৫ জুন ২০১৭, সোমবার, ৪:০২

কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না পাওয়ায় বিপাকে ১৫৩ কলেজ

একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ফেঁসে যাচ্ছে ১৫৩ কলেজ। চলতি বছর একাদশ ভর্তিতে এই ১৫৩ কলেজের মধ্যে ১০ কলেজে একজন শিক্ষার্থীও আবেদন করেনি। বাকি ১৪৩টিতে ১০ জনের কম শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। বাকি আরো ২ শতাধিক কলেজ ২০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ১লা জুলাই ভর্তির পর এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। ১০ জনের কম শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়া প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে কারণ দর্শানো হবে। এরপর আগামী বছর ভর্তি অনুমতি বাতিল করা হবে। এদিকে আজ একাদশ শ্রেণির ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের প্রথম মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, প্রথম দফায় আবেদনে ৮টি সাধারণ বোর্ডের অধীনে ১৭টি কলেজ, মাদরাসা বোর্ডের ৫৫টি মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের ৭১টি প্রতিষ্ঠানে মাত্র এক থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১০টি। একজন শিক্ষার্থীও ভর্তির জন্য আবেদন করেনি এসব প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- নবাবগঞ্জ দাখিল মাদরাসা, কঁচারিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খন্দকার আবু সাইদ আদর্শ সায়েন্স কলেজ, মুন্সীর তালুক গার্লস আলিম মাদরাসা, মাহমুদপুর রসুলপুর হামিদিয়া আলিম মাদরাসা, আদিয়াবাদ ইসলামিয়া হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ। এক থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- ঢাকা বোর্ডের অধীন শেরপুরের বালুরচর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনজন, বাংলাদেশ মসিউর-উল-হক মেমোরিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছয়জন, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে আটজন, বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে চারজন, শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছয়জন, বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছয়জন, বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঁচজন। রাজশাহী বোর্ডের শেরকলি আদর্শ কলেজে চারজন, শহীদ দুলাল পাইলট গার্লস হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আটজন, সরদার কাজীমুদ্দিন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম জেনারেল কলেজে তিনজন, পীরগঞ্জ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে আটজন, দুর্গাপুর আদর্শ ওমেনস কলেজে পাঁচজন, চন্দনকথা হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে চারজন, মাতরাই সায়েন্স অ্যান্ড টেকনিক্যাল কলেজে সাতজন, চোহনগাছা ওমেনস কলেজে আটজন। চট্টগ্রাম বোর্ডে লাউরাতি কলেজে ১০ জন। দিনাজপুর বোর্ডের ড. সাইফুর রহমান ওমেনস কলেজে ১০ জন।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক ড. আশফাকুস সালেহীন মানবজমিনকে বলেন, গত বছর ৭৯টি কলেজ বন্ধ করা হয়েছে। এবার যারা কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাবে না, তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ১লা জুলাই ভর্তি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই তালিকায় কতজন থাকবে- তা বলা যাচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থী কম ভর্তি হলেও কারও আসন কমিয়ে দেয়া, বন্ধ করে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত আমরা নেবো।
মাদরাসা বোর্ডের ফুলমালির চলা ফাজারগঞ্জ আলিম মাদরাসায় নয়জন, মৌলভীবাজার আরাজি আলিম মাদরাসায় পাঁচজন, বেলাচি মদিনাতুল উলুম গার্লস আলিম মাদরাসায় ছয়জন, বাসুদেবপুর ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় নয়জন, গনগড়া ইসলামিয়া বালিকা দাখিল মাদরাসায় তিনজন, সিয়ামপুর কাজী ইসলামিয়া ইসমাইল হোসেন আলিম মাদরাসায় নয়জন, হানখালি ফাজিল মাদরাসায় নয়জন, কদমতলী গার্লস দাখিল মাদরাসায় ১০ জন, সাকুরপাড়া আকবর আলী শাহ আলিম মাদরাসায় তিনজন, মীর কামরাইল আইডিয়াল দাখিল মাদরাসায় সাতজন, শম্ভুদিয়া আজিজিয়া আলিম মাদরাসায় ১০ জন, তাফাল বাড়িয়া হোসাইনিয়া আলিম মাদরাসায় নয়জন, চক দোমাদি আইইউ আলিম মাদরাসায় ১০ জন, সালুভিটা আলিম মাদরাসায় ছয়জন, আয়েশা বশিরুল দাখিল মাদরাসায় নয়জন, দুখনিয়া দাখিল মাদরাসায় ১০ জন, চরকাশিমপুর আলিম মাদরাসায় নয়জন, পাইখান আকবরিয়া ইউসুফিয়া ফাজিল মাদরাসায় দুজন, কারমুডাঙ্গা জোহালিয়া আলিম মাদরাসায় দুজন, কোনাবাড়ী ইসলামিয়া গার্লস দাখিল মাদরাসায় আটজন, রানীপুর গারিয়া বুনিয়া এফ আলিম দাখিল মাদরাসায় ১০ জন, ফতেনগর ওদুদিয়া ফাজিল মাদরাসায় নয়জন, কচুয়া আহমাদিয়া দাখিল মাদরাসায় দুজন, দুমরাই ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসায় একজন, লালিতনগর গার্লস আলিম মাদরাসায় একজন, শিশা শুভজান জুলেখা বালিকা দাখিল মাদরাসায় একজন, শ্রীপুর রামনগর আলিম মাদরাসায় দুজন, তারাফ কামাল আদর্শ আলিম মাদরাসায় দুজন, বাগড়পাড়া বালিকা দাখিল মাদরাসায় তিনজন, রানীনগর আল-আমিন দাখিল মাদরাসায় দুজন, রনচান্দি শামসুল ভি দাখিল মাদরাসায় একজন, বাউরবাগ হাওর দাখিল মাদরাসায় সাতজন, নাগরপুর ইউ বটতলা দাখিল মাদরাসায় দুজন, হজরত রাবেয়া বসরী মহিলা দাখিল মাদরাসায় ছয়জন, আল জামিয়াতুল সালাফিয়া দাখিল মাদরাসায় তিনজন, কুসমাইল ইসলামিয়া আলিম মাদরাসায় একজন, নিপাআন্টা ইউনিয়ন দারুস সালাম দাখিল মাদরাসায় চারজন, কড়পাড়া ইউনিয়ন দাখিল মাদরাসায় ছয়জন।
কারিগরি বোর্ডের অধীনে আরএনডি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে ১০ জন, গানগারা ইসলামিয়া বিএম মহিলা কলেজে একজন, দেওয়ানগঞ্জ সরকার বাজার হুজুরপাড়া গালর্স কলেজে দুজন, শাহজাজানপুর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে চারজন, দাওয়াতুল ইসলাম টেকনিক্যাল কলেজে নয়জন, দর্শনপাড়া শহীদ কামরুজ্জামান কলেজে ছয়জন, রয়েল মহিলা বিএম কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিনজন, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া কলেজে ১০ জন, চরখালিখান আদর্শ ডিগ্রি কলেজে ছয়জন, কদমতলা পূর্ব বাসাবো উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পাঁচজন, নিলকণ্ঠ ডিগ্রি কলেজে পাঁচজন, ডিআর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম গালর্স ইনস্টিটিউটে ছয়জন, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজে নয়জন, বেগম ফজিলাতুলনিছা মুজিব মহিলা কলেজে আটজন, বাংলাদেশ নারী শিক্ষা টেকনিক্যাল কলেজে ১০ জন, ঢাকা সিটি ওইমেন বাণিজ্যিক মহাবিদ্যালয়ে দুজন, আব্দুল গফুর ভূঁইয়া কলেজে নয়জন, শেখ ফজিলাতুন নিছা মুজিব গালর্স কলেজে সাতজন, সালাইপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে একজন, পলাশবাড়ী মহিলা সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় (বিএম) আটজন, অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে ছয়জন রামসুন্দর অগ্রগামী হাইস্কুলে ১০ জন, আরএসডিপি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে ১০ জন, উলানিয়া মুজাফফার খান ডিগ্রি কলেজে একজন, চাঁদপাশা মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে সাতজন, আলহাজ নুরমিয়া ডিগ্রি কলেজে ছয়জন, শাহিরা নাসির বিএম অ্যান্ড এগ্রিকালচার কলেজে ১০ জন, রয়মোনেন নিসা মহিলা কলেজে ছয়জন, গোবিন্দপুর মহিলা বিএম কলেজে আটজন, আলহাজ শাহ আলম কলেজে আটজন, সুজানগর উইমেন কলেজে দুজন, জিমাদানাগা গাজালিয়া মহিলা ফাজিল মাদরাসায় পাঁচজন, রতনা আমিন মহিলা কলেজে নয়জন, চুয়ারা আইডিয়াল কলেজে তিনজন, সারদাহ মহিলা কলেজে আটজন, গরিহার মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে ছয়জন, মুলাদী টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে ছয়জন, কচুয়া চৌরঙ্গী মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে ছয়জন, আল হাজাব উইমেন টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজে ৫ জন, রাজপাড়া আদর্শ মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে ৩ জন, নন্দনগাছী ডিগ্রি মহাবিদ্যালয়ে ৮ জন, বিতাগী পাইলট হাইস্কুলে ৪ জন, গুনবাটি ডিগ্রি কলেজে ১ জন, ছোট শরীফপুর কলেজে ৪ জন, শহীদ এম মুনছুর আলী ডিগ্রি কলেজে ৫ জন, বড় গুনদাইল বিএম গালর্স কলেজে ১ জন, বাটপাড়া গালর্স বিএম কলেজে ২ জন, কুতবানুন নেছা মেমোরিয়াল গালর্স টেকনিক্যাল কলেজে ৭ জন, লালনশাহ আইডিয়াল গালর্স টেকনিক্যাল কলেজে ১ জন, গলাচিপা উইমেন কলেজে ১০ জন, ডা. ডলি আকবর উইমেনস কলেজে ৭ জন, মহিলা কলেজে ৪ জন, আল ইমদাদ হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯ জন, মনসাপুর বিলাট্রিয়াল হাইস্কুলে ৩ জন, কুত্তাপাড়া বিএম গালর্স কলেজে ৬ জন, বাটালিহাট বিএম মহিলা কলেজে ৭ জন, সুখ টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজে ৭ জন, এম কে টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট ইনস্টিটিউটে ১০ জন, তাপসী রাবেয়া মহিলা কলেজে ২ জন, মনোসিতা মহিলা মহাবিদ্যালয়ে ১০ জন, হাজী তাহেরুদ্দিন ইসলামিয়া ডিগ্রি কলেজে ২ জন, কসবা মহিলা কলেজে ১০ জন, জাজিরা মোহাম্মদিয়া আলিম মাদ্রাসায় ২ জন, মিয়া বাজার কলেজে ৮ জন, হাজিয়া রহমানি ফাজিল মাদরাসায় ৮ জন, খাদুর খাইল জলিল আমবিয়া কলেজে ৯ জন, আয়মা জামালপুর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজম্যান্ট কলেজে ৮ জন, কল্যাণপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১০ জন, ফরিদিয়া আলমগীর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে সাতজন, ঢাকা মহানগর মহিলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজে নয়জন, চন্দনবাইশা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড মহিলা বিএম কলেজে তিনজন।
ঢাকা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা জানান, ১০ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দুই শতাধিক। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব কলেজ ও মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। গত তিন বছর ধরে অনলাইনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু করায় এসব ভূঁইফোড় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করছেন না। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে না পেরে এসব প্রতিষ্ঠান এক সময় শিক্ষার্থী সংকটে বন্ধ হয়ে যাবে।
গত বছর কম আবেদন পড়ায় ২০৪টি কলেজ-মাদরাসাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় প্রায় দুশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ৭৯টি কলেজ রয়েছে।

http://www.mzamin.com/article.php?mzamin=68503&cat=3/