমান পাহাড়ধসে চারজন নিহত ও দুইজন গুরুতর আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও দুর্গম এলাকা এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারিনি।
বান্দরবান সংবাদদাতা জানান, বান্দরবানে প্রবল বর্ষণে তিনটি স্থানে পাহাড় ধসে ৪ শিশু ও মহিলাসহ ৬ জন নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার ভোর রাতে শহরের কাছে কালাঘাটা ও লেমু ঝিড়ি এলাকায় পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। চাপা পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় এখনো দুইজনের লাশ উদ্ধার করা যায়নি।
দমকল বাহিনী সূত্র ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত ৩টার দিকে প্রবল বর্ষণের সময় শহরের কালাঘাটা এলাকার কবরস্থানের পাশে ঘরের ওপর মাটি ধসে পড়লে বান্দরবান সরকারি কলেজের ছাত্র রেবা ত্রিপুরা (২২) নিহত হন। আহত হন আরো ৩ কলেজছাত্র। এরা হলেন বীর বাহাদুর ত্রিপুরা, সূর্য চাকমা ও প্রশেন ত্রিপুরা। তারা ওই এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। রেবা ত্রিপুরা কালাঘাটার ওই এলাকায় রাতে তার বন্ধুদের সাথে থাকতে আসেন। রাতে প্রবল বৃষ্টির সময় মাটিচাপা পড়ে তিনি নিহত হন। আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অন্য দিকে লেমু ঝিড়ি জেলে পাড়া ও আগা পাড়া এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ে কামরুন্নাহার বেগম (৪০) ও তার মেয়ে সুখিয়া বেগম (৮) নিহত এবং আহত হয়েছেন কামরুন্নাহারের স্বামী আবদুল আজিজ। এ দিকে লেমু ঝিড়ি আগা পাড়া এলাকায় ঘরের ওপর মাটিচাপা পড়ে লালমহন বড়–য়ার তার ৩ শিশু সন্তান নিহত হয়েছে। এরা হলোÑ মিতু বড়–য়া, শুভ বড়–য়া ও লতা বড়–য়া। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযান শুরু করেন। তবে লেমু ঝিড়ির জেলে পাড়া এলাকার ধসে পড়া মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। সেখানে দমকল বাহিনী লাশ উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে। দমকল বাহিনীর সহকারী স্টেশন কর্মকর্তা স্বপন কুমার ঘোষ জানান, প্রবল বৃষ্টি ও ধসে পরা মাটির গভীরতা বেশি হওয়ায় মা-মেয়ের লাশ মাটি খুঁড়ে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতির খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে প্রশাসনের পক্ষ হতে। এ দিকে প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে জেলার সাংঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢলের পানিতে জেলা শহর, লামা ও আলীকদম উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার দুই সহস্রাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। সড়কের ওপর পাহাড় ধসে পড়ায় ও পানি উঠায় জেলার থানছি, রুমা, লামা ও আলীকদম উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বান্দরবানের সাথে রাঙ্গামাটির সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে গেছে।
নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, লাগাতার বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে এবং দু’দিন ধরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। পাহাড় ধসে দৌছড়ি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মৃত আলী আহাম্মদের ছেলে নূর আহাম্মদ আহত হয়েছেন। তিনি কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল।
জানা যায়, টানা বর্ষণে নাইক্ষ্যংছড়ি-রামু সড়ক, নাইক্ষ্যংছড়ি-গর্জনীয়া-বাইশারী সড়ক ও দৌছড়ি সড়কটি বিচ্ছিন্নসহ দুই উপজেলার ১০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী রয়েছেন। বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো: আলম জানান, টানা বৃষ্টিতে বাড়িঘর বিধ্বস্ত ও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে। এলাকার লোকজনকে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে সরে আরো নিচের এলাকায় বসবাসের আহ্বান জানানো হয়েছে। রাবার বাগানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির পার্শ¦বর্তী রামু উপজেলার ঐতিহাসিক শাহসুজা সড়কের কচ্ছপিয়া-গর্জনিয়া সংযোগ অংশে বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মিত ৩ কোটি ব্রিজটি একপাশের অংশ নদীতে বিলীন হতে শুরু করায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এলাকার লাখো মানুষ। গর্জনীয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামসহ শত শত স্বেচ্ছাসেবী শ্রমিক বাঁকখালী নদীতে ভাঙন রোধে কাজ করছেন।
আলীকদম (বান্দরবান) সংবাদদাতা জানান, টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে আলীকদম উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ধস ও বন্যার আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা। বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। উপজেলা প্রশাসন থেকে অন্যান্য সময় মাইকিং করা হলেও এবার মাইকিং করা হয়নি। আলীকদম ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন জানান, বন্যাপরবর্তী ত্রাণতৎপরতা শুরু করা হবে। কোন কোন এলাকা প্লাবিত হয়েছে তার খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে।
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, মিরসরাইয়ে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার বসতঘর। পানিবন্দী হয়ে আছেন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে শত শত একর আউশ রোপা, ভেসে গেছে প্রায় ছয় শতাধিক পুকুরের মাছ। গ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর দিয়ে বইছে পানির স্রোত। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে যোগাযোগব্যবস্থা। উপজেলার খইয়াছড়া ইউনিয়নের ফেনাপুনী, গোভনীয়া, আমবাড়িয়া গ্রামের প্রায় ৫০০ পরিবারের বসতঘর হাঁটু পানিতে ডুবে আছে। মসজিদিয়া, নয়দুয়ার, বুজর্নগর গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। খাজা মঈন উদ্দিন নামে একজন অভিযোগ করেন, কামারিয়া খাল, মঘাদিয়া-সাহেরখালী খালের ওপর বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে খাল দখলের কারণে খইয়াছড়া, মঘাদিয়া, মায়ানী ইউনিয়নের মানুষ বৃষ্টি হলে দুর্ভোগে পড়ে।
ওয়াহেদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজলুল কবির ফিরোজ জানান, তার ইউনিয়নের মাঝগাঁও, ছোট কমলদহ, উত্তর ওয়াহেদপুর, মধ্যম ওয়াহেদপুর, দক্ষিণ ওয়াহেদপুর, সাতবাড়িয়া, জাফরাবাদ, গাছবাড়িয়া, পদুয়া এলাকায় প্রায় এক হাজার পরিবারের বসতঘর পানিতে তলিয়ে আছে। জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের খিরমুরালী এলাকায় বসতঘরে পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক পরিবার। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকার মৎস্যচাষি কামরুল হোসেন জানান, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ওই এলাকার অনেক প্রকল্প থেকে মাছ ভেসে গেছে।
করেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন জানান, একটি খালের প্রায় এক হাজার ফুট বাঁধ ভেঙে সরকারতালুক গ্রামের প্রায় শতাধিক পরিবারের বসতঘর হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। হিংগুলি, দুর্গাপুর, সাহেরখালী, কাটাছড়া, মিরসরাই সদর ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
মিরসরাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বুলবুল আহম্মদ জানান, মিরসরাইয়ে সোমবারে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে প্রায় চার হাজার হেক্টর রোপা পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহমুদুল হক জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে ছয় শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়া আহমেদ সুমন জানান, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বিভিন্ন এলাকায় মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। যেখানে প্রয়োজন সেখানে শুকনো খাবার দেয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
এ দিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সংবাদ এক বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বলা হয়েছে, রাঙ্গামাটিতে পাহাড়ধসের পর গতকাল উদ্ধারকার্যক্রম চালানোর সময় আবারো পাহাড়ধসে দুই সেনাকর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্য নিহত হয়েছেন। গতকাল ভোরে জেলার মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি মহাসড়ক বন্ধ হয়ে গেলে রাঙ্গামাটি জোন সদরের নির্দেশে মানিকছড়ি আর্মি ক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল ওই সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে উদ্ধারকার্যক্রম শুরু করে। বেলা ১১টার দিকে পাহাড়ের একটি বড় অংশ উদ্ধারকারী দলের ওপর ধসে পড়লে তারা মূল সড়ক থেকে ৩০ ফিট নিচে পড়ে যান। পরে একই ক্যাম্প থেকে আরেকটি উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই সেনাকর্মকর্তাসহ চার সেনাসদস্যের লাশ এবং ১০ সেনাসদস্যকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া সৈনিক মো: আজিজুর রহমান (জন্ম- ২০ জুলাই ১৯৮৭, বাড়ি-মাদারীপুর, তিনি ২০০৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন; তিনি বিবাহিত এবং এক মেয়ের জনক) এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন। প্রচন্ড বৃষ্টিতে উদ্ধারকার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক গতকাল বিকেলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং উদ্ধারকার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তিনি হতাহত সেনাসদস্য ও তাঁদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
নিহতরা হলেনÑ মেজর মোহাম্মদ মাহফুজুল হক (জন্ম- ১৬ মার্চ ১৯৮১; বাড়ি- সিংড়াইল, মানিকগঞ্জ; তিনি ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৪৪ বিএমএ লংকোর্সের সাথে কমিশনপ্রাপ্ত হন; তিনি বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী এক ছেলের জনক), ক্যাপ্টেন মো: তানভীর সালাম শান্ত (জন্ম- ৩০ মার্চ ১৯৯০, বাড়ি-বাউফল, পটুয়াখালী; তিনি ২০০৯ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে যোগদান করেন এবং ৬৪ বিএমএ লংকোর্সের সাথে কমিশন প্রাপ্ত হন; তিনি সদ্য বিবাহিত), করপোরাল মোহাম্মদ আজিজুল হক (জন্ম- পহেলা মে ১৯৭৬; বাড়ি-ঈশ্বরগঞ্জ, ময়মনসিংহ; তিনি ১৯৯৫ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলে ও এক মেয়ের জনক) এবং সৈনিক মো: শাহিন আলম (জন্ম- ১ আগস্ট ১৯৮৮; বাড়ি-আদমদিঘী, বগুড়া; তিনি ২০০৬ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন; তিনি বিবাহিত এবং এক ছেলের জনক)।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/228296