৮ জুন ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ১১:১৭

পঞ্চম শ্রেণিতেই থাকছে প্রাথমিক শিক্ষা, ৬২৭ স্কুল নিয়ে সংকট

শিক্ষানীতি অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা স্তর নির্ধারিত হওয়ায় তা কার্যকরের উদ্যোগের মধ্যেই এ অবস্থান থেকে সরে আসছে সরকার। আগের মতোই পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিকের স্তর ঠিক রেখে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা অব্যাহত রাখার বিষয় ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে করণীয় ঠিক করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীরের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে দেয়া হয়েছে। কর্মকর্তারা বলছেন, পাইলটিং হিসেবে সারা দেশে ৬২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি চালু করে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল পাওয়া যায়নি। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রায় এক বছর আগে মৌখিকভাবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে ন্যস্ত করলেও প্রশাসনিক জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় দালিলিকভাবে তা হস্তান্তর করতে পারছে না। এ অবস্থায় এখনই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতকরণ ঠিক হবে কিনা সে সম্পর্কে তারা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হলেও বাংলাদেশে এই মুহূর্তে এর বাস্তবতা রয়েছে কিনা, কিংবা এটার আদৌ প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে সম্পর্কে ভেবে দেখা প্রয়োজন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সায় মিলছে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখনো প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার সময় আসেনি বলে মত দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবে শিক্ষানীতির মূল এজেন্ডা প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার নীতি থেকে সরে আসছে সরকার। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে অষ্টম শ্রেণি থেকে সরে আসার বিষয়টি পরিষ্কার করবে শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষানীতি থেকে সরকার সরে যাচ্ছে বিষয়টি এমন নয়। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে না এটা নিয়ে চূড়ান্তভাবে বলার সময় এখনো আসেনি। কমিটি কাজ করছে। তাদের মূল্যায়নের পর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এখনো চাই প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত হোক। কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত থাকবে কিনা তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরার। আমাকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। আমি ছাড়াও অতিরিক্ত সচিব, দুজন মহাপরিচালক আছেন। তাদের নিয়ে কাজ করছি। বাস্তব চিত্রটা খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাইলটিং হিসেবে ২০১৩ সালে ৫০৩টি এবং ২০১৪ সালে ১২৪টি, মোট ৬২৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা হয়। ওইসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের অধীনে। এর মধ্যে গত বছর ৩৮টি বিদ্যালয়ে জেএসসিতে পাসের হার ৫০ শতাংশের কম ছিল। গত বছর প্রকাশিত অষ্টম শ্রেণির জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সিলেট বোর্ডে গড় পাস করে ৯৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী। বাকি স্কুলগুলোর রিপোর্ট সংগ্রহ করছে কমিটি। সেই স্কুলগুলোর ফল ৬০%-এর নিচে। এসব স্কুলে ফল খারাপ হওয়ার অন্যতম কারণ এখানে ন্যূনতম অবকাঠামো ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই।
অন্যদিকে মাধ্যমিকে এখনো ৭১ হাজার শিক্ষক প্রশিক্ষণ পাননি। সম্প্রতি সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটে মাধ্যমিক শিক্ষা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিদ। মাধ্যমিক শিক্ষায় মানসম্মত শিক্ষকের অভাব খুবই প্রকট। এ স্তরে শিক্ষার মান বেশ নিম্নপর্যায়ে রয়েছে। এ অবস্থায় প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করলে জটিলতা আরো বাড়বে। ভেঙে পড়বে দুই স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার মান হতাশাজনক হওয়ার জন্য দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শিক্ষকের অভাবকেই প্রধান বাধা হিসেবে দেখছেন শিক্ষাবিদরা।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=68913&cat=6/