৬ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ৭:৫২

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৭%-এর নিচে থাকবে বলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস

সরকার বলছে চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৭.২৪%, বিশ্বব্যাংক বলছে-৬.৮% ; সরকারি হিসাবে আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭.৪%, বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ৬.৪%

‘চলতি অর্থবছরে আমাদের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭.২ শতাংশ। খুশির বিষয় হলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাময়িক হিসাবে চলতি ২০১৬-২০১৭ জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৭.২৪ শতাংশ। যা আমাদের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি। ’ গত ১ জুন জাতীয় সংসদে আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ তথ্য জানিয়েছিলেন। কিন্তু তার বক্তৃতার চার দিনের মাথায় বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হলোÑ চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আগামী ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে এই প্রবৃদ্ধি আরো খানিকটা কমে দাঁড়াবে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থমন্ত্রী তার একই বাজেট বক্তৃতায় আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৪ শতাংশ হবে বলে জাতিকে জানিয়েছিলেন।
বিশ্ব অর্থনীতির সম্ভাবনা নিয়ে গতকার সোমবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারী এ সংস্থার হালনাগাদ প্রতিবেদন ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টসে’ চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির বিষয়ে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতি সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেও চলতি বছর বাংলাদেশ ভালো প্রবৃদ্ধি করেছে কৃষি ও সেবা খাত চাঙ্গা থাকার কারণে। সেই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও শিল্প উৎপাদনের পরিস্থিতিও ভালো। তেলের দামে স্থিতিশীলতা ও রফতানিতে সামান্য হলেও প্রবৃদ্ধি থাকায় বাংলাদেশের চলতি হিসাবের ঘাটতি কমেছে। উপযোগী আবহাওয়া ও তেলের দাম কমার কারণে মূল্যস্ফীতি ল্যমাত্রার নিচে রয়েছে। তবে রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দা থাকায় কিছুটা উদ্বেগ রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি এবং মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোর মন্দা ঝুঁকি তৈরি করেছে। আগামীতে প্রবাসী আয়ের প্রবাহে বড় ধরনের ধস দেখা দিলে বাংলাদেশের সামষ্টিক ভোগ ও বিনিয়োগেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশে নামতে পারে। তবে ২০১৮-২০২০ সময়ে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি চাঙ্গা হলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের আস্থা ও বিনিয়োগ বাড়বে বলে বিশ্বব্যাংকের ধারণা। অবশ্য বাংলাদেশের সঙ্গে নেপাল, পাকিস্তান ও ভারতে নির্বাচন সামনে রেখে নীতিগত েেত্র অনিশ্চয়তা ও নির্বাচনের ফল আর্থিক বাজারকে অস্থির করে তুলতে পারে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমবে। তারা বলছে, হাওরে সাম্প্রতিক ফসলহানি, রফতানি ও রেমিট্যান্সে মন্দা এবং বিনিয়োগ পরিস্থিতি বিবেচনা করলে প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশার চেয়ে কম হওয়ার কথা।
২০১৭ সালে সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৭ শতাংশ এবং দণি এশিয়ায় প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস দিয়েছে। ভারতের প্রবৃদ্ধির বিষয়ে বিশ্বব্যাংক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে দেশটির প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে সাত দশমিক ২ শতাংশ হবে। পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে হবে ৫ দশমিক ২ শতাংশ এবং আগামী অর্থবছরে হবে সাড়ে ৫ শতাংশ।

http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/226151