৭ জুন ২০১৭, বুধবার, ১০:৫৮

তীব্র সমালোচনার পর আবগারি শুল্কে পরিবর্তনের আভাস!

* আবগারি শুল্ক আগেরটাই বহাল থাকতে পারে -অর্থ প্রতিমন্ত্রী
* আবগারির বিরূপ প্রভাব বিবেচনা করা হচ্ছে -মোহাম্মদ নাসিম

সব সেক্টরে ব্যাপক সমালোচনার পর বাজেটের ষোষিত আবগারি শুল্কে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া গেছে। তবে সরকার কৌশলে আবগারি শুল্কের কোন একটি পর্যায়ে পরিবর্তন এনে অন্যান্য বেশকিছু ক্ষেত্রে বৈধতা নেয়ার চেষ্টা করবে বলেও ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় সংসদেও এই আবগারি শুল্ক নিয়ে কড়া সমালোচনা করা হচ্ছে। সরকারের অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমের সাম্প্রতিক বক্তব্য থেকে আবগারি শুল্ক বিষয়ে পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। তবে অর্থমন্ত্রী গতকাল সংসদে বলেছেন, এটা নিয়ে খামাখা বির্তক হচ্ছে। আবগারি শুল্ক আগে থেকেই ছিল। এই বাজেটে শুধু কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
এদিকে জাতীয় সংসদ থেকে চায়ের দোকান সর্বত্রই এই আবগারি শুল্ক বা ব্যাংকে গ্রাহকের আমানতের উপর কর নিয়ে বিতর্ক এখন তুঙ্গে । সাধারণ গ্রাহক, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সংগঠন, অর্থনীতির রিসার্চ সেন্টার থেকে সবাই এই আবগারি শুল্ক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করেছেন। জাতীয় সংসদেও এই শুল্ক নিয়ে ব্যপক আলোচনা হচ্ছে। দুদিন আগে ১৪ দলের পক্ষ থেকে আবগারি শুল্ক নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে ব্যাংকে আমানতকারীদের নতুন আতঙ্ক আবগারি শুল্ক নিয়ে বিতর্ক চলছেই। সব কিছু ছাপিয়ে এখন আলোচনায় শীর্ষ বিন্দুতে উঠে এসেছে বিষয়টি। সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠেছে গ্রাহকের গচ্ছিত টাকায় আগের ৫শ; টাকার পরিবর্তে আরও ৩০০ টাকা শুল্করোপ নিয়ে। ফুটপাত থেকে সরকারের শীর্ষ পযায়ে দাবি উঠেছে এ বর্ধিত শুল্কহার প্রত্যাহারের। এমতাবস্থায় ব্যাপক সমালোচনা আর জনসমর্থন না থাকায় তুলে নেয়ার আভাস পাওয়া যাচেছ প্রস্তবিত বাজেটে আরোপিত ব্যাংক অ্যাকাউন্টের উপর আবগারি শুল্ক হার। বাজেটের প্রস্তাবিত ৮০০ টাকা থেকে কমিয়ে এটা ৬০০ করা হতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক হিসাবে এক লাখ টাকার বেশি থাকলে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০০ টাকা কর্তন করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রীর এ ধরনের প্রস্তাবের পর সারাদেশে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমেও চলছে এ নিয়ে অসন্তোষ আর ছড়িয়ে পড়ছে ক্ষোভের দাবানল। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সরকারের শীর্ষকর্তা ব্যক্তিরাও।
বর্ধিত আবগারি শুল্কারোপ নিয়ে অনেকটা চাপে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও তিনি এ বিষয়ে এখনো প্রকাশ্যে কিছু বলেননি। তবে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে জনগণের দাবি বিবেচনায় আনার কথা বলা হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, ব্যাংক হিসাবে আবগারি শুল্ক নতুন কিছু নয়। এটি ১৯৪৭ সাল থেকে প্রচলিত আছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে এটাকে একটু বেশি বৃদ্ধি করায় সমালোচনা হচ্ছে।
বাজেটের প্রস্তাবিত নিয়ম অনুযাযী, ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা থাকলে বাৎসরিক (ডিসেম্বর মাসে) ৮০০ টাকা আবগারি শুল্ক কেটে রাখা হবে। যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত হলে নেয়া হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা । যা বর্তমান হিসাবে হবে ১ হাজার ৫০০ টাকা। ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকাহিসাবে থাকলে ১২ হাজার টাকা কেটে রাখা হবে। এখন যা সাড়ে ৭ হাজার টাকা। ৫ কোটি টাকার বেশির ক্ষেত্রে কেটে রাখা হবে ২৫ হাজার টাকা। যা চলতি অর্থবছরের হিসাবে হতো ১৫ হাজার টাকা। বাজেটে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে অস্থিরতা ব্যাংক খাতকে আকড়ে ধরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অনেকেই অর্থপাচার বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন।
ব্যাংক লেনদেনে নতুন আবগারি শুল্করোপে ‘অর্থপাচার’ হবার শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। সংগঠনটির সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলছেন- মূলধন গঠন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান তথা সামগ্রিক ব্যবসায়িক কার্যক্রমের জন্য গ্রাহকরা ব্যাংক লেনদেন করে থাকেন। ব্যাংকে অর্থ জমা রাখার ক্ষেত্রে আবগারি বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহকরা আমানত রাখতে নিরুৎসাহিত হবে। ফলে অর্থ ব্যাংক চ্যানেলে না গিয়ে ইনফরমাল চ্যানেলে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য প্রস্তাবিত বর্ধিত শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন বলেন, কোন বিবেচনায় ব্যাংকের আবগারি শুল্ক বাড়ানো হলো বোধগম্য নয়। বেশি সমালোচিত হওয়ার আগেই প্রস্তাবিত শুল্ক প্রত্যাহার করা মঙ্গল হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মদ, গাজাসহ কিছু পণ্য রোধকল্পে আবগারি শুল্ক হয়। এবারের বাজেটে ব্যাংকিংয়ে আবগারি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। মানুষকে ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে বিরত রাখতেই এই আবগারি শুল্ক।
বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাবধারীদের মধ্যে কয়েকজন জানান, মাস শেষে বেতনের একটা অংশ ব্যাংকে জমিয়ে রাখি-ভবিষ্যতের আশায়। কস্টের এ টাকা থেকে সরকার লাখে ৮০০ টাকা নিলে আমরা খুব সমস্যায় পড়ে যাবো। বছর শেষে গচ্ছিত টাকার একটা অংশ চলে যাবে। যেখানে টাকা আসবে, সেখানে কমে যাওয়া মেনে নেয়া যায় না। আশা করি সরকার আমাদের কথা বিবেচনা করবে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম সম্প্রতি বলেছেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের কয়েকটি বিষয় জনগণের আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। আবগারি শুল্ক ও সারচার্জসহ কয়েকটি বিষয়ে আমাদের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। আবগারি শুল্ক ও বিভিন্ন সাব সার্জ, যেগুলো জনগণের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে- এগুলো বিবেচনা করা হবে।
সমালোচনা নিয়ে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, ব্যাংকের আবগারি শুল্ক বাড়ানোর বিষয়ে যে হারে সমালোচনা হচ্ছে। এটা নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা করে সমাধান বের করা হবে। আবগারি শুল্ক আগেরটাই বহাল থাকতে পারে।


http://www.dailysangram.com/post/287035-