টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম শহরের নিচু এলাকা তলিয়ে গেছে। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে নৌকায় পারাপার হচ্ছেন দুভোর্গের শিকার নগরবাসী। সোমবারের ছবি - যুগান্তর
১৩ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ১২:৩৬

চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা : সড়কে চলেছে নৌকা

আবারও ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরবাসী। রোববার রাতভর ও সোমবার সারাদিনের বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশ নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বাসা-বাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে পড়ায় দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে গাড়ির পরিবর্তে চলেছে নৌকা। খাতুনগঞ্জের বৃহৎ পাইকারি বাজারে দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে ভারি বর্ষণে টানা চার দিন নগরী জলাবদ্ধ থাকার আট দিন না যেতেই আবারও এমন জলাবদ্ধতা নগরবাসীকে ভয়াবহ দুর্ভোগের মধ্যে ফেলে দেয়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী নিম্নচাপের প্রভাবে ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৭৭ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এতে নগরীর নিম্নাঞ্চল বিশেষ করে আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকা, শান্তিবাগ, হালিশহর, ছোটপুল, চকবাজার, বাকলিয়া, কাতালগঞ্জ, দুই নম্বর গেটসহ কোথাও কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমেছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে সব শ্রেণীর মানুষকে। বিশেষ করে অফিসগামী লোকজনকে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে নৌকায় চড়ে অনেকে গন্তব্যে গেছেন। আর আগ্রাবাদ, সিডিএ আবাসিক এলাকায় ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা রাবার বোটে করে শিশুদের সড়ক পারাপার করিয়েছেন। দুপুরে কোমর পানিতে তলিয়ে যাওয়া নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোড পরিদর্শন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের বেপারিপাড়া অংশ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে মহেশখাল খনন, অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, খালের দু’পাড়ে রাস্তা নির্মাণ, এক্সেস রোড উঁচু করে পরিকল্পিত ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করা হবে। আগামী বছর বর্ষা মৌসুমের আগে এসব কাজ সম্পন্ন করা গেলে জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ ও দুর্গতি থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে বলে জানান মেয়র। তিনি বলেন, গত বছর এখানে এভাবে পানি ওঠেনি। এ বছর পানির পরিমাণটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহেশখালের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রভাবে এটি হয়েছে বলেই অনেকের ধারণা। পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনসহ (চসিক) আরও বেশ কিছু সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান মিলে বৈঠক করে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে যত দ্রুত সম্ভব বাঁধটি অপসারণ করা হবে। জনস্বার্থে বাঁধটি তৈরি করা হলেও নগরবাসী এর সুফল এখন আর পাচ্ছে না। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে দ্রুত বাঁধটি অপসারণ করা হবে। এছাড়া এক্সেস রোডে ড্রেনেজ ব্যবস্থা পরিকল্পিত ছিল না উল্লেখ করে মেয়র আরও বলেন, ‘আমরা জাইকার অর্থায়নে প্রকল্প গ্রহণ করেছি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে ঠিকাদার নিয়োগ ও কাজ শুরু হবে। পিডির সঙ্গে কথা হয়েছে। রাস্তা অনেক জায়গায় উঁচু, কোথাও নিচু। আমরা কোথাও এক-দেড় ফুট কোথাও আরও বেশি উঁচু করব। পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পন্ন করতে পারব। এটি দীর্ঘদিনের পুরনো সমস্যা। আমাদের ইক্যুইপমেন্ট ও আর্থিক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাছাড়া চসিক জলাবদ্ধতা নিরসনে আলাদা কোনো বরাদ্দ পাইনি।’
সূত্র জানায়, নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাওয়া কিংবা জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া সাগরের জোয়ার-ভাটার ওপরও অনেকাংশে নির্ভর করে। ফলে অধিকাংশ সময় একই সঙ্গে জোয়ার ও ভারি বর্ষণে তলিয়ে যায় নগরীর নিম্নাঞ্চল। বিশেষ করে মহেশখালের ওপর বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া অস্থায়ী বাঁধের কারণে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় নগরীর সিডিএ আবাসিক, গোসাইলডাঙ্গা, বেপারিপাড়া, শান্তিবাগ, হালিশহর, ছোটপুলসহ বড় একটি এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় জোয়ার আসে। একই সময় ভারি বর্ষণ থাকায় পানি নামতে পারেনি।

নিয়মিত জলাবদ্ধতার শিকার আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের স্থানীয় বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘এ যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। ১-২ ঘণ্টার ভারি বর্ষণেই এসব এলাকা তলিয়ে যাচ্ছে। সেহরির সময় এলাকার অনেক বাসাবাড়িতে হাঁটুপানি ঢুকেছে। সকালে পুরো এলাকা কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানে রাস্তায় যানবাহনের পরিবর্তে চলছে নৌকা।’



http://www.jugantor.com/first-page/2017/06/13/132140/