৬ জুন ২০১৭, মঙ্গলবার, ৭:৫২

গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বহাল

দ্বিতীয় দফায় গত ১ জুন থেকে গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রেখে আগামী ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সরকারি সিদ্ধান্ত বহাল থাকছে।
গতকাল সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সুব্রত চৌধুরী ও আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল আলম। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের পক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী জানান, প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যেহেতু সরকার একটা সিদ্ধান্ত দিয়েছে এ বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করতে চাই না।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ১ জুন থেকে দ্বিতীয় ধাপে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে গ্যাসের মূল্য বাড়িয়ে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণবিজ্ঞপ্তি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে তা জানতে চাওয়া হয়। হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ মে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি ৫ জুন (গতকাল সোমবার) নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। এ আদেশের পর সরকারের দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর বাধা কেটে যায়।
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গৃহস্থালি ও গাড়িতে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের আগামী ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে। আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য মাসিক বিল ৯০০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা হবে।
পাশাপাশি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম ১ মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে ৩৮ টাকা এবং ১ জুন থেকে ৪০ টাকা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার, শিল্প ও বাণিজ্যিক খাতেও গ্যাসের দাম দুই ধাপে ৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয় ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে।
এই গণবিজ্ঞপ্তিতে আইনের বিচ্যুতি হয়েছে অভিযোগ করে মূল্য বৃদ্ধির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন।
২০০৩ সালের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইনের ৩৪ ধারায় বলা হয়েছে, কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত ট্যারিফ কোনো অর্থবছরে একবারের বেশি পরিবর্তন করা যাবে না, যদি না জ্বালানি মূল্যের পরিবর্তনসহ অন্য কোনো পরিবর্তন ঘটে।
ক্যাবের আইনজীবী সাইফুল আলম আদেশের পর সাংবাদিকদের বলেন, সরকার ২৩ তারিখে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ১ মার্চ ও ১ জুন থেকে দুই দফায় দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। বিইআরসি আইন-২০০৪ অনুযায়ী, গণশুনানির মাধ্যমে বছরে সর্বোচ্চ একবার দাম বাড়ানোর বিধান রয়েছে। কিন্তু প্রথমবার বৃদ্ধির মাত্র ৯০ দিন পর আবার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা বিইআরসি আইনের পরিপন্থী। আদালত রিটে দ্বিতীয় দফায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ দিয়ে রুল জারি করেন।

http://www.dailysangram.com/post/286860-