৭ জুন ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৯

হাইরিস্কের তালিকায় বাংলাদেশ

বাংলাদেশকে ‘হাইরিস্ক’ কান্ট্রি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে আকাশ পথে কার্গো পণ্য পরিবহনে শর্ত আরোপ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউভুক্ত দেশগুলোয় কার্গোতে পণ্য পাঠাতে বাড়তি তল্লাশির শর্ত দেয়া হয়েছে। গত সোমবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি’র চেয়ারম্যান এহসানুল গনি চৌধুরীসহ এভিয়েশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানে ইইউ’র বিধি-নিষেধের বিষয়ে চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হয়। সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে কুয়েত, সোমালিয়া, মিশর ও ইয়েমেনকে উচ্চ ঝুঁকির দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ইইউ। এ কারণে উড়োজাহাজে করে কার্গো পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তল্লাশি বাড়ানোর অনুরোধ করেছে ইইউ। বিমানবন্দরে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্র যুক্ত করার তাগিদও দিয়েছে তারা। ইইউ এ-ও বলেছে, ঢাকায় ওই তল্লাশি সম্ভব না হলে ট্রানজিট পয়েন্টে অর্থাৎ দুবাই, দোহা, ইস্তাম্বুল ইত্যাদি কোন স্থানে পণ্য স্ক্যান করতে হবে। ওই পণ্যে কোন বিস্ফোরক আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার পরই ইইউ’র বাজারে তা প্রবেশ করবে। বাংলাদেশকে ইইউ’র নীতিমালা মেনেই পণ্য পাঠাতে হবে বলেও সতর্ক করেছে ইইউ। উল্লেখ্য, নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রায় এক বছর আগে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো পরিবহন বন্ধ করে দেয় বৃটেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়নে বৃটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইনকে নিয়োগ দেয়াসহ নানামুুখি উদ্যোগ নেয়া বাংলাদেশ। কিন্তু তার পরও বৃটেনের সেই নিষেধাজ্ঞা এখনও প্রত্যাহার হয়নি। এ অবস্থায় ইইউ’র ওই নতুন বিধি-নিষেধ এলো। এ নিয়ে গতকাল নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, প্র্যাকটিক্যালি আমাদের উপর কোনো কার্গো ব্যান্ড (নিষেধাজ্ঞা) আরোপ করা হয়নি। এটা হয়েছে যে, বাংলাদেশ অ্যাজ এ হোল কান্ট্রি হিসেবে ইইউ হাইরিস্ক কান্ট্রি হিসেবে ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ হাই রিস্ক বা উচ্চ ঝুঁকির দেশগুলোর তালিকায় ইইউ বাংলাদেশকেও রেখেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে কোনো চিঠিপত্র বা কোনো কমিউনিকেশন কখনই হয়নি। তারই পরিপ্রেক্ষিতে নিউজটা এসেছে। মন্ত্রী বলেন, সেখানে সেকেন্ডলি স্ক্যানিংয়ের ব্যাপারে বিমানকে তারা চিঠি দিয়েছে। বলেছে, সেকেন্ড ইন্সপেকশন বা পরিদর্শন হতে হবে। অ্যাজপার ইইউ রেগুলেশন। অর্থাৎ এটাই ইইউ’র নীতি। মন্ত্রী বলেন, এটা কেবল এয়ার কার্গোর ক্ষেত্রে নয়, শিপিংয়ের ক্ষেত্রেও তাই। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইইউ প্রতিনিধিরা সিভিল এভিয়েশনকে জানায়, বাংলাদেশ ‘হাইরিস্ক’ দেশ। তাই নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য আকাশপথে কার্গোর মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে যাবে, সেসব পণ্য দ্বিতীয় দফায় স্ক্যানিং করতে হবে। অর্থাৎ আকাশপথে কার্গোর মাধ্যমে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশগুলোতে যেসব পণ্য যাবে, সেসব পণ্য স্ক্যানিং-এ (তল্লাশি) সেকেন্ডারি মেথড ফলো করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সিভিল এভিয়েশনকে দ্বিতীয় ধাপে স্ক্যানিং বলতে এক্সপ্লোসিভ ডিটাকশন মেথড ফলো করার কথা বলেছে। বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ইইউ বলেছে, হাইরিস্ক কান্ট্রি হওয়ার ফলে তিনটা অলটারনেটিভ ব্যবস্থা করবে স্ক্যানিংয়ের ব্যাপারে। একটা হলো এক্সপ্লোসিভ ডিটেকটিভ সিস্টেম (ইডিএস) দ্বারা সকল কার্গো ও মেইল শতভাগ তল্লাশি করা, শতভাগ এক্সপ্লোসিভ টেস্ট ডিটেককশন (ইটিডি) বা শতভাগ এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন ডগ (ইডিডি)। সিভিল এভিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিস্ফোরক শনাক্তকরণ যন্ত্রসহ আধুনিক স্ক্যানিং যন্ত্র বসানো প্রক্রিয়া চলছে। যাত্রীদের লাগেজ তল্লাশি, যানবাহন তল্লাশি, তরল বিস্ফোরক শনাক্ত করতে আলাদা আলাদা যন্ত্র বসানো হচ্ছে। বৃটিশ প্রতিষ্ঠান রেডলাইনের পরামর্শে এসব যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এর মধ্যে বেশকিছু যন্ত্রপাতি সংযোজনের কাজ চলছে। এছাড়া বেশকিছু যন্ত্রপাতি শাহ্জালালে সংযোজন হয়েছে, কিছু সংযোজনের কাজ চলমান রয়েছে। বাকি যন্ত্রপাতি ঢাকায় এলে সংযোজন করা হবে। এর আগে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে ২০১৬ সালের মার্চে হযরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে শাহ্জালালের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে বৃটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইন। ইইউ’র শর্ত পূরণ না করলে কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে বিমানমন্ত্রী মেনন বলেন, এই মাল যখন যাবে তখন থার্ড কান্ট্রিতে ইডিএস ইন্সপেকশন হবে। বিজেএমইএ সূত্রে জানা গেছে, শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কার্গো ভিলেজ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ টন কার্গো বিভিন্ন দেশে যায়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই তৈরি পোশাক। বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ওষুধ ও পচনশীল বিভিন্ন পণ্য। ইইউ’র সিদ্ধান্তে বড় ধরনের আঘাত আসবে তৈরি পোশাক খাতে- এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।



http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=68796&cat=2/