৭ জুন ২০১৭, বুধবার, ১০:৪৫

রমজান মাসই টার্গেট ছোলা ব্যবসায়ীদের

আমদানিকারক থেকে খুচরা পর্যায়ে তিন স্তরে প্রতি কেজিতে দাম বাড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা

সারা বছর ভোক্তাদের কাছে ছোলার চাহিদা তেমন একটা থাকে না। রমজান এলেই ছোলার চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। আর এ বাড়তি চাহিদাকে টার্গেট করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। তারা সিন্ডিকেট করে ছোলার দাম বাড়িয়ে দেয়। যার কারণে প্রতি বছর এ সময় ভোক্তারা বেশি দাম দিয়ে ছোলা কিনতে বাধ্য হন। রমজান মাসের প্রথম দিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ছোলার দাম বেড়েছে ৫-৭ টাকা।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের মে মাসে প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে বিক্রি হয়েছে ৬০-৬৫ টাকায়। তবে বিশ্ববাজারে দাম বাড়ায় এবার আগের দামে ছোলা কেনা যাবে না। বিশ্ববাজার থেকে কেনা ছোলা খুচরা বাজারে প্রায় ৩৩ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকারক থেকে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত তিন স্তরে প্রতি কেজি ছোলায় দাম বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। যেমন মিয়ানমারের ছোলার আমদানি মূল্য টনে ৯০০ ডলার (কেজিতে ৭২ টাকা), ভোক্তার হাতে পৌঁছার পর এর দাম পড়ছে ১ হাজার ২৫০ ডলার (কেজিতে ১০০ টাকা)। গত এপ্রিল থেকে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ছোলা আমদানি হয় ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৬৮ টাকায়, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়। বন্দর থেকে ছোলা খালাসসহ আনুষঙ্গিক খরচ পড়ে কেজিতে তিন টাকা।

এদিকে দাম বাড়ার কারণ হিসেবে পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ছোলার বাজার অস্থির হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে আমদানিকারকের সংখ্যা কমে যাওয়া। গত অর্থবছরে ৯৮টি প্রতিষ্ঠান ছোলা আমদানিতে যুক্ত ছিল। এ বছর আমদানিকারকের সংখ্যা নেমে এসেছে ৫৬ জনে। আমদানিকারকের সংখ্যা কমার পাশাপাশি ছোলার আমদানিও কমেছে। যার কারণে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে প্রতিযোগিতা কমতে থাকায় এভাবে হঠাৎ করেই কোনো কারণ ছাড়া বাড়ছে ছোলার দাম। অন্যদিকে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন।

তবে প্রথম থেকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশে ছোলার পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে তাই দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছর দেশে ছোলা আমদানি হয়েছিল ৩ লাখ ৮৪ হাজার টন। আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৮৮ হাজার টন। এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছর ৪২ হাজার টন ছোলা বেশি আমদানি হয়েছে। সরেজমিন রাজধানীর মৌলভীবাজার ও কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি কানাডিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৭৭-৭৮ টাকায়। এক মাস আগে একই ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৭০-৭২ টাকা। এ হিসাবে মাসের ব্যবধানে কানাডিয়ান ছোলার পাইকারি দাম বেড়েছে ৭ টাকা। রাজধানীর পাইকারি বাজারগুলোয় বর্তমানে প্রতি কেজি অস্ট্রেলিয়ান ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮১ টাকায়। এক মাস আগে যা ছিল ৭৪-৭৫ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে কেজিতে ৬ টাকা দাম বেড়েছে অস্ট্রেলিয়ান ছোলার। অন্যদিকে খুচরা বাজারগুলোয় দাম আরও বেশি। বর্তমানে প্রতি কেজি ছোলা মানভেদে ৮৫-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মঙ্গলবারের বাজার দরের তথ্যমতে, বর্তমানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রির দাম দেয়া আছে ৮০-৯৫ টাকায়, যা এক মাস আগের দাম ৮০-৯০ টাকা। এদিকে রমজানে বাজার স্থিতিশীল রাখতে রোজার আগ থেকেই খোলাবাজারে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। সংস্থাটি প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি করছে ৫৫ টাকায়। একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ চার কেজি পর্যন্ত ছোলা কিনতে পারবেন টিসিবির বিক্রয় কেন্দ্র থেকে।

 

http://www.jugantor.com/industry-trade/2017/06/07/130688/