১০ জুন ২০১৭, শনিবার, ৮:৪৮

আইএমএফের মূল্যায়ন

বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে রাজনৈতিক অস্থিরতা

ঋণ বিতরণে সরকারি ব্যাংকগুলোকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ * ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৭.১%

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। অর্থনীতিতে বর্তমানে যে প্রবৃদ্ধি ধারায় বয়েছে তা মধ্যবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা শঙ্কার কারণে প্রধান রফতানি বাজারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, পাশাপাশি রেমিটেন্স প্রবাহ মন্থর করে দিতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ ২০১৭ পর্যন্ত আইএমএফ উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে। সে সফরের বিস্তারিত নিয়ে শুক্রবার ওয়াশিংটন থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। ওই সফরে আইএমএফ মিশনপ্রধান ছিলেন ব্রায়ান এইটকেন। আইএমএফের প্রতিবেদনে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ১ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়। এই হার বাংলাদেশ সরকারের করা প্রাক্কলনের তুলনায় কম। সম্প্রতি বাংলাদেশে পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য উদ্ধৃত করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই সময়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ দশমিক ২৪ শতাংশ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। অপরদিকে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে সরকারি খাতের ব্যাংকগুলো খেলাপি হতে পারে এমন ঋণ বিতরণে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। ঋণ দেওয়ার আগে গ্রাহক সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। বাংলাদেশে খেলাপি ঋণ আদায় করা কঠিন, তবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আদায় না হলে এসব ঋণ অবলোপন করতে হবে। আইএমএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতির অগ্রগতি এখনও রফতানি ও রেমিটেন্সের ওপর নির্ভর করে চলছে। বিগত কয়েক বছর যাবৎ দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে, যা অর্থনীতির স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত। এতে বলা হয়েছে, অর্থনীতিতে যে প্রবৃদ্ধি এসেছে তা মধ্যবর্তী সময়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়বে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ জন্য মধ্যম আয়ের দেশে উত্তীর্ণ হতে সামষ্টিক নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে ও প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বাড়াতে হবে। ঋণ পরিস্থিতির অবনতি না করে সরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উদ্ধৃত সঞ্চয়কে কাজে লাগাতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। একই সঙ্গে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে, সেটিও নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বড় আকারের বিনিয়োগ প্রয়োজন, এ জন্য দীর্ঘ মেয়াদে জনগণের সঞ্চয়কে কাজে লাগাতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পক্ষে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। জনগণের সঞ্চয়কে দেশের পুঁজিবাজারে নিতে হবে, এ জন্য নীতিগত ব্যবস্থা নিতে হবে, যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। আইএমএফের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, উচ্চ সুদের জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর অতিনির্ভরতা আর্থিক খাতের উন্নয়নে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা, যা সরকারি আর্থিক উপকরণের (সিকিউরিটিজ) শক্তিশালী বাজার তৈরিতেও বাধা। সামাজিক সুরক্ষা খাতে লক্ষ্য অর্জনে এবং আর্থিক বাজারের স্থিতিশীলতা রক্ষা করে বিকল্প পন্থায় অর্থায়নের সংস্থান করতে হবে, যা হবে কম খরচে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজস্ব আহরণে গতি সৃষ্টি, সরকারি বিনিয়োগ ও কাক্সিক্ষত আর্থিক প্রবৃদ্ধির জন্য করব্যবস্থায় ব্যাপক আধুনিকায়ন প্রয়োজন। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকরে নিশ্চিতভাবেই রাজস্ব আহরণ বাড়বে। এর মাধ্যমে সরকার নানা উপকার নেয়ার সুযোগ পাবে। এতে কর প্রশাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে। একই সঙ্গে কর প্রদানকারীরও অভিযোগ কমে আসবে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/06/10/131327/