১১ জুন ২০১৭, রবিবার, ১১:২০

বাজেটের খড়্গে মধ্যবিত্ত

মধ্যবিত্ত এমন একটি শ্রেণি, যারা সবচেয়ে বেশি কর দেয়, কিন্তু সুবিধা পায় সবার চেয়ে কম। তারা উপার্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, কিন্তু সেই পরিশ্রমের সুফল ভোগ করতে পারে না। সমাজ, রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডে বড় ভূমিকা রাখে মধ্যবিত্ত, অথচ তাদের অবস্থান আগের মতোই থাকে

বিয়ে-জন্মদিন বা যেকোনো পার্টির দাওয়াত পাওয়া আনন্দের। যাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও তীব্র।
কিন্তু পরক্ষণেই মাথায় আসে ভালো পোশাকের চিন্তা। অনুষ্ঠানের উপযোগী কেতাদুরস্ত পোশাক না হলে দশজনের সামনে যাওয়া যায় না। নারীদের ভাবতে হয় পোশাকের সঙ্গে মানানসই গয়না, হেয়ারস্টাইলসহ বাড়তি সাজগোজের কথা। হাল ফ্যাশনের জামাকাপড় না হলে বাচ্চাদেরও মন ওঠে না। পরিবারের সবার একসঙ্গে যাওয়ার মতো গাড়ি নেই। সেজেগুজে তো আর ভিড় ঠেলে বাসে ওঠা যায় না। আবার সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা ট্যাক্সিক্যাবে যাতায়াতে খরচ হবে অনেক টাকা। সঙ্গে যোগ হয় মান-সম্মান রক্ষা করতে পারে—এমন একটি উপহারসামগ্রী কেনার চিন্তাও। ফলে সামাজিক অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেলে আনন্দের বদলে আতঙ্কে পড়তে হয় মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষকে। না গেলেই নয় এমন দু-একটি অনুষ্ঠান ছাড়া অন্যান্য দাওয়াতের জবাবে বলতে হয়, ‘পরে একদিন যাব। ’
এ দেশের মধ্যবিত্তের বিড়ম্বনা পদে পদে। সকালে যখন অফিসের উদ্দেশে বের হয়, বাসে হুড়োহুড়ি করে উঠতে পারে না বলে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় রাস্তায়। অটোরিকশা বা ক্যাবের যে ভাড়া তাতে এক দিন উঠলেই চিন্তা আসে পরের দিনগুলো চলবে কিভাবে। সরকারি হাসপাতালের আউটডোরে লম্বা লাইনে দাঁড়াতে তার মর্যাদাবোধে বাধে; বারান্দায় শুয়ে চিকিৎসা করার মানসিকতা তার নেই। আবার বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের উচ্চ ব্যয় মেটানোর ক্ষমতাও সীমিত মধ্যবিত্তের। ভালো স্কুল-কলেজে সন্তানকে পড়াতে চায় মধ্যবিত্ত। সেখানে বেতন যা-ই হোক, কোচিং, গৃহশিক্ষক, আর যাতায়াত খরচের জোগান দিতে হয় দৈনন্দিন প্রয়োজনের তালিকা কাটছাঁট করে।
গত ১ জুন সংসদে আগামী অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করা হয়েছে তাতে কম খরচে মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা নিশ্চিত করার কোনো ঘোষণা নেই। অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, শিক্ষার মান বাড়ানো সময়সাপেক্ষ। স্বাচ্ছন্দ্যে যৌক্তিক খরচে যাতায়াতের জন্য কোনো গণপরিবহন ব্যবস্থার ইঙ্গিত নেই ওই বাজেটে। সেখানে সবার জন্য মানসম্মত কোনো স্বাস্থ্যসেবার কথাও কিছু বলা নেই, যাতে আশ্বস্ত হতে পারে মধ্য আয়ের মানুষ। বরং তাদের কপালের ভাঁজ আরো বাড়ানোর আয়োজনই রয়েছে বাজেট বইজুড়ে।
রান্নাঘর থেকে ব্যাংক, মুদি দোকান থেকে জুয়েলারি, জীবনযাত্রার জন্য জরুরি অনেক কিছুতেই বেড়েছে কর, শুল্ক, যা শুধু পরিবারের খরচই বাড়াবে। নারীদের ‘গৌরব’ স্বর্ণালংকারের ওপরও ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিয়ে-শাদি কিংবা উপহার হিসেবে স্বর্ণালংকার কিনতে ভরিতে বাড়তি খরচ করতে হবে সাত হাজার টাকার মতো।
বাজেট পেশের দিন থেকেই বেড়েছে রান্নার গ্যাসের দাম, তা আরো বাড়বে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বিদ্যুতের বাড়তি দাম কার্যকর হয়ে যায় নীরবেই। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বাসাভাড়া বৃদ্ধির ওপর, বাজেটেও কোনো উদ্যোগ নেই।
ষাটের দশকে একটি রেডিওর মধ্যে চাহিদা আটকে ছিল মধ্যবিত্তের। আশির দশকে তা রঙিন টেলিভিশনে এসে দাঁড়ায়। এখন মধ্যবিত্তের জন্য জরুরি তালিকায় যোগ হয়েছে—এলইডি টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ও ল্যাপটপ। যে মাসে এর একটি পণ্য কেনে কোনো মধ্যবিত্ত পরিবার, ওই মাসের বাকি দিনগুলো তার পার করতে হয় বন্ধুবান্ধবের কাছে ঋণ করে। তবু বাজেটে কোনো কোনোটির ওপর সম্পূরক শুল্ক বেড়েছে, মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) বসেছে আমদানি করা এসব পণ্যের ওপর।
পরিবারসহ মাসে এক দিন রেস্তোরাঁয় খাবেন, সেখানেও ভ্যাট দ্বিগুণ হয়েছে। দেশের ভেতরে বিমানে ওঠার সামর্থ্য না রাখা মধ্যবিত্ত দূরের যাত্রায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস, লঞ্চ বা রেলগাড়িতে উঠবে, সেখানেও আরোপ করা হয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। বাসে ধাক্কাধাক্কির ঝক্কি যারা পোহাতে চায় না তারা যে গাড়ি কিনতে যাবে, সেটার ওপরও উচ্চ সম্পূরক শুল্ক। ব্যবহূত, পুরনো বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি যত পুরনো হবে অবচয় ততই বেশি হবে। বর্তমানে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে মোট পাঁচ বছরের অবচয় দেওয়া হয়। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি কমিয়ে চার বছর করে অবচয় সুবিধা ৪৫ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যবহারের উপযোগী পুরনো বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম বাড়বে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন।
ঘরের ফার্নিচার, কসমেটিকস পণ্যে, সাবান, পেস্ট, টুথব্রাশে ভ্যাট অব্যাহতি নেই। দেশি ব্র্যান্ডের কাপড়চোপড়ের ওপর এত দিন ৪ শতাংশ ভ্যাট ছিল, ১ জুলাই থেকে তা বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। নিম্নবিত্তরা ফুটপাত থেকে এবং উচ্চবিত্তরা বিদেশ থেকেই বেশি পোশাক কেনে বলে কাপড়ের ওপর ভ্যাটের এই চাপ সইতে হবে মধ্যবিত্তকেই। যারা ধূমপান করে, জর্দা-গুল খায়, খরচ বাড়বে তাদেরও। মধ্যবিত্তের আড্ডার অন্যতম অনুসঙ্গ— সব ধরনের চায়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ হচ্ছে ১ জুলাই থেকে। ফলে দাম বাড়বে চায়েরও।
মসলায় ভ্যাট অব্যাহতি দিলেও আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক বসিয়ে কেনার আগেই দাম বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ল্যাপটপ, ট্যাব কিংবা কম্পিউটার না থাকা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো স্মার্টফোনেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে নানা প্রয়োজন মেটাচ্ছে। সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর কারণে স্মার্টফোন কিনতেও ১ জুলাই থেকে বাড়তি খরচ করতে হবে ক্রেতাকে। মধ্যবিত্তের বাড়তি খরচ হবে শপিং করতে গেলে; সব ধরনের কাপড়চোপড়, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকস পণ্য এবং সন্তানের শিক্ষা উপকরণ কেনার ক্ষেত্রে।
এত জায়গায় বাড়তি কর-ভ্যাটের চাপ সওয়ার পরেও ভবিষ্যতের কথা ভেবে কিছু সঞ্চয়ের চেষ্টা থাকে মধ্যবিত্তের। ব্যাংকে সেই সঞ্চয় লাখ টাকা পার হলেই সরকারকে দিতে হবে আবগারি শুল্ক। বাড়তি কিছু মুনাফার আশায় অবসরপ্রাপ্ত মধ্যবিত্ত নিজের সম্বল বিনিয়োগ করেন সঞ্চয়পত্রে, সেখানেও সুদের হার কমানোর অশনি সংকেত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে বারবার পুঁজি খোয়ানো মধ্যবিত্তের সঞ্চয় লাভজনকভাবে নিরাপদে বিনিয়োগ করার পথও সংকুচিত হচ্ছে।
সব পণ্য ও সেবায় ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কারণে জীবনযাপন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সামাজিকতা রক্ষা—সব ক্ষেত্রেই বাড়তি ব্যয় করতে হবে মধ্যবিত্তকে। কিন্তু এসব পরিবারের বেকার সন্তানদের কর্মসংস্থানের কোনো ঘোষণা নেই বাজেটে, চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয় বাড়ানোর কোনো পথ দেখানো হয়নি ঘোষিত বাজেটে। দুই বছর পর করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে মধ্যবিত্তের কাতারে তলায় থাকা মানুষদের একটু স্বস্তি দেওয়ার উদ্যোগ থাকতে পারত এবারের বাজেটে; তা-ও নেই।
আর্থিক চাপ ছাড়াও সমাজের আরো নানা দায় এসে পড়ে মধ্যবিত্তের ঘাড়ে। উচ্চবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা সমাজের অনেক কিছু থেকেই রেহাই পায়; কিন্তু মধ্যবিত্তদের রেহাই নেই। তারা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিরাপদ করতে কঠোর পরিশ্রম ও ভালো শিক্ষার ব্যবস্থা করার চাপ নেয়। এটা মধ্যবিত্তের সন্তানদের মধ্যে এক ধরনের মূল্যবোধ তৈরি করে। ফলে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা না থাকায় মধ্যবিত্ত পরিবারের বেকাররা অর্থসংকটের মধ্যেও বাড়ির দারোয়ান, গার্মেন্টের শ্রমিক কিংবা রাস্তার মোড়ে ছোট্ট দোকানের বিক্রেতা হতে পারে না। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটে মধ্যবিত্ত, শিক্ষিত বেকার শ্রেণির কর্মসংস্থানের কোনো উদ্যোগের কথা বলা নেই।
মধ্যবিত্তের বড় সমস্যা, তারা ধনীও নয়, গরিবও নয়। গরিব মানুষ যেসব ভর্তুকি বা সরকারের সেবা পায়, মধ্যবিত্ত হাত পেতে তা নিতে পারে না। আবার ধনীদের মতো প্রাচুর্য, প্রভাব-প্রতিপত্তিও নেই তাদের। তাদের আয় এতই সীমিত যে তারা তাদের দৈনন্দিন চাহিদার ৯০ শতাংশও পূরণ করতে পারে না। মধ্যবিত্ত এমন একটি শ্রেণি, যারা সবচেয়ে বেশি কর দেয়; কিন্তু সুবিধা পায় সবার চেয়ে কম। তারা উপার্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করে, কিন্তু সেই পরিশ্রমের সুফল ভোগ করতে পারে না। সমাজ, রাষ্ট্রের সব কর্মকাণ্ডে বড় ভূমিকা রাখে মধ্যবিত্ত, অথচ তাদের অবস্থান আগের মতোই থাকে।
বাংলাদেশে বেশির ভাগ মধ্যবিত্তের বড় সমস্যা বাড়িভাড়া। বছরে অন্তত একবার করে এই ভাড়া বাড়ছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে বাজেটে কিংবা বাজেটের বাইরে কোনো উদ্যোগ নেই। বরং কোনো মধ্যবিত্ত ফ্ল্যাট কিনতে গেলে তাকে আগের চেয়ে বেশি হারে ভ্যাট গুনতে হবে আগামী অর্থবছর থেকে। নতুন কোনো ফ্ল্যাট কিনলে ৭.৫ শতাংশ, পরে দুই বছর পর তা বিক্রি করলে তখন দ্বিতীয় ক্রেতাকেও নতুন করে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট গুনতে হবে।
বাংলাদেশে রড-সিমেন্টের বড় ক্রেতা মধ্যবিত্ত। একসময় কুঁড়েঘর সরিয়ে টিনের ঘর যেমন এরাই নির্মাণ করত, এখন টিনের ঘরের বদলে পাকা ঘর করতে রড-সিমেন্টের বড় ক্রেতাও মধ্যবিত্তই। পাকা ঘর নির্মাণে ব্যবহূত রড, সিমেন্ট, ইট, সিরামিক বা টাইলসসহ বিভিন্ন নির্মাণ উপকরণের ওপর ভ্যাটের হার বেড়ে ১৫ শতাংশ হয়েছে। এতে গ্রামীণ মধ্যবিত্তের পাকা ঘর, পরিবেশসম্মত পাকা টয়লেট নির্মাণে যেমন বাড়তি ব্যয় হবে, তেমনি অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হবে শহুরে ভবন নির্মাতাদেরও।
হালে যৌথ পরিবার প্রথা ভেঙে যাওয়ায় মধ্যবিত্তরা শেষ জীবন নিয়ে আতঙ্কিত। তাদের মধ্যে সরকারি চাকরিজীবী যাঁরা, তাঁদের পেনশন আছে, জীবনভর নানা ভাতা আছে। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী কিংবা অন্য পেশাজীবীদের শেষ জীবনে খাওয়া-পরা ও চিকিৎসার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সরকার বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য পেনশনব্যবস্থা চালুর কথা কয়েক বছর ধরে বললেও বাজেটে এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগের কথা বলা নেই।
২০১৫ সালের জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ হয়েছে। এরপর কয়েক দফা গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সময় চাকরিজীবীদের এই বেতন বৃদ্ধিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। কিন্তু এই সময়ে দেশের ৮০ শতাংশেরও বেশি মধ্যবিত্ত বেসরকারি চাকুরে, ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই সময়ে তাদের আয় দ্বিগুণ করার কোনো উদ্যোগ না থাকলেও বাড়তি ব্যয়ের পুরো চাপ বহন করতে হচ্ছে তাদের।
গত ১ জানুয়ারি বাংলাদেশ ই-জার্নাল অব সোসিওলজিতে প্রকাশিত বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত নিয়ে এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে উচ্চ মধ্যবিত্তদের একটি অংশ নির্দিষ্ট সময় পর উচ্চবিত্তের কাতারে যোগ দেয়। তবে নিম্ন মধ্যবিত্তরা চাহিদার সঙ্গে নিজেদের আয় মেলাতে না পেরে এমনভাবে চলতে বাধ্য হয় যে নিম্নবিত্ত হিসেবে স্বীকৃত ‘শ্রমজীবী শ্রেণি’ থেকে তাকে আলাদা করা খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকি রাস্তার ফুটপাতে পণ্য বিক্রেতা ও ট্যাক্সিচালকরাও এখন অনেক স্কুল শিক্ষক ও কম বেতনের নির্বাহীদের তুলনায় বেশি আয় করছে।
অর্থনীতির বিশ্লেষক মামুন রশীদ কালের কণ্ঠকে বলেন, সারা পৃথিবীতে মধ্যবিত্তের স্বার্থ বিশেষভাবে রক্ষা করে বাজেট প্রণয়ন করা হয়। ভারতের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও বলেছেন, মধ্যবিত্ত হলো অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। তার হাতে একটা টাকা থাকা মানেই তা দিয়ে কোনো না কোনো পণ্য কিনে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখা। কোনো মধ্যবিত্তের সঞ্চয় বাড়লে সে তা দিয়ে দামি জিনিস কেনে, সন্তানের জন্য ভালো পড়াশোনার ব্যবস্থা করে, পরিবারের সদস্যদের জন্য ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। তাঁর মতে, মধ্যবিত্তের এই ভোগচাহিদা স্বল্প মেয়াদে এবং দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের যেসব দেশ অর্থনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, সব কটি দেশই তাদের মধ্যবিত্তের ওপর ভর করে টিকে আছে। এ কারণে সব দেশই চায় মধ্যবিত্তের হাতে টাকা বাড়ুক। তারা আরো বেশি করে পণ্য ও সেবা কিনুক। উৎপাদন বাড়ুক। শিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হোক। তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে বাংলাদেশের মধ্যবিত্তকে স্বস্তি দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেই। অর্থমন্ত্রী নিজেও করমুক্ত আয়সীমা বাড়াবেন বলেছিলেন; কিন্তু বাড়াননি। অথচ গত দুই বছরে মূল্যস্ফীতির কারণে চাকরিজীবীদের প্রকৃত বেতন কমে গেছে। এ অবস্থার মধ্যে মধ্যবিত্তের ভোগসামগ্রীর ওপর ঢালাওভাবে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট বসানো হয়েছে, আমানতের ওপর আবগারি শুল্ক বসানো হয়েছে। তারা গাড়ি কেনে, গাড়ি সার্ভিসিং ও মেরামত করে—সব ক্ষেত্রেই বাড়তি শুল্ককর বসানো হয়েছে। করমুক্ত বিনিয়োগসীমা বাড়ানোর মাধ্যমেও মধ্যবিত্তকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া যেত, তা-ও করা হয়নি। করমুক্ত আয়সীমা না কমিয়ে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার করের হার কিছুটা কমানোর সুযোগ ছিল, সেটাও করা হয়নি। বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত এমনিতেই চাপের মধ্যে ছিল। এই বাজেট সেই চাপের মাত্রা আরো অনেকটাই বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন মামুন রশীদ।

http://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2017/06/11/507540