৭ জুন ২০১৭, বুধবার, ১০:৩৫

নদী ভাঙনে পদ্মাপাড়ে হাহাকার

গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নে শুরু হয়েছে নদী ভাঙন। এতে করে পদ্মাপাড়ের হতদরিদ্র মানুষ প্রতিদিন ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে।

দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সংলগ্ন বাহিরচর সাত্তার মেম্বারপাড়া এলাকায় নদী ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি। গত এক সপ্তাহে এখানে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অন্তত ২০ বাড়ি। এ ছাড়া বাড়িঘর নিয়ে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে অনেক পরিবার। ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে আগামীতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। সরেজমিন দেখা যায়, দৌলতদিয়ার বাহিরচর সাত্তার মেম্বারপাড়ার যাতায়াতের রাস্তাটি সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে পাশে থাকা কয়েকশ' ফুট এলাকার বাড়িঘর নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। অনেকে এখনও সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া এই এলাকার নদী ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে রয়েছে ৪ নম্বর ফেরি ঘাটটিও।


৪ নম্বর ফেরিঘাট সংলগ্ন টং দোকানদার বারেক মৃধা জানান, ফেরিঘাটের কাছাকাছি হওয়ায় যখনই ফেরি ৪ নম্বর ঘাটে এসে ভিড়ে বা ছেড়ে যায়, তখন ফেরির পাখার ঘূর্ণনে তীব্র স্রোতের সৃষ্টি হয়। প্রচণ্ড গতিতে ওই স্রোত নদীতীরে আঘাত করায় এ এলকায় নদী ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তিনি ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, আপনারা শুধু ফেরি ঘাটের ভাঙন দেখেন আর তাই পত্রিকায় লেখেন। আমাদের নিঃস্ব হওয়ার দৃশ্য আপনাদের চোখে পড়ে না।

এ সময় স্কুলশিক্ষক মো. মোজাহার হোসেনসহ স্থানীয়রা জানান, সপ্তাহখানেক ধরে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ইতিমধ্যে নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সবুজ মৃধা, মজিবর মণ্ডল, শহীদ মণ্ডল, জালাল কাজি, কুদ্দুস মণ্ডল, ছিদ্দিক মণ্ডল, হারেজ মণ্ডল, চান্দু খান, দারোগ আলী সরদার, শাজাহান সরদার, মহন সরদার, নিফা সরদার, মোস্তফা সরদার, দারগ আলী শেখ, জুলহাস সরদার, মগবুল হোসেন, ছকরউদ্দিন বেপারীসহ অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।

এদিকে, উপজেলার দেবগ্রাম এলাকায় পদ্মা নদীর ভাঙনে বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলসহ জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ওই এলাকার কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, দুই মাস ধরে উপজেলার অন্তার মোড় থেকে দেবগ্রাম মধু সরদার বাড়ি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে প্রতিদিনই পদ্মার স্রোতে নদীর পাড় ভাঙছে। বৃষ্টি হলেই ভাঙনের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতর আলী সরদার জানান, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তার ইউনিয়নের বাসিন্দারা নদী ভাঙনের শিকার হয়। ইতিমধ্যে নদী ভাঙনে প্রায় পাঁচশ' বিঘা জমি ফসলসহ নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে এলাকার কয়েকশ' কৃষক মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।

ভাঙন বিষয়ে রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী এস এম নুরুন্নবী জানান, পদ্মার অব্যাহত ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থার লক্ষ্যে একটিৃ বড় প্রকল্প উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া আছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে। এ ছাড়া আপৎকালীন কাজ করার জন্য যে প্রশাসনিক অনুমোদন ও অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন হয়. তা এখনও পর্যন্ত পাইনি। পেলে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

http://bangla.samakal.net/2017/06/07/298823#sthash.aKM2U6dx.dpuf