১৪ জুন ২০১৭, বুধবার, ১১:৩৯

ডিপ স্টেটের শাসন

|| আলমগীর মহিউদ্দিন ||

‘ডিপ স্টেট’ শব্দদ্বয় এখন মার্কিন রাজনীতিতে সদা উচ্চারিত। বাংলায় এর অনেক প্রতিশব্দের মাঝে ‘ছায়া রাষ্ট্র’ বা ‘গুপ্তরাষ্ট্র’ বলা যেতে পারে। তবে এই ধারণা যুক্তরাষ্ট্রের জন্মের সাথে জড়িত থাকলেও এর অবস্থিতি ও কর্মকাণ্ড রাষ্ট্র-রাজ্য-সরকার-ক্ষমতার ধারণার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসেই টুইটারে লিখলেন, তিনি ‘ডিপ স্টেটে’ আক্রান্ত। এ দিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট আলোচনার দ্বার উদ্বোধন করলেন। ডিপ স্টেট কী? সাধারণভাবে বোঝানো হয়, এটা হলো দৃশ্যমান সরকারের বাইরের বা পেছনের সরকার। আর এই সরকারই আসল। এই অদৃশ্য সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধি সরকারের প্রদত্ত হুকুম, পরামর্শ বা বক্তব্য শোনে। কিন্তু বাস্তবায়ন করে নিজেদের হিসাব অনুসারে। এখন এটা সর্বজনীন এবং বিশ্বব্যাপী অনুসৃত পদ্ধতি।
এর চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন মার্কিন কংগ্রেসের সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাইকেল লোফগ্রেন তার ‘দি ডিপ স্টেট : দি ফল অব দি কনস্টিটিউশন অ্যান্ড দি রাইজ অব শ্যাডো গভর্নমেন্ট’ বইতে।
তিনি লিখেছেন, এই ছায়ারাষ্ট্রের কর্মীরাই নির্বাচনে সাহায্য করে; নির্বাচিতদের তথ্য দিয়ে তাদের নীতি ও কর্মপন্থা এমনভাবে নির্মাণ করিয়ে নেয় যেন অবশেষে তারাই এর ভোক্তা হতে পারে। অর্থাৎ এরা শাসন-শোষণ-নির্বাচন করে থাকেন নিজেদের জন্য, তবে অপরের নামে। এরা কিন্তু পেছনের দরজা দিয়ে আসেননি। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা সরকার তৈরি করে আইন প্রণয়ন করে এই গোষ্ঠীর সৃষ্টি করেছেন। এরা প্রতিষ্ঠান বা এসটাবলিশমেন্ট বলে পরিচিত, যার ওপর ভর করে থাকতে হয় সবাইকে।
এই এসট্যাবলিশমেন্ট সরকারি-বেসরকারি এবং অন্য সব সংস্থার সর্বস্তরে অবস্থিত। এসব প্রতিষ্ঠানের নীতি, কর্মপন্থা বা কর্মকাণ্ড প্রস্তুত এবং বাস্তবায়ন তারাই করে থাকেন; যদিও এগুলো প্রচারিত হয়ে থাকে জনপ্রতিনিধি বা জনগণের সেবকদের নামে। এ জন্যই দেখা যায়, কোনো এক সময়ের পরে এসব কর্মকাণ্ডের দায়ভাগ নিতে হয় জনপ্রতিনিধিদের। ফলাফল বিরূপ হলে দায়ভার পুরোটাই প্রতিনিধিদের ওপর চাপানো হয়। তবে এর ব্যতিক্রম হয় তখনই যখন জনপ্রতিনিধির অভিজ্ঞতা কর্মচারীর সাথে সাযুজ্যপূর্ণ থাকে। অর্থাৎ তিনি কর্মচারী ছিলেন এবং এখন জনপ্রতিনিধি। এরাই দুই অবস্থার অভিজ্ঞতা একত্রে ব্যবহারের ফলে সবচেয়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। এরাই হলেন ‘ছায়ারাষ্ট্র’ যার কোনো প্রতিলিপি নেই। লোফগ্রেন লিখেছেন, এখন সর্বত্র তারাই রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন।
এই ছায়ারাষ্ট্র নির্ধারণ করে কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী ক্ষমতায় যাবে। এই নির্ধারণের মূল মাপকাঠি হলো কতটুকু সুবিধা বা সুযোগ এই ক্ষমতা প্রয়াসী দল ক্ষমতায় গিয়ে তাদের দিতে পারবে। অতীতে এই প্রশ্নটি ছিল সরাসরি শক্তির সাথে জড়িত। শক্তিমানেরা ক্ষমতা সরাসরি দখল করে অস্ত্রের সাহায্যে তা রক্ষা করত। প্রতিপক্ষ তাদের চেয়ে শক্তিশালী হলে তারা ক্ষমতাচ্যুত হতো বলপ্রয়োগের মাধ্যমে। এখন এটা হয় বুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে যার নাম নির্বাচন।
তবে এই ছায়া রাষ্ট্র নিজেদের প্রয়োজনীয় তথ্যÑ সূত্র সুবিধাগুলো আহরণ বা নির্মাণ করে রাষ্ট্রের অর্থ, উপযোগিতা ও সেবা ব্যবহার করে। কখনো কখনো এই সেবা ব্যবহারের আকার বিস্ময়কর। সেজন্য এসব ব্যবহারের প্রয়োজনও তারা তৈরি করে। এসব উদ্দেশ্যে তারা নানা অভাবিত ঘটনা পেছন থেকে ঘটিয়ে থাকে।
যেমন লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফির পতন। ঘটনাটি ঘটানো হয় তখন, যখন ঋণগ্রস্ত মার্কিন সরকার প্রায় অচল হয়ে পড়লে, জনগণের অসন্তোষকে অন্য পথে চালানোর জন্য এ আক্রমণ চালানো হয়। এর ফলে আরেকটি আফ্রিকান দেশ মালিতে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়, যা ফরাসিরা চাইছিল সে দেশে হস্তক্ষেপ করার জন্য।
আবার তারা জনগণকে বোঝাল, বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সবার তথ্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ জন্য ১৭০ কোটি ডলার খরচ করে ইউটাহতে ১৭টি ফুটবল মাঠের সমান একটি দালান নির্মাণ করেছে ২০০৭ সালে। এই দালানে যে কম্পিউটার আছে তাতে এক ইওটাবাইট তথ্য আছে। অর্থাৎ ৫০০ কোটি লাখ পাতায় যে তথ্য থাকে, তার সমান। অন্য কথায়, এখানে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের তথ্য পাওয়া যাবে। এই ছায়ারাষ্ট্র ওয়াশিংটনে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছে। এক কোটি ৭০ লাখ বর্গফুটে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে ৮,৫৪,০০০ বেসরকারি গোয়েন্দা কাজ করে যাচ্ছে। তারা দেশের এবং বিশ্বের প্রয়োজনীয় সব প্রতিষ্ঠান ও মানুষের তথ্য অনুসরণ করে।
এই ছায়া সরকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে অত্যন্ত প্রাধান্য দেয়। মনোবিজ্ঞানী ড. আয়ারভিং এল জানিস বলেছেন, এই কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে গিরগিটির রঙ পাল্টানোর মতো প্রার্থিত জনগোষ্ঠীকে এক কাতারে আনা যায়। এর নাম দিয়েছেন ‘গ্রুপ থিংক’। তখন এদের যা বলা হয়, তাই মেনে নেয়। তাই দেখা যায়, এই কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে সরকার এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী নানা দিন পালন করে, অনেক স্মৃতিসভা করে, অযথাই মিছিল, আনন্দের আয়োজন করে। ড. আয়ারভিং বলেছেন, এসব ভড়ং এক দিকে জনগণের চিন্তা করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে, অপর দিকে এক বিরাটসংখ্যক অনুসারী সৃষ্টি করা এবং খুশি করা সম্ভব।
তবে এই ডিপ স্টেট পুরো সরকার নয়। লোফগ্রেন দেখিয়েছেন, এরা মূলত জাতীয় প্রতিরক্ষা, গোয়েন্দা সংস্থা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ এবং অর্থ বিভাগের একাংশের সমন্বয়ে গঠিত। এরা বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের মাঝে গোপন ও স্বতঃস্ফূর্ত যোগাযোগ রক্ষা করে। বৈদেশিক মন্ত্রণালয়কে হাতের পাঁচ আঙুলের মতো ব্যবহার করা হয়। যদি কোনো রাজনীতিবিদ ভুলে যান তার লাইনটি, এ সংস্থাগুলো তড়িৎগতিতে তা স্মরণ করিয়ে দিতে ভোলে না। তবে তারা কখনো নিজেদের ভুল স্বীকার করেন না। যেমন, লিবিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানের যুদ্ধগুলো।
এই ছায়ারাষ্ট্রের আধুনিক স্থপতি ডেভিড রকফেলার ১৯৭৩ সালে ৮৭ জন ধনী, ক্ষমতাবান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে ট্রাইলেটারাল কমিশন তৈরি করেছিলেন। নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এরা কাজ শুরু করেন। এরা ইউরোপ-আমেরিকার বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং এই কমিশনের সদস্যদের কেউ-না-কেউ আমেরিকা-ইউরোপে ক্ষমতায় গেছেন। যেমন জিবনিউ ব্রেজিনস্কি, যিনি প্রেসিডেন্ট ওবামার শিক্ষক ছিলেন। ব্রেজিনস্কি ট্রাইলেটারাল কমিশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা। এই কমিশনের সদস্য লুকাস পাপাডোমস এবং মারিও মন্টি যথাক্রমে গ্রিস ও ইতালির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই কমিশনের সদস্যরা বিশ্বব্যাংকে প্রেসিডেন্টদের বেশির ভাগ। বুশ, কিনটন, ডিক চেনি, আল গোরও এই কমিশনের সদস্য হিসেবে বিশ্বঅর্থনীতি এবং রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন; এখনো করছেন। মজার কথা, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই প্রেসিডেন্ট হওয়ার চেষ্টা করে এবং তারাই ছায়ারাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করে।
লোফগ্র্রেনের একটি তথ্য অত্যন্ত মূল্যবান। ডিপ স্টেট দু’টি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। তা হলো অপরিহার্য জাতীয় নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যিক সংস্থার আধিপত্য। জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ডিপ স্টেট জনগণের সাধারণ অধিকারটুকুও ছিনিয়ে নেয় এবং তাদের একটি ভীতির রাজ্যে নীত করে। নিরাপত্তার নাম বলে তারা রাষ্ট্রকে নানা সঙ্ঘাতে জড়িয়ে ফেলে আর্থিক সুবিধা লুটে নেয়। যেমনÑ এই স্টেট ওয়াশিংটনকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলে, দু’টি বিশ্বযুদ্ধের নায়ক তৈরি করেছে। ফলে ঋণের বোঝা চেপে যায়। এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ১৭০ কোটি ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট এই ডিপ স্টেট সম্পর্কে এক প্রণিধানযোগ্য মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘প্রকাশ্য সরকারের পেছনে সিংহাসনে আসীন থাকে এক অদৃশ্য সরকার যার জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই ও আনুগত্যও নেই।’
অ্যাটর্নি ও লেখক জন ডাবলু হোয়াইটহেড তার ‘ব্যাটলফিল্ড আমেরিকা : দি ওয়্যার অন আমেরিকান পিপল’ বইতে দেখিয়েছেন এই ডিপ স্টেটের সদস্যরাÑ মিলিটারি, পুলিশ, সংগঠিত অপরাধী সংস্থা, সরকারি কর্মচারীরা ক্ষমতাবান হচ্ছেন এবং ধনসম্পদের মালিক হচ্ছেন। সংবিধানে বিধৃত জনগণের ‘উই দি পিপল’ বলে অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই ডিপ স্টেট আসলে পুলিশি রাষ্ট্র বলতে যা বোঝা যায়, সত্যিকারভাবে তাই সৃষ্টি করেছে। অধিকারহীন জনগণ অসহায় এবং প্রায় অনুপস্থিত। তিনি বলেছেন, ‘এ অবস্থা বিরাজ করছে বিশ্বের সব দেশে এবং এটা অপরিবর্তনীয়।’
এটা অপরিবর্তনীয় এ জন্য যে, বিশ্বে এখন ‘নির্বাচিত’ সরকারের পরিবর্তনের সময় একটি স্বল্পকালীন সরকার থাকে। তারা এই স্টেট। এরাই নির্বাচন পরিচালনা করে এবং দৃশ্যত ক্ষমতা বদল করে। আসলে আড়াল থেকে এরাই সব কলকাঠি নাড়ছে। হোয়াইটহেড বলেছেন, ‘অবস্থা অপরিবর্তনীয় হওয়ার আর একটি কারণ এই স্টেটের শাসনে ধনী আরো ধনী হয়, গরিব হয় আরো গরিব, মিলিটারি আরো যুদ্ধবাজ হতে পারে। অশান্তি জিইয়ে রেখে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারে।’
ডিপ স্টেট নিজেদের আরাম-আয়েশ-নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে। হোয়াইটহেড তথ্য দিয়েছেন, ‘যদি আণবিক যুদ্ধ হয় তার ফলাফল থেকে প্রেসিডেন্সিকে বাঁচানোর জন্য ব্লুমন্টের কাছে মাউন্ট ওয়েদারে মাটির নিচে এক বিশাল শহর তৈরি রাখা হয়েছে। বিপদের সময় ডিপ স্টেটের অধিবাসীরাই সেখানে থাকবে, জনগণ নয়। লেখক জর্জ ফ্রিডম্যান এই স্টেটের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেছেন, এর জন্ম সরকার এবং ক্ষমতা ব্যবস্থার উদ্ভবের সাথে সাথে। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিতরা তাদের বশংবদদের দিয়ে যে প্রশাসনব্যবস্থা নির্মাণ করে, তারাই ছায়ারাষ্ট্র।
এই প্রশাসন ব্যবস্থা গঠন করার প্রস্তাব দেন জার্মান অর্থনীতিবিদ-আইনজ্ঞ কার্ল সুজ। তিনি বলেন, সরকার পরিচালনার জন্য অরাজনৈতিক কর্মীবাহিনীর প্রশাসন থাকা উচিত। এরা রাজনৈতিক নির্দেশে চলবে। তবে তাদের মেধাবী হতে হবে। পরে পরীক্ষার মাধ্যমে সিভিল সার্ভিসের আবির্ভাব ঘটে এবং ধাপে ধাপে তাদের অবস্থানকে সংহত-সুদৃঢ় করে। ফলে ইচ্ছে করলেই এদের সরানো সহজ নয়। দৃশ্যত সিভিল সার্ভিস রাজনৈতিক ইচ্ছার অনুগত হলেও তারা নিজেদের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে থাকে। এ জন্য এখন প্রায়ই দেখা যায়, প্রাক্তন সিভিল সার্ভিসের সদস্যরা রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছেন এবং ক্ষমতাসীন দলসহ সব রাজনৈতিক দল তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এর প্রধান কারণ, এদের মাধ্যমে ডিপ স্টেটকে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ডিপ স্টেটের প্রধান অঙ্গ হলো গোয়েন্দা বাহিনী। এর বিস্তৃত ও বিশাল বর্ণনা পাওয়া যায় ট্রেভর আরনসনের বই ‘দি টেরর ফ্যাক্টর’। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের চমৎকার বর্ণনা রয়েছে এ বইটিতে। বিশেষ করে এফবিআই এবং সিআইএ’র কর্মপন্থার একাংশের বর্ণনা। সংস্থাদ্বয়ের আছে বিশাল বাজেট ও লোকবল এবং এদের কর্মপরিধি বিশ্বজুড়ে। বিশ্বের সব দেশের গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে বা সাথে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। বইটিতে ‘ম্যানুফ্যাকচারিং টেররিস্ট’ আলোচনায় ট্রেভর দেখিয়েছেন, কাউন্টার টেরোরিজমের নামে অবিশ্বাস্য কর্মকাণ্ড করা হয়ে থাকে। আরনসন অনুসন্ধানে পান ‘এফবিআই সন্ত্রাস দমন বা প্রতিরোধের পরিবর্তে প্রান্তিক, হতাশাগ্রস্ত, বেপরোয়া, মানসিক অসুস্থ বা অপরিপক্বদের মাঝ থেকে মানুষ সংগ্রহ করে সন্ত্রাসী বানায়। অন্য কথায় এফবিআই যে শত্রু দমনের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা বরং সেই শত্রু নির্মাণে পটু।’ দেখা গেছে, তাদের চিহ্নিত সাজাপ্রাপ্ত সন্ত্রাসীরা তাদেরই একসময়ের কর্মী। এবং এই কর্মকাণ্ড নিরবচ্ছিন্নভাবে সারা বিশ্বে, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বে চলছে।
ডিপ স্টেটের একটি প্রিয় কর্মকাণ্ড হচ্ছে যুদ্ধ। তারা নানা বিষয়ের উদ্ভাবন করে বিভিন্ন রাষ্ট্রের মাঝে যুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ সঙ্ঘাত, সামাজিক অশান্তি উসকে দেয় এবং এর ফলের জন্য অপেক্ষা করে। ফল হলো, তাদের অর্থ ও ক্ষমতা লাভ। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর জে রুমেল তার ‘ডেথ বাই গভর্নমেন্ট’ বইতে আধুনিক কালের বিভিন্ন সঙ্ঘাত-যুদ্ধে ১৯০০ থেকে ১৯৮৭ সালের মধ্যে ১৬ কোটি লোক নিহত হয়েছে বলে এক অনুসন্ধানী তথ্য প্রকাশ করেন। এদের মাঝে সবচেয়ে বেশি মানুষ নিহত হয় চীনে, এরপর রাশিয়ায় এবং জার্মানিতে। চীনে মৃতেরে সংখ্যা উল্লেখ করেছেন সাত কোটি ৭০ লাখ, রাশিয়ায় ছয় কোটি ১৯ লাখ, জার্মানিতে দুই কোটি ৯ লাখ। তবে তিনি উল্লেখ করেছেনÑ ধর্মীয় বিবাদ, জাতিগত বৈষম্য, অর্থনৈতিক টানাপড়েন, শিক্ষাগত অসুবিধার কারণে এ মৃত্যুগুলো ঘটেনি।
হোয়াইটহেডের বক্তব্য, অনির্বাচিত ছায়া সরকার থাকবেই এবং লোফগ্রেনের মতেÑ এ রাষ্ট্র আড়িপাতা, অস্ত্রশক্তি, অর্থ এবং স্বার্থবাদীদের সহায়তায় এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে, এর কোনো পতন সম্ভব নয়। জনগণকে এর ভার সইতেই হবে এবং এর কর্মকাণ্ডেও কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। আর সুযোগসন্ধানী, ক্ষমতালোভীদের অভাব কখনো হবে না। জনগণ কখনো জানতে পারবে নাÑ তাদের অজান্তে তাদের সব অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে এবং তাদের শাসন-শোষণ করছে এক ুদ্র গোষ্ঠী, যারা সরকারের মধ্যে লুকিয়ে থাকে।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/228211